বরিশাল বিভাগের ২০ লাখ লোককে নিরাপদে সরিয়ে আনার পরিকল্পনা

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে ভোলার আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। দক্ষিণাঞ্চলে বৃষ্টি হচ্ছে, বাতাস বইছে। সোমবার বিকেলে ভোলা সদর উপজেলার নাছিরমাঝি মেঘনা তীর থেকে তোলানেয়ামতউল্যাহ

ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ মোকাবিলায় বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোতে ৪ হাজার ৯৯৫টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হচ্ছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ঝুঁকিপ্রবণ এলাকার ২০ লাখ লোককে যাতে তাৎক্ষণিক নিরাপদে সরিয়ে আনা যায়, সে লক্ষ্যে স্বেচ্ছাসেবক, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে এসব আশ্রয়কেন্দ্রে যাতে স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘিত না হয়, সেদিকেও খেয়াল রেখে বিশেষ ব্যবস্থাপনার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার সাইফুল হাসান আজ সোমবার দুপুরে বিভাগীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় বিভাগের ছয় জেলার জেলা প্রশাসকদের এসব নির্দেশনা দেন। ভার্চ্যুয়াল এই সভায় জেলা প্রশাসকেরা ছাড়াও বরিশাল বিভাগীয় পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মো. শফিকুল ইসলাম যোগ দেন। পাশাপাশি অন্যান্য বিভাগের কর্মকর্তারাও এতে ছিলেন।

ঘূর্ণিঝড় ইয়াস মোকাবিলায় বিভাগীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা। সোমবার দুপুরে সভায় বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার সাইফুল হাসান ও ডিআইজি মো. শফিকুল ইসলাম ভার্চুয়্যাল মাধ্যমে এই সভায় অংশ নেন
প্রথম আলো

সভায় বিভাগীয় কমিশনার সাইফুল হাসান বলেন, ‘দক্ষিণ উপকূল দুর্যোগপ্রবণ হওয়ায় বিশেষ করে বিভাগের বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা—এই তিন জেলায় প্রধানমন্ত্রী অনেক বহুতল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ করেছেন। আমাদের দুর্যোগ মোকাবিলায় অভিজ্ঞতা রয়েছে। আশা করি, এবার ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানলে আমরা সম্মিলিতভাবে তা মোকাবিলা করতে সক্ষম হব। এ জন্য প্রতিটি জেলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আমরা ঝুঁকিপ্রবণ এলাকাগুলো থেকে যাতে তাৎক্ষণিক ২০ লাখ মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে আনতে পারি, সে জন্য প্রায় পাঁচ হাজার আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হচ্ছে। সেখানে স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার, সুপেয় পানি, বিদ্যুৎ অথবা বিকল্প ব্যবস্থায় আলোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’

বিভাগীয় কমিশনার বলেন, ‘যেহেতু এখন আমরা করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলা করছি, সে জন্য স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনের জন্য আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, জীবাণুনাশক রাখা, সাবানসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী রাখার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দুর্যোগের সময় জরুরি মুহূর্তে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা দুরূহ হওয়ায় আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে অন্তত যাতে প্রতিটি পরিবারের সদস্যরা এক জায়গায় থাকতে পারেন, সেটি নিশ্চিত করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

এদিকে সকালে থেকে দুপুর অবধি বরিশালসহ দক্ষিণ উপকূলের সর্বত্র কখনো রোদ, কখনো মেঘ এমন অবস্থা চলছিল। কিন্তু বেলা তিনটার পর আকাশ মেঘলা হয়ে যায়। যদিও তাপমাত্রা কমেনি। বেলা তিনটায় বরিশালের তাপমাত্রা ছিল ৩৬ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়া বিভাগের ভাষ্যমতে এটা মাঝারি তাপপ্রবাহ। আর বাতাসের গতিবেগ ছিল ৫ থেকে ১০ নটিক্যাল মাইলের মধ্যে।

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে ভোলার আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। দক্ষিণাঞ্চলে বৃষ্টি হচ্ছে, বাতাস বইছে। সোমবার বিকেলে ভোলা সদর উপজেলার নাছিরমাঝি মেঘনা তীর থেকে তোলা
নেয়ামতউল্যাহ

বঙ্গোপসাগরের সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি আরও শক্তি সঞ্চয় করে সোমবার সকালে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়। এ ঘূর্ণিঝড়ের নাম ‘ইয়াস’। সোমবার সকালে এটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেওয়ার পর ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ থেকে সর্বোচ্চ ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বেড়েছে। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে ২৬ মে ভোর নাগাদ ভারতের উত্তর ওডিশা, পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলাদেশের খুলনা হয়ে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর পৌঁছাতে পারে।

এটি চট্টগ্রাম থেকে ৬৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার থেকে ৬০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা থেকে ৬৫০ কিলোমিটার এবং পায়রা বন্দর থেকে ৬০৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছে। আবহাওয়া বিভাগ এ জন্য ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত জারি করেছে।

বরিশাল আবহাওয়া বিভাগের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক মো. মাসুদ রানা বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগামীকাল তাপমাত্রার দাপট কমতে শুরু করতে পারে। একই সঙ্গে আগামী ৭২ ঘণ্টায় বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টিপাত বাড়তে পারে। কোথাও কোথাও ভারী বর্ষণ হতে পারে। যদিও ঘূর্ণিঝড় ইয়াস পশ্চিমবঙ্গে আঘাত হানবে বলে পর্যবেক্ষণে মনে হচ্ছে। তবে ঝড়ের গতিপথ যেকোনো সময় পরিবর্তন হতে পারে। সে জন্য আমাদের উচিত হালনাগাদ আবহাওয়ার তথ্য সবার মধ্যে পৌঁছে দেওয়া।’