বাগেরহাটে ছাত্রী ধর্ষণের মামলায় মাদ্রাসা সুপারের যাবজ্জীবন

বাগেরহাটের শরণখোলায় আলোচিত শিশু ধর্ষণ মামলায় এক মাদ্রাসা সুপারের যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার দুপুরে বাগেরহাটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২–এর বিচারক মো. নূরে আলম এই রায় দেন। এর আগে গত ১৯ অক্টোবর একই আদালত সাত কর্মদিবসে মোংলা উপজেলার মাকড়ডোন এলাকার সাত বছরের একটি শিশুকে ধর্ষণের দায়ে আবদুল মান্নান সরদার নামে একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন।
গতকাল দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির নাম ইলিয়াছ জোমাদ্দার (৪৮)। তিনি শরণখোলার পূর্ব রাজাপুর গ্রামের বাসিন্দা। যাবজ্জীবন দণ্ডাদেশ ছাড়াও আসামিকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেন আদালত।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, ২০১৯ সালের ৮ আগস্ট সকাল সাতটায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে প্রতিদিনের মতো পঞ্চম শ্রেণির চার ছাত্রী মাদ্রাসায় সুপারের কাছে আরবি পড়তে যায়। পৌনে আটটার দিকে মাদ্রাসার সুপার ইলিয়াছ জোমাদ্দার এক ছাত্রীকে রেখে অন্য তিনজনকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। পরে ওই ছাত্রীকে মাদ্রাসার লাইব্রেরিতে নিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন ইলিয়াছ। এ ঘটনা কাউকে না জানাতে হত্যার হুমকি দিয়ে শিশুটিকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন ওই মাদ্রাসা সুপার।

অসুস্থ অবস্থায় মেয়েটি মাদ্রাসা থেকে বাড়িতে গেলে ওই সুপারের পরামর্শে স্থানীয় গ্রাম্য চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা দেওয়া হয়। তখন ওই সুপার তাকে ঝাড়ফুঁক দেন। কিন্তু তার রক্তপাত বন্ধ না হলে ওই রাতে পার্শ্ববর্তী মোরেলগঞ্জ উপজেলার একটি বেসরকারি ক্লিনিকে ভর্তি করেন। ঘটনার ১১ দিন পর ১৯ আগস্ট মেয়েটির বাবা বাদী হয়ে শরণখোলা থানায় মাদ্রাসা সুপার ইলিয়াস জোমাদ্দারের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। এই মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) তদন্তভার দেওয়া হয়। পিবিআইয়ের উপপরিদর্শক (এসআই) আবু সাইয়েদ ১৭ অক্টোবর ফকিরহাট উপজেলার কাটাখালি এলাকা থেকে ইলিয়াছ জোমাদ্দারকে গ্রেপ্তার করেন। গ্রেপ্তারের পর তিনি ধর্ষণের কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।

রাষ্ট্রপক্ষের সহকারী কৌঁসুলি (এপিপি) রনজিৎ কুমার মণ্ডল বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সাইয়েদ ১৩ নভেম্বর মাদ্রাসা সুপার ইলিয়াছের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন। এরপর আদালতের বিচারক মামলাটিকে আমলে নিয়ে ২০২০ সালের ৯ মার্চ অভিযোগ গঠন করেন। মার্চে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লে আদালতের কার্যক্রম সীমিত হয়ে পড়ে। পরে কার্যক্রম স্বাভাবিক হওয়ায় গত ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ২৯ অক্টোবরের মধ্যে আদালতের বিচারক চিকিৎসক, পুলিশ, বাদী ও বিবাদী মিলিয়ে মোট ১৭ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। ১ নভেম্বর এই মামলার বাদী–বিবাদী পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষ হয়।
এই মামলায়ও আদালত ৭ কার্যদিবসে সাক্ষী ও যুক্তিতর্ক শেষে রায় প্রদান করেছেন জানিয়ে এপিপি রনজিৎ জানান, আদালত এই আইনের সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন। বাদী মেয়ের বাবা বিচারে সন্তুষ্টি জানিয়ে বলেন, দেশে যেন আর কোনো শিশুর সঙ্গে এমন ঘটনা না ঘটে।
আসামিপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন আলী আকবর। মামলার যুক্তিতর্কে আসামি দাবি করেন মাদ্রাসা সুপারের পদ থেকে সরাতে চক্রান্ত করে তাঁর মক্কেলকে ফাঁসানো হয়েছে।