বাইকে চড়ে ভিন্ন পেশায় রত্না

যশোর শহরে ভাড়া বাসায় থাকেন রত্না বেগম। অসুস্থ বাবা দেড় মাস আগে মারা গেছেন। মা ও এইচএসসিতে পড়ুয়া ছেলেকে নিয়ে তাঁর সংসার।

প্রতিদিন মোটরসাইকেলে করে ৩০ কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দিয়ে কালীগঞ্জ বাজারে আসেন রত্না বেগম। এখান থেকে গরু-ছাগলের ভুঁড়ি কিনে যশোর শহরে ফিরে যান। গত শনিবার কালীগঞ্জ শহরে
ছবি: প্রথম আলো

আর্থিক অনটনে সংসারটা কোনোভাবেই চলছিল না। বৃদ্ধ মা এবং একমাত্র ছেলেকে নিয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটছিল রত্না বেগমের। সারাক্ষণ ভাবতেন নিজে কিছু একটা করবেন। কিন্তু অর্থের অভাবে পেরে উঠছিলেন না। এই অবস্থায় রত্না বেগম বেছে নেন কঠিন এক পেশা। তিনি প্রতিদিন ভোরে ৩০ কিলোমিটার দূর থেকে গরু-ছাগলের ভুঁড়ি ও মাথা কিনে আনেন। এলাকায় এনে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সেগুলো বিক্রি শুরু করেন। এভাবেই তাঁর সংসারে সচ্ছলতা আসে।

রত্না বেগমের এই ব্যবসা শুরু করেন ২০১০ সালে। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ বাজার থেকে তিনি গরু-ছাগলের ভুঁড়ি ও মাথা কিনে যান। প্রথমে তিনি বাসে যাতায়াত করতেন। এতে সময় বেশি লাগত। ২০১৪ সাল থেকে তিনি মোটরসাইকেল চালিয়ে যাতায়াত শুরু করেন। এখন তাঁর একটি মাংসের দোকান রয়েছে।

যশোর শহরের বিমানবন্দর এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন রত্না বেগম। স্বামীর সঙ্গে তাঁর ছাড়াছাড়ি হয়েছে। অসুস্থ বাবা দেড় মাস আগে মারা গেছেন। মা ও এইচএসসিতে পড়ুয়া ছেলেকে নিয়ে তাঁর সংসার।

ভিন্ন পেশায় আসার বিষয়ে রত্না বেগম বলেন, ছেলে হওয়ার এক বছর পরই স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। তখন বাবার বাড়িতে ফিরে আসেন। একপর্যায়ে বাবা সিদ্দিক সরদার অসুস্থ হয়ে পড়েন। ছয় বোনের মধ্যে তিনি বড়। অন্য বোনদের বিয়ে হয়ে গেছে। সংসারের বোঝা তাঁর কাঁধে এসে পড়ে। অসুস্থ বাবা, বৃদ্ধ মা এবং ছেলেকে নিয়ে যশোর শহরে ভাড়া বাসায় কষ্টের জীবন শুরু হয়। ২০১০ সালের দিকে তিনি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ শহরে যান। সেখানে একটি মাংসের দোকানে দেখতে পান, অনেকে গরু-ছাগলের মাথা ও ভুঁড়ি কিনছেন। তখন দোকানি আসাদুল ইসলামের সঙ্গে তাঁর কথা হয়। আসাদুল ইসলামের সহযোগিতায় গরু-ছাগলের মাথা ও ভুঁড়ি বিক্রি শুরু করেন তিনি। এগুলো যশোর নিয়ে বাড়িতে পরিষ্কার করে পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে ঘুরে বিক্রি করতেন। এতে তাঁর ভালোই আয় হতে থাকে। সংসারের চাকাও সচল হয়। আস্তে আস্তে ব্যবসার প্রসার বাড়ে।

প্রতিদিন সকালে বাসে করে ৩০ কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দিয়ে কালীগঞ্জে আসতেন রত্না। মালামাল কিনে যশোর শহরে ফিরে সেগুলো বিক্রি করতেন। সব সময় গাড়ি পাওয়া যেত না। অনেক সময় পরিবহন ধর্মঘট হতো। এতে সমস্যা হতো। ২০১৪ সালের দিকে তিনি একটি মোটরসাইকেল কেনেন। আগে থেকেই বাইসাইকেল চালাতে পারতেন। মোটরসাইকেল চালানো শিখতে খুব বেশি সমস্যা হয়নি। বর্তমানে তিনি মোটরসাইকেলেই যাতায়াত করেন।

রত্না বেগম বলেন, ‘প্রতিদিন সকাল সাতটায় যশোর থেকে রওনা দিই। ৪০-৪৫ মিনিটে কালীগঞ্জে আসি। মালামাল কিনে সকাল ১০টার মধ্যে যশোরে ফিরে আসি। প্রতিদিন খরচ মিটিয়ে ৩০০-৪০০ টাকা লাভ থাকে। এক বছর আগে ঋণ নিয়ে একটি মাংসের দোকান দিয়েছি। ভুঁড়ি-মাথা কেনাবেচার পাশাপাশি গ্রামাঞ্চল থেকে গরু কিনে বিক্রি জবাই করে বিক্রি করি।’

কালীগঞ্জ শহরের মাংস বিক্রেতা আসাদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘বেঁচে থাকার জন্য রত্না বেগম কাজ খুঁজছিলেন। আমি তাঁকে উৎসাহ দিই ও সহযোগিতা করি। বর্তমানে তিনি ভালোভাবেই ব্যবসা করছেন।’