বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌপথে যাত্রীদের ভিড়
মাদারীপুরের বাংলাবাজার ও মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া নৌপথে ঢাকামুখী যাত্রীরা লঞ্চ ও ফেরিতে পদ্মা পাড়ি দিচ্ছে। আজ রোববার সকালে বাংলাবাজার ঘাটে ঢাকামুখী যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় থাকলেও সকাল ১০টার পরে লঞ্চ ও ফেরিতে চাপ কিছুটা কমে।
এদিকে তীব্র স্রোত ও যাত্রীদের অতিরিক্ত চাপ থাকায় ব্যাহত হচ্ছে ফেরি চলাচল। এ কারণে বাংলাবাজার ঘাটে পারের অপেক্ষায় চার শতাধিক যানবাহন আটকা পড়েছে। শিমুলিয়া ঘাটেও আটকা পড়েছে দুই শতাধিক যানবাহন।
বিআইডব্লিউটিসি ও বিআইডব্লিউটিএর বাংলাবাজার ঘাট সূত্র জানায়, আজ থেকে শিল্পপ্রতিষ্ঠান খুলছে—এমন খবরে গতকাল শনিবার সকাল থেকে এই নৌপথে ঢাকামুখী যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় শুরু হয়। যাত্রীদের ভিড় সামলাতে যানবাহন ছাড়াই যাত্রী নিয়ে পারাপার হয় বেশ কয়েকটি ফেরি। সন্ধ্যার পরও বাংলাবাজার ফেরিঘাটে হাজারো যাত্রী পারাপারের অপেক্ষায় আটকা পড়ে। যাত্রীদের পারাপারের সুবিধার্থে সরকারি নির্দেশনায় চালু করা হয় লঞ্চ। আজ রোববার সকাল ছয়টা থেকে এই নৌপথে ৮৭টি লঞ্চ চলাচল শুরু হওয়ায় যাত্রীদের চাপ কিছুটা কমতে থাকে।
খুলনা থেকে আসা যাত্রী মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘সেই গাড়ি তো ছাড়া হলো। শনিবার বাস-লঞ্চ চললে আমাগো আর দুর্ভোগে পড়তে হইতো না। আমাগো লগের অনেকেই অনেক কষ্ট করে ঢাকায় ঢুকছে। সরকারের হঠাৎ হঠাৎ সিদ্ধান্ত আমাদের কষ্ট ছাড়া কিছুই না।’
বরিশাল থেকে আসা পোশাকশ্রমিক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা এক এলাকার ২০ জন গাজীপুরে একটি কারখানায় কাজ করি। শনিবারই ট্রাকে ১৫ জন চলে গেছে। আমরা ৫ জন বাসে করে একসঙ্গে ভোররাতে রওনা হইছি। সকাল আটটায় ঘাটে আইসা পৌঁছাই। লঞ্চে ভিড় ঠেলে উঠতে পারছি। ১২টার মধ্যে কারখানায় যাইতে হইবে।’
জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিএ বাংলাবাজার লঞ্চঘাটের ট্রাফিক পরিদর্শক আক্তার হোসেন মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সকাল ছয়টা থেকে এই নৌপথে আমরা লঞ্চ চালু করি। ভোরে যাত্রীদের কিছুটা চাপ থাকলেও ১০টার পরে চাপ স্বাভাবিক আছে। আমরা প্রতিটি যাত্রীকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে লঞ্চে ওঠাচ্ছি। যাত্রীপ্রতি ৫৫ টাকা ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। মাস্ক ছাড়া কাউকে লঞ্চে উঠতে দেওয়া হচ্ছে না। সরকারি নির্দেশনায় আজ দুপুর ১২টা পর্যন্ত লঞ্চ চলবে। এরপরে আর কোনো লঞ্চ ছাড়া হবে না।’
বেলা ১১টার দিকে বাংলাবাজার ফেরিঘাটে ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (টিআই) জামালউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল রাত সাড়ে ১০টার পরে ঢাকামুখী যাত্রীদের চাপ একটু কমে। সকাল থেকে স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি পরিমাণে যাত্রী পারাপার হচ্ছে। তবে লঞ্চ চলায় যাত্রীদের ঘাটে অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, ‘গতকাল যাত্রীর অসম্ভব চাপ থাকায় আমরা কোনো গাড়ি ফেরিতে লোড দিতে পারিনি। সেই গাড়িগুলোই ঘাটে এখন আটকা পড়েছে। সব মিলিয়ে চার শতাধিক গাড়ি এখন পারাপারের অপেক্ষায় আছে।’
বাংলাবাজার ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) সালাউদ্দিন আহমেদ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সকাল থেকে আমাদের ১০টি ফেরি যাত্রী ও যানবাহন নিয়ে চলাচল করছে। যাত্রীদের ভিড় কিছুটা কম থাকায় আমরা গাড়ি লোড দিতে পারছি। আটকা পড়া গাড়িগুলো পর্যায়ক্রমে পারাপার করা হচ্ছে।’
আমাদের মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, সকাল থেকে ঢাকামুখী যাত্রীদের ভিড় ছিল। যাত্রীদের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো আগ্রহ নেই। অর্ধেক যাত্রী নিয়ে লঞ্চ চলাচলের কথা থাকলেও যাত্রী ভর্তি করে পাড়ি দিচ্ছে। যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ আছে।
আজ সকালে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাদারীপুরের মাঝিকান্দি ঘাট থেকে শিমুলিয়া ঘাটে লঞ্চ আসছে। যাত্রীও ছিল অনেক। শাকিল সরকার নামের এক যাত্রী বলেন, ‘গতকাল ফেরিতে খুব চাপ ছিল। ভেবেছিলাম আজ লঞ্চ চালু হলে চাপ কমবে। আজও চাপ বেশি। এদিকে কর্মস্থলে যোগ দিতে ফোনে চাপ দিচ্ছে। তাই করোনাকে উপেক্ষা করে ঢাকায় যাচ্ছি।’
শিমুলিয়া ঘাটের নদীবন্দর (বিআইডব্লিউটিএ) কর্মকর্তা মো. সোলাইমান বলেন, এ মুহূর্তে নৌপথে ৮৬টি লঞ্চ চলছে। ঢাকাগামী যাত্রীর চাপ রয়েছে। এই পাশ থেকে বাংলাবাজারের দিকে তেমন কোনো যাত্রী চাপ নেই।
মাওয়া নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিদর্শক সিরাজুল কবির প্রথম আলোকে জানান, যাত্রীদের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে উদাসীনতা আছে। ঘাটে সবাইকে মাস্ক পরতে বাধ্য করা হচ্ছে।
বিআইডব্লিউটিসির শিমুলিয়া ঘাটের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) শাফায়াত আহম্মেদ বেলা ১১টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, উভয় নৌপথে বর্তমানে নয়টি ফেরি চলছে। লঞ্চ চলায় করায় ফেরিতে যাত্রীর চাপ কমেছে। শিমুলিয়া ঘাটে আড়াই শতাধিক যানবাহন পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে। তবে বাংলাবাজার ঘাটে এ চাপ অনেক বেশি।