পদ্মায় আবার ভাঙন
বসতঘর সরিয়ে নিচ্ছে মানুষ
রাজবাড়ী সদর উপজেলার ধুঞ্চি গ্রামে গতকাল মঙ্গলবার সকালে ভাঙন শুরু হয়। এখন পর্যন্ত ১০টি পরিবার তাদের বসতঘর সরিয়ে নিয়েছে।
রাজবাড়ী সদর উপজেলার ধুঞ্চি গ্রামের গোদার বাজার এলাকায় শহর রক্ষা বেড়িবাঁধে আবারও ভাঙন দেখা দিয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে শুরু হওয়া ভাঙনে ১০০ মিটার এলাকা নদীগর্ভে চলে গেছে। ভাঙনের আতঙ্কে বসতঘর সরিয়ে নিচ্ছে মানুষ।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, পদ্মা নদীর ভাঙন থেকে জেলা শহর তথা জেলাকে রক্ষার জন্য আশির দশকের শেষ দিকে বাঁধ নির্মাণ করা হয়। পদ্মার নদীর তীর স্থায়ীভাবে সংরক্ষণের জন্য আবার ৩৭৬ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় সাড়ে চার কিলোমিটার এলাকায় পদ্মা নদীর তীর প্রতিরক্ষামূলক কাজের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬৭ কোটি টাকা। ওই কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালে। এ ছাড়া একই এলাকায় ড্রেজিং করা হবে। ড্রেজিংয়ে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩৫ কোটি টাকা। কাজের মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স খুলনা শিপইয়ার্ড লিমিটেড। কাজ বাস্তবায়ন করছে মেসার্স দুলাল ব্রাদার্স লিমিটেড (ডিবিএল)। এই প্রকল্পের আওতায় গোদার বাজার এলাকায় দেড় কিলোমিটার সংস্কারকাজ ২০১৯ সালে শুরু হয়। ব্যয় ধরা হয় ৭২ কোটি টাকা। পাঁচটি গুচ্ছে কাজ সম্পন্ন হয় চলতি বছরের ৩১ মে। ২৭ জুলাই থেকে এই এলাকায় ভাঙন শুরু হয়। এরপর থেকে বিচ্ছিন্নভাবে পদ্মার নদীর ব্লক দিয়ে সংরক্ষিত এলাকায় ভাঙন দেখা দিচ্ছে। ভাঙন শুরু হলে সেখানে বালুর বস্তা ফেলা হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, গোদার বাজার ঘাট থেকে পশ্চিম দিকে ১০০ মিটার ভেঙে গেছে। স্থানীয় ব্যক্তিরা বাড়িঘর সরিয়ে নিচ্ছে। বাড়িতে থাকা বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। ঘরের মেঝের ইট তুলে নেওয়া হচ্ছে। পাউবো ভাঙনকবলিত এলাকায় বস্তা ফেলা হচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রাজবাড়ীর পাঁচটি উপজেলার মধ্যে চারটি পদ্মা নদীর পাড়ে অবস্থিত। উপজেলাগুলো হলো রাজবাড়ী, গোয়ালন্দ, পাংশা ও কালুখালী উপজেলা। এসব উপজেলার মধ্যে রাজবাড়ী সদর ও গোয়ালন্দ উপজেলায় ব্যাপক ভাঙন দেখা দেয়। প্রতিবছর সাধারণত পানি বাড়ার সময় ভাঙন দেখা দেয়। আবার পানি কমতে শুরু করলেও ভাঙন শুরু হয়। ভাঙনে ইতিমধ্যে কয়েকটি গ্রাম বিলীন হয়ে গেছে।
ইজিবাইকচালক আবদুর রশিদ বলেন, ‘আমার বাবা-দাদারা এখানে বসবাস করতেন। আমিও জন্ম থেকে এখানে বসবাস করছি। গতকাল সকাল থেকে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন একেবারে ঘরের কাছে চলে এসেছে। এ কারণে কয়েকটি ঘর ভেঙে ফেলা হয়েছে। ইটও তুলে নিয়েছি। রাস্তার ওপর রেখে দিয়েছি। এখন কোথায় যাব, সেই চিন্তা করছি। কারণ, আমি সীমিত আয়ের মানুষ। অন্য কোনো স্থানে আমার কোনো জমিজমা নেই। ঘরবাড়ি তুলে বসবাস করার মতো অবস্থা নেই। তবে গতকাল থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে বস্তা ফেলা হলে ভাঙন হয়তো রোধ করা সম্ভব হতো।’
ধুঞ্চি গ্রামের আরেক বাসিন্দা তোফাজ্জেল হোসেন বলেন, এখানে ১০টি বাড়ি ভাঙা হয়েছে। পাশেই রয়েছে মসজিদ, সরকারি স্কুল, দোকানপাট। আতঙ্কে সবাই বাড়িঘর সরিয়ে নিচ্ছে। রাতে কেউ ঘুমাতে পারেনি। ডাকাতের ভয়ের সঙ্গে নদীভাঙনের ভয়। তবে দ্রুত পদক্ষেপ নিলে এসব বাড়িঘর রক্ষা পেত। এতগুলো পরিবারকে অসহায়ের মতো থাকতে হতো না। অনেকেই সবকিছু হারিয়ে কান্নাকাটি করছে।
শাহীন দেওয়ান বলেন, ‘আমি এসেছি পাকা বাড়ি ভাঙতে। গাছপালা কাটা হচ্ছে। যদি ভাঙন কমে যায়, তাহলে আর বাড়ি ভাঙা হবে না। কারণ, নদীতে বাড়ি চলে যাওয়ার চেয়ে ভাঙলে কিছু হলেও উপকার হয়।’
এ বিষয়ে পাউবো রাজবাড়ী কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবদুল আহাদ বলেন, নদীর গতিপ্রকৃতি পরিবর্তন হয়েছে। নদীতে চর পড়ায় এপারের তীরবর্তী এলাকা দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এখানে গভীরতাও বেড়ে গেছে। ভাঙন রোধের জন্য বালুর বস্তা ফেলা হচ্ছে।