বাগেরহাটে ধর্ষণ ও দুই শিশুকে হত্যার দায়ে একজনের আমৃত্যু কারাদণ্ড
বাগেরহাটে এক নারীকে ধর্ষণ ও দুই শিশু হত্যার দায়ে বাচ্চু মৃধা (৫৫) নামের এক ব্যক্তিকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আজ সোমবার দুপুরে জেলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২-এর বিচারক মো. নূরে আলম এই রায় ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে তাঁকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
মামলার অপর আসামি খোকন খানের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত। তিনি মোরেলগঞ্জ উপজেলার সমাদ্দার গ্রামের আছমত খানের ছেলে। দণ্ড পাওয়া বাচ্চু মৃধা একই উপজেলার পায়লাতলা গ্রামের প্রয়াত বারেক মৃধার ছেলে। রায়ের সময় তাঁরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
মামলার বাদী মো. লোকমান হোসেন ওরফে বাবু এই রায়ে সন্তুষ্ট হতে পারেননি। তিনি রায়ের কপি হাতে পাওয়ার পর উচ্চ আদালতে যাবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। আসামিপক্ষে আইনজীবী ছিলেন শেখ মনিরুজ্জামান।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী রণজিৎ কুমার মণ্ডল বলেন, বাদী লোকমান হোসেনের সঙ্গে আগে থেকেই আসামি বাচ্চু মৃধার জমি–সংক্রান্ত বিরোধ ছিল। সেই বিরোধের জেরে ২০১৪ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ভোর ৫টার দিকে বাচ্চু লোকমানের বাড়িতে গিয়ে তাঁর বৃদ্ধ মাকে মুখ চেপে ধর্ষণ করেন। তখন লোকমানের ৯ ও ৭ বছর বয়সী দুই ছেলে দাদিকে বাঁচাতে এগিয়ে গেলে বাচ্চু তাদের শ্বাসরোধে হত্যা করে পাশের একটি পুকুরে লাশ ফেলে পালিয়ে যান। এ ঘটনায় পরের দিন লোকমান হোসেন বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন।
রণজিৎ কুমার আরও বলেন, আসামি বাচ্চু গ্রেপ্তার হওয়ার পর হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) বাগেরহাট কার্যালয়ের তৎকালীন পরিদর্শক মো. সাইফুল ইসলাম তদন্ত শেষে ২০১৫ সালের ১০ জুলাই বাচ্চু ও খোকনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। উভয় পক্ষের ২০ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে বাচ্চুর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আদালত তাঁকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন এবং ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। অন্যদিকে মামলার অপর আসামি খোকনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাঁকে খালাস দেওয়া হয়।
বাদী লোকমান হোসেন বলেন, ‘আমি আদালতের রায়ে সন্তুষ্ট হতে পারিনি। আমার মাকে ধর্ষণ ও দুই সন্তান হত্যা করেছেন আসামিরা। তাঁদের দুজনেরই ফাঁসি হবে আশা করেছিলাম। সেখানে বিচারক একজনকে যাবজ্জীবন, আরেকজনকে খালাস দিয়েছেন। আমি দুই সন্তান হারিয়েছি। এই রায়ে খুশি হতে পারিনি। মামলার রায়ের কপি হাতে পেলে উচ্চ আদালতে যাব।’