বরিশালে হচ্ছে পূর্ণাঙ্গ ক্যানসার হাসপাতাল

বালু ফেলে ভরাট করে জমি প্রস্তুত হয়েছে। মাটি পরীক্ষা করে পাইল বসানোর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

বরিশাল জেলার মানচিত্র

বরিশালে দুরারোগ্য ক্যানসারের যথাযথ চিকিৎসা না থাকায় গরিব–দুস্থ রোগী বিনা চিকিৎসায় মারা যান। অনেক রোগী ঢাকায় গিয়ে চিকিৎসা করাতে গিয়ে আর্থিকভাবে নিঃস্ব হচ্ছেন। এ জন্য বরিশালে একটি পূর্ণাঙ্গ ক্যানসার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার দাবি দীর্ঘদিনের। সেই দাবি পূরণে কাজ শুরু করেছে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত অধিদপ্তর।

গৃহায়ণ ও গণপূর্ত বিভাগ বলছে, এরই মধ্যে ১৭ তলা হাসপাতাল ভবন নির্মাণের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। দরপত্র প্রক্রিয়া শেষ করে ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে। শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভেতরেই এই হাসপাতাল নির্মাণ হবে। এ জন্য একটি পরিত্যক্ত ডোবা বালু ফেলে ভরাট করা হয়েছে। মাটি পরীক্ষা করে পাইল বসানোর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। এখন অপেক্ষা শুধু প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে নির্মাণকাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের। হাসপাতালটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন চলতি মাসের মধ্যেই হতে পারে।

স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র জানায়, শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একটি ক্যানসার ইউনিট রয়েছে। তবে সেখানে নেই পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি ও জনবল। কেবল রেডিওথেরাপি–নির্ভর হয়ে আছে ক্যানসার ইউনিটটি। ফলে এ অঞ্চলের মানুষকে ক্যানসারের চিকিৎসার জন্য ছুটতে হয় রাজধানী ঢাকায়। এতে ব্যয় যেমন বাড়ছে, তেমনি ভোগান্তিও পোহাতে হচ্ছে পদে পদে।

এই হাসপাতালের ক্যানসার ইউনিট থেকে পাওয়া তথ্যমতে, ২০০২ সালে ক্যানসার রোগীদের থেরাপি দেওয়ার জন্য ১০ কোটি টাকা দামের একটি কোভাল্ট-৬০ মেশিন স্থাপন করা হয়। ১৩ বছরের মাথায় অর্থাৎ ২০১৫ সালের ২৯ নভেম্বর সেটি অচল হয়ে পড়ে। এটি সচল থাকাবস্থায় প্রতিদিন গড়ে ৩০০ রোগীর থেরাপি দেওয়া হতো। এ ছাড়া নারীদের জরায়ু ক্যানসার চিকিৎসার জন্য স্থাপিত যন্ত্রটিও অকেজো হয়ে পড়ে আছে।

অন্যদিকে রেডিওলজি মেশিন নেই, রেডিও টেলিথেরাপি নষ্ট, ব্রাকিথেরাপি যন্ত্রও অচল পড়ে আছে। তিন বছর আগে ক্যানসার রোগীদের জন্য কোটি টাকা ব্যয়ে হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় স্থাপন করা হয়েছিল ব্রাকিথেরাপি মেশিনটি। কিন্তু ঠিকাদার মেশিনটি সচল অবস্থায় কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে না দেওয়ায় সেটি ওই অবস্থাতেই পড়ে আছে।

গৃহায়ণ ও গণপূর্ত বিভাগের (বরিশাল মেডিকেল কলেজ) উপসহকারী প্রকৌশলী কামাল হোসেন হাওলাদার বলেন, শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির স্টাফ কোয়ার্টারের পাশে পরিত্যক্ত ডোবা ভরাট করে নির্মাণ করা হচ্ছে ১৭ তলাবিশিষ্ট ক্যানসার হাসপাতাল। এতে ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৯৪ কোটি টাকা। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে প্রাথমিক কিছু কাজ শুরু করেছে। হাসপাতাল নির্মাণের জন্য নির্ধারিত ডোবাটি বালু ফেলে ভরাটের পর তৃতীয় দফায় মাটি পরীক্ষার কাজ চলছে। পাইল বসানোর পর আরও এক দফা মাটি পরীক্ষা করা হবে।

গৃহায়ণ ও গণপূর্ত বিভাগের বরিশাল জেলা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী জেরাল্ড অলিভার গুডা বলেন, আগস্ট মাসের শেষ দিকে প্রধানমন্ত্রীর এই হাসপাতাল ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধনের কথা ছিল। কিন্তু করোনার কারণে তা হয়নি। আশা করা যাচ্ছে চলতি মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী এই হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করবেন।