বাগাতিপাড়া উপজেলা আ.লীগের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত, যোগ দেননি সভাপতি–সম্পাদক

আজ সন্ধ্যায় বাগাতিপাড়া জিমনেশিয়ামে উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিতসভা অনুষ্ঠিত হয়
ছবি: প্রথম আলো

বাগাতিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা বর্জন করেছেন নাটোর-১ আসনের সাবেক সাংসদ আবুল কালাম আজাদ, দলের উপজেলা কমিটির সভাপতি আবুল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক সেকেন্দার আলী। এই পরিস্থিতিতেই আজ বৃহস্পতিবার বেলা তিনটা থেকে বাগাতিপাড়া উপজেলা জিসনেসিয়ামে এ সভা শুরু হয়। সভা শেষ হয়েছে রাত সাড়ে নয়টায়।

সভায় বাগাতিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটি বিলুপ্ত করে আহ্বায়ক কমিটি করার কথা ছিল। তবে আহ্বায়ক কমিটি গঠন ছাড়াই সভা শেষ। বিলুপ্ত করা হয়নি আগের কমিটিও।

সভা বর্জনকারীদের অভিযোগ, এখনো নাটোরের পূর্ণাঙ্গ জেলা কমিটি গঠিত হয়নি। শুধু সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। দলের গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে জেলা সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলামের নির্দেশে বাগাতিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি বিলুপ্ত করে আহ্বায়ক কমিটি গঠনের জন্য বর্ধিত সভা ডাকা হয়েছে। তবে জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদকের দাবি, কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী সবকিছু করা হচ্ছে।

উপজেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ইউনুস আলীর সভাপতিত্বে সন্ধ্যার একটু আগে বর্ধিত সভা শুরু হয়। সভায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হোসেনের সভাপতিত্ব এবং সাধারণ সম্পাদক সেকেন্দার আলীর সঞ্চালনা করার কথা ছিল। তবে তাঁরা কেউই সভায় উপস্থিত হননি। ব্যানারে নাটোর-১ (বাগাতিপাড়া-লালপুর) আসনের সাবেক সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি আবুল কালাম আজাদকে বিশেষ অতিথি উল্লেখ করা হলেও তিনিও সভায় যোগ দেননি।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, নাটোর-১ সংসদীয় আসনের এলাকাভুক্ত লালপুর ও বাগাতিপাড়া উপজেলায় বর্তমান সাংসদ শহিদুল ইসলাম ও সাবেক সাংসদ আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে প্রতিটি ইউনিটে দুটি করে কমিটি রয়েছে। এ কারণে দীর্ঘদিন ধরে নেতা–কর্মীদের মধ্যে বিরোধ রয়েছে। এ বিরোধ নিরসনে ১৯ মার্চ ঢাকায় শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংগঠনিক সম্পাদক (রাজশাহী বিভাগ) এস এম কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে লালপুর ও বাগাতিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের নিয়ে বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে নাটোরের পাঁচ সাংসদ, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, সংশ্লিষ্ট উপজেলার সভাপতি ও সম্পাদক এবং সাবেক সাংসদ আবুল কালাম আজাদ উপস্থিত ছিলেন।

দীর্ঘ আলোচনা শেষে সভায় ২৪ মার্চ বাগাতিপাড়া ও ২৫ মার্চ লালপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা এবং ২৭ মে বাগাতিপাড়া ও ২৮ মে লালপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠানের তারিখ ঘোষণা করা হয়। এসব অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথি ও প্রধান বক্তার তালিকাও প্রকাশ করা হয়েছিল।

জেলার সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী আজ বাগাতিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা হওয়ার কথা। কিন্তু লালপুর ও বাগাতিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সাংসদ আবুল কালাম আজাদ গত মঙ্গলবার রাতে লালপুরের চংধুপইল ইউনিয়ন পরিষদের মিলনায়তনে জরুরি বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠক শেষে তাঁদের দেওয়া একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।

এতে উল্লেখ করা হয়, ১৯ মার্চ দলের সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সমঝোতা সভায় সেসব সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল, সেগুলো জেলা সাধারণ সম্পাদকের দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে বিকৃত করে প্রকাশ করা হয়েছে। এ বিষয়ে তাঁরা কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি বিজ্ঞপ্তি সংশোধনের আশ্বাস দেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত তা সংশোধন করা হয়নি। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাঁরা ২৪ মার্চের বর্ধিত সভায় যোগ দিচ্ছেন না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আবুল কালাম আজাদ বলেন, লালপুর ও বাগাতিপাড়ায় তাঁর নেতৃত্বে ২০১৪ সালে উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি গঠিত হয়েছিল। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তাঁরা ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্মেলন করে নতুন কমিটি গঠন করেন। এর পাশাপাশি বর্তমান সাংসদ শহিদুল ইসলামের অনুসারীরাও প্রতিটি ইউনিটের আলাদা কমিটি গঠন করেছেন। এ অবস্থায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে কারা কাউন্সিলর হবেন, তা নিয়ে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়েছে। এগুলো নিরসন না করেই জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক একটি বিতর্কিত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছেন। কেন্দ্রের সিদ্ধান্তে অতিথিদের নামের যে ক্রমবিন্যাস করা হয়েছিল, তা–ও মানা হচ্ছে না। এ কারণে দুই উপজেলার নেতাদের সঙ্গে তিনিও বর্ধিত সভায় যোগ দেননি।

অভিযোগের বিষয়ে কথা হয় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, কেন্দ্রের সিদ্ধান্তই বিজ্ঞপ্তিতে প্রচার করেছেন তিনি। এটা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে তা কেন্দ্রীয় নেতারা সমাধান করবেন। তাই বলে গঠনতন্ত্রের বাইরে গিয়ে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বর্ধিত সভা না করার সিদ্ধান্ত জানানো ঠিক হয়নি। এটা সংগঠনবিরোধী তৎপরতা।

বর্ধিত সভায় উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও নাটোর-৪ আসনের সাংসদ আবদুল কুদ্দুস, জেলার সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম, নাটোর-১–এর সাংসদ শহিদুল ইসলাম, সংরক্ষিত নারী সাংসদ রত্না আহমেদ, সাবেক প্রতিমন্ত্রী আহাদ আলী সরকার, নাটোর পৌরসভার মেয়র উমা চৌধুরী প্রমুখ।