বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌপথে লঞ্চ চালু, ফেরিতে ভিড় কমছে

ঘাটে যানবাহনের কিছুটা চাপ থাকলেও যাত্রীদের ভিড় নেই। সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় মাদারীপুরের বাংলাবাজার ফেরিঘাটে
অজয় কুন্ডু

দেড় মাসের বেশি সময় বন্ধ থাকার পর মাদারীপুরের বাংলাবাজার ও মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া নৌপথে শুরু হয়েছে লঞ্চ চলাচল। আজ সোমবার ভোর থেকে উভয় ঘাট থেকে ৭৫টি লঞ্চ সীমিতসংখ্যক যাত্রী নিয়ে চলাচল করছে। ফলে যাত্রীদের চাপ কমেছে ফেরিতে।

এর আগে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে গত ৪ এপ্রিল বিকেল থেকে এ নৌপথে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ। এরপর থেকে যাত্রী পারাপারের জন্য শুধু ফেরি চলাচল স্বাভাবিক ছিল এ নৌপথে। ফেরি ছাড়া বিকল্প নৌযান না থাকায় এ নৌপথে আসা যাত্রীদের চরম ভোগান্তি মাথায় নিয়ে ঈদে বাড়ি ফিরতে হয়েছে। একই সঙ্গে ঈদের পর ঢাকায় ফিরতে হচ্ছে। এখন লঞ্চ চলাচল শুরু হওয়ায় স্বস্তি দেখা গেছে যাত্রীদের মধ্যে।

বিআইডব্লিউটিএ ঘাট সূত্র জানায়, এ নৌপথে ৮৭টি লঞ্চ ও ১৮টি ফেরি রয়েছে। বর্তমানে ১৮টি ফেরির সব কটি চালু রয়েছে। ১২টি লঞ্চের কাগজপত্রে ত্রুটি থাকায় আজ সকাল থেকে ৭৫টি লঞ্চকে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলাচল করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। লঞ্চে ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। এ কারণে আগের লঞ্চভাড়া ৩৫ টাকার পরিবর্তে যাত্রীদের এখন ৫৫ টাকা গুনতে হচ্ছে।

গত ৪ এপ্রিল বিকেল থেকে কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী লঞ্চ ও স্পিডবোট চলাচল বন্ধ ছিল এ নৌপথে। তবে নিয়ম ভেঙে কিছু স্পিডবোট যাত্রী পারাপার করেছে। গত ৩ মে স্পিডবোট দুর্ঘটনায় ২৬ জনের প্রাণহানি হয়। এরপর থেকে এ নৌপথে স্পিডবোট ও ট্রলার চলাচল বন্ধ করতে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে যায়। তখন থেকে পুরোপুরি স্পিডবোট ও ট্রলার চলাচল বন্ধ থাকে এ নৌপথে। বিকল্প নৌযান না থাকায় যাত্রীদের শুধু ফেরিতে পদ্মা পার হতে হয়েছে।

আজ সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল থেকে লঞ্চ চলাচল শুরু হওয়ায় যাত্রীরা ফেরির পাশাপাশি লঞ্চেও পদ্মা পারাপার হচ্ছেন। ফলে ফেরিতে গতকালের তুলনায় অনেক কম যাত্রী দেখা গেছে। এখন আর ফেরিতে যাত্রীদের গাদাগাদি নেই। ঢাকাগামী বেশির ভাগ যাত্রী লঞ্চে পার হচ্ছেন। তবে লঞ্চে অর্ধেক যাত্রী পারাপারের নির্দেশনা থাকলেও তার কার্যকারিতা তেমন দেখা যায়নি। লঞ্চে আগের মতোই যাত্রী বহন করা হচ্ছে। লঞ্চে যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বলা হলেও বেশির ভাগ যাত্রী স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছেন না। অনেকের মুখে মাস্ক নেই।

গোপালগঞ্জ থেকে আসা ঢাকাগামী যাত্রী সরোয়ার হোসেন বলেন, ‘ঘাটে আসামাত্রই লঞ্চে পদ্মা পার হই। ভাড়া আগের তুলনায় অনেক বেশি নিল। কিন্তু যাত্রী তো অর্ধেক নিচ্ছে না লঞ্চে। আগের মতোই যাত্রী। লঞ্চে ভিড়, ফেরিতেও ভিড়। তবে গাদাগাদি আর ঠেলাঠেলি নেই। এটাই স্বস্তি।’

খুলনা থেকে আসা মুন্সিগঞ্জগামী যাত্রী শাহাদাত সরদার বলেন, ‘এত গরমে রোদের মধ্যে ঘাটে বসে থাকা খুবই কষ্ট। ঘাটে আসামাত্রই যে পদ্মা পাড়ি দিতে পারছি, এটাই শান্তি।’

মাদারীপুর থেকে আসা ইমরান খান নামের আরেক যাত্রী বলেন, ‘গাড়ি থেকে নেমে আগে ফেরিঘাটে যাই। সেখানে ফেরি না পাওয়ায় সরাসরি লঞ্চঘাটে যাই। একটু ভিড় থাকলেও লঞ্চে বসে পদ্মা পাড়ি দিতে পারছি। তবে ৩৫ টাকার ভাড়া ৫৫ টাকা। এটা অনেক বেশি।’

বিআইডব্লিউটিএ বাংলাবাজার লঞ্চঘাটের ট্রাফিক পরিদর্শক আক্তার হোসেন বলেন, ‘ধারণক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী নিয়ে লঞ্চ চলাচল শুরু হয়েছে। লঞ্চঘাটে আমাদের লোকজনের উপস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মোতাবেক যাত্রী ওঠানো–নামানো হচ্ছে। দীর্ঘদিন পর লঞ্চ চালু হওয়ায় লঞ্চমালিক–শ্রমিকদের মাঝেও স্বস্তি দেখা দিয়েছে।’

জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিসি বাংলাবাজার ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) মো. সালাউদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, সকাল থেকে লঞ্চ চলাচল শুরু হওয়ায় ঘাটে যাত্রীদের ভিড় কমেছে। আগের মতো ভিড় নেই। যানবাহনের চাপও তেমন নেই। ঘাটে আসামাত্রই যানবাহন ও যাত্রীরা ফেরিতে উঠতে পারছে।