বাগেরহাটে নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে দুজনের ভোট বর্জন

নারী ভোটারদের সারি।আজ সকালে সদর উপজেলার কাড়াপাড়া ইউনিয়নের পোলঘাট মাদ্রাসা কেন্দ্রে
ছবি: প্রথম আলো

নৌকা প্রতীকে জোর করে ব্যালটে সিল মারা, এজেন্টদের মারধর ও ভোটকেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ এনে বাগেরহাটে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী দুজন স্বতন্ত্র প্রার্থী।

আজ সোমবার সকাল আটটায় ভোট গ্রহণ শুরুর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন কচুয়া উপজেলার ধোপাখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী মাসুদ রানা লালন (ঘোড়া প্রতীক) ও ফকিরহাটের শুভদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আবদুল আউয়াল (আনারস প্রতীক)।

স্বতন্ত্র প্রার্থী মাসুদ রানা লালন অভিযোগ করে বলেন, ‘উপজেলা চেয়ারম্যান নিজে আমার এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়েছেন। প্রশাসন আন্তরিক ছিল। তবে নৌকার প্রার্থী ও নেতা-কর্মীরা সুষ্ঠুভাবে ভোট হতে না দেওয়ায় আমি ভোট বর্জন করছি।’

শুভদিয়ার চেয়ারম্যান পদের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আবদুল আউয়াল জানান, তেকাটিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়কেন্দ্রে ব্যালট পেপার ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। এ ছাড়া শুভদিয়াকেন্দ্রে তাঁর ভোটারদের কেন্দ্রে আসতে বাধা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

এদিকে চেয়ারম্যান ছাড়াও সদস্য পদের নির্বাচনেও প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ করেছেন অন্য প্রার্থীরা। নির্বাচনে বিএনপি বা জাতীয় পর্টির কোনো প্রার্থী না থাকায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীরাই আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীদের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়েছেন। এদিকে নির্বাচন শুরু আগে গতকাল রোববার রাতে মোংলা উপজেলার চাঁদপাইয়ে দুই সদস্য পদপ্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে প্রার্থীসহ তিনজন আহত হন। ভোটের আগের রাতে অভিযান চালিয়ে মোল্লাহাট উপজেলার কাহালপুর এলাকা থেকে শতাধিক দেশি অস্ত্র (স্থানীয়ভাবে সড়কি নামে পরিচিত) উদ্ধার করে। তবে এ সময় কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি।

বনগ্রাম ইউনিয়নের বাধাল এলাকার ভোট কেন্দ্রে নৌকা ও বিদ্রোহী প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটেছে
ছবি: প্রথম আলো

তবে এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বাগেরহাট জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও নির্বাচনের প্রধান সমন্বয়কারী ফারাজী বেনজীর আহম্মেদ বলেন, সকাল থেকে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ৫৯৯টি কেন্দ্র ভোট গ্রহণ চলছে। এখন পর্যন্ত কোনো প্রার্থী তাঁদের কাছে কোনো অভিযোগ করেননি। পুলিশ, র‍্যাব, বিজিবি, আনসার সদস্য ছাড়াও ৩০ জন নির্বাহী ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটরা মাঠে আছেন।

এদিকে আজ সকাল থেকে বৃষ্টি উপেক্ষা করেই ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে আসতে থাকেন। কেন্দ্রগুলোতেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সরব উপস্থিতি দেখা গেছে। তবে এর মধ্যেও বিভিন্ন এলাকায় প্রার্থী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘাত ও উত্তেজনার খবর পাওয়া গেছে। মোরেলগঞ্জেরর বনগ্রাম, চিতলমারীর কলাতলাসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। দুপুর সোয়া ১২টায় বনগ্রাম ইউনিয়নের বাধাল এলাকায় নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া–পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

র‍্যাব-৬–এর কোম্পানি কমান্ডার নাজিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিটি কেন্দ্রে ঘুরে ঘুরে তাঁদের দল দায়িত্ব পালন করছে। শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ চলছে। ভোটাররা যাতে নির্বিঘ্নে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন, সে জন্য তাঁরা কাজ করছেন। কোনো বিশৃঙ্খলার খবর থাকলে দ্রুত তাঁদের জানানোর আহ্বান জানান তিনি।

বাগেরহাট জেলার ৭৫ ইউনিয়নের মধ্যে নির্বাচন হচ্ছে ৬৬টি ইউনিয়নে। তবে এর মধ্যে ৬৫টি ইউনিয়নে ভোট হচ্ছে। কচুয়া উপজেলার রাড়ীপাড়া ইউনিয়নে চেয়ারম্যান, সদস্য ও সংরক্ষিত নারী সদস্যের মোট ১৩ পদের সবগুলোতেই একজন করে প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয়েছেন। বাকি ৬৫ ইউনিয়নের মধ্যে নির্বাচন হচ্ছে মাত্র ২৮টিতে চেয়ারম্যান পদে। কারণ, ৩৮টি ইউনিয়নেই চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয়েছেন। তাই অধিকাংশ ইউনিয়নে কেবল ইউপি সদস্য ও সংরক্ষিত নারী সদস্য পদের নির্বাচন হচ্ছে। ফলে অনেক ভোটারেরই ভোটদানের ক্ষেত্রে তেমন আগ্রহ নেই বলে জানা গেছে।