বাঘার আমের প্রথম চালান গেল বিদেশে

গাছ থেকে আম নামিয়ে বিদেশে পাঠানোর জন্য প্রক্রিয়াজাত করা হচ্ছে। আজ বিকেলে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার কলিগ্রামেছবি: প্রথম আলো

রাজশাহীর বাঘা থেকে ‘কন্ট্রাক্ট ফার্মিং’-এর মাধ্যমে চাষ করা আমের প্রথম চালান আজ বুধবার ইউরোপের উদ্দেশে পাঠানো হয়েছে। এই চালানে সাদি এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের দেড় টন আম পাঠানো হয়েছে। তার মধ্যে এক টন যাবে যুক্তরাজ্যে এবং বাকি ৫০০ কেজি আম হংকংয়ের বাজারে যাবে।

বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিদেশে নিরাপদ আম রপ্তানি করার লক্ষ্যে রপ্তানিকারক কোম্পানির সঙ্গে বাঘা উপজেলার ২০ জন চাষির চুক্তি হয়েছে। এই চুক্তির আওতায় ‘উত্তম কৃষি চর্চা’র মাধ্যমে আম চাষ করা হয়েছে। এই চর্চার অন্যতম মানদণ্ড হচ্ছে স্বাস্থ্যসম্মত উৎপাদন, নিরাপদ ও খাদ্যমান রক্ষা, পরিবেশ সুরক্ষা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, কৃষিকর্মীর স্বাস্থ্য ইত্যাদি মেনে চলা।

স্বাস্থ্যসম্মত উৎপাদনের মধ্যে রয়েছে সার, সেচ, বালাইনাশক প্রয়োগ ও ব্যবহারবিধি অনুসরণ, বীজ ও চারা রোপণ সামগ্রীর ব্যবহার, রাসায়নিকের পরিমিত ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনা অবলম্বনে উৎপাদন নিশ্চিত করা। নিরাপদ ও খাদ্যমান রক্ষার মধ্যে রয়েছে ফসল সংগ্রহোত্তর সংরক্ষণ ও পরিবহন ব্যবস্থাপনা।

৬ জুন যুক্তরাজ্যে আরও ১ হাজার ২০০ কেজি আম বাঘার চাষিরা পাঠাবেন।

এই ব্যবস্থাপনায় চাষ করা ১৫০ মেট্রিক টন আম চলতি মৌসুমে বাঘার ২০ জন চাষির কাছ থেকে সংগ্রহ করে বিদেশে পাঠানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধে৵ প্রথম দিনে উপজেলার কলিগ্রামের কৃষক শফিকুল ইসলামের প্রতিষ্ঠান সাদি এন্টারপ্রাইজ থেকে ক্ষীরশাপাতি আম পাঠানো হলো। শফিকুল ইসলাম বলেন, প্রথম দিনে তাঁদের প্রতিষ্ঠানের দেড় টন আম নিয়ে সন্ধ্যায় গাড়ি ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। এরপর ৩ জুন দুই টন আম যুক্তরাজ্য ও হংকংয়ে পাঠানো হবে। ৬ জুন যুক্তরাজ্যে আরও ১ হাজার ২০০ কেজি আম বাঘার চাষিরা পাঠাবেন।

আজ বিকেলে কলিগ্রামে সাদি এন্টারপ্রাইজে গিয়ে দেখা যায়, গাছ থেকে আম নামিয়ে বিদেশে পাঠানোর জন্য প্রক্রিয়াজাত করা হচ্ছে। চুক্তি অনুযায়ী আমগুলো বিদেশে পাঠানোর জন্য বিশেষ সতর্কতায় গাছ থেকে বোঁটাসহ নামানো হয়েছে। তারপর কাঁচি দিয়ে নির্দিষ্ট আকারের বোঁটা আমের গায়ে রেখে বাকিটা কেটে ফেলা হচ্ছে। তারপর আমগুলো ঘরের মেঝেতে বৈদ্যুতিক পাখার বাতাস দিয়ে শুকিয়ে নেওয়া হচ্ছে। শুকানো আম কাগজ দিয়ে মুড়ে ক্রেটে ভরা হচ্ছে। আম পাঠানোর ওই কাজ তদারক করার জন্য সেখানে বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতানসহ তাঁর কার্যালয়ের অন্যান্য কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।

রাজশাহীর বাঘা থেকে আমের প্রথম চালান বিদেশে পাঠানোর আগে। আজ বিকেলে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার কলিগ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, উত্তম কৃষিচর্চার মাধ্যমে চাষ করা আম দেখেশুনে তাঁরা এখান থেকে আমের সঙ্গে একটি প্রত্যয়নপত্র দিচ্ছেন। তারপর ঢাকার শ্যামপুর প্যাকিং হাউস অ্যান্ড কোয়ারেন্টিন সেন্টার থেকে আরেকটি প্রত্যয়নপত্র দেওয়া হবে। এরপর এই আম বিদেশে চলে যাবে। এ লক্ষ্যে তাঁরা শুরু থেকে কৃষকদের নিয়ে কাজ করেছেন। প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও তদারকির কাজও করেছেন।

সাদি এন্টারপ্রাইজের আম পাঠানোর কার্যক্রম পরিদর্শনে এসেছিলেন তৃতীয় পর্যায়ের কৃষক প্রশিক্ষণ প্রকল্পের পরিচালক তাজুল ইসলাম পাটোয়ারী। তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে কৃষককে লাভবান করা, তাঁদের উৎপাদিত ফসল বিদেশে পাঠানোর মাধ্যমে তাঁদের আয় বৃদ্ধি করা। এ উদ্দেশ্যে আজ বাঘা থেকে আমের প্রথম চালান বিদেশে যাচ্ছে। এটা খুবই খুশির খবর।’