বাজারে এসেছে দিনাজপুরের রসাল লিচু

কৃষকদের কাছ থেকে লিচু কেনার পর ঝুড়িতে ভরা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার সকালে দিনাজপুর শহরের গোর-এ-শহীদ ময়দানে লিচুর পাইকারি বাজারে
ছবি: রাজিউল ইসলাম

বাঁশের ঝুড়িতে সবুজ পাতার বিছানা। ওই ঝুড়িতে থাকা লাল ও সবুজ রঙের থোকা থোকা লিচু নজর কাড়ছে সবার। নজরকাড়া এসব লিচু দিনাজপুরের। এ লিচুর চাহিদা দেশজোড়া। রসাল এই লিচুর খ্যাতিও রয়েছে বেশ। এ জেলায় নানা জাতের  ও সুন্দর সুন্দর নামের লিচু পাওয়া যায়। সপ্তাহখানেক ধরে বাজারে উঠতে শুরু করেছে মাদ্রাজি ও বেদানা জাতের লিচু। ব্যবসায়ীরা জেলার বড় বড় বাজার থেকে এসব লিচু কিনে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠাচ্ছেন।

লিচু ব্যবসায়ী ও জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, আগামী সোমবার শহরের গোর-এ-শহীদ মাঠে লিচুর বাজারের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে, এমনটিই জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক খালেদ মোহাম্মদ জাকী। ইতিমধ্যে মাঠে লিচুর পাইকারি বাজারের জন্য শেড তৈরি করা হয়েছে। তবে পাইকারি বাজার ছাড়াও শহরের বাহাদুর বাজার, হাসপাতাল মোড়, থানার মোড়ে লিচুর খুচরা বাজারে ভিড় করছেন ক্রেতারা।

দিনাজপুর জেলা ও উপজেলা শহরের বাজারগুলোতে এখন পাওয়া যাচ্ছে মাদ্রাজি ও বেদানা জাতের লিচু। জ্যৈষ্ঠ মাসের শুরুতে দিনাজপুরের বাজারে মাদ্রাজি লিচু চলে আসে। এই লিচু আকারে অপেক্ষাকৃত ছোট। বিচি বড়, শ্বাসের পরিমাণ কম। টক–মিষ্টি স্বাদ। বৃহস্পতিবার গোর-এ-শহীদ মাঠে পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা যায়, সকাল থেকে ভ্যানে ও ইজিবাইকে আড়তে লিচু নিয়ে আসছেন লিচুচাষিরা। চলছে দর–কষাকষি। দামে মিললে আড়তে নামানো হচ্ছে লিচু। ঝুড়িতে সবুজ পাতার মুড়িয়ে চটের ঢাকনা দেওয়া হচ্ছে। ঝুড়ির গায়ে লেখা হচ্ছে ঠিকানা। লিচু উঠছে ট্রাকে। ছুটছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে।

পাইকারি বাজারে প্রতি এক হাজার মাদ্রাজি লিচু বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকায়। আর বেদানা লিচু প্রতি হাজার বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৪০০০ টাকা দরে।

পাইকারি বাজারে প্রতি এক হাজার মাদ্রাজি লিচু বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকায়। আর বেদানা লিচু প্রতি হাজার বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৪০০০ টাকা দরে। অন্যদিকে থানামোড়ে খুচরা বাজারে এক শ মাদ্রাজি লিচু ২২০-২৫০ টাকা এবং এক শ বেদানা লিচু ৪৫০-৫৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

কৃষকের কাছ থেকে লিচু কেনার পর ট্রাকে তুলছেন ব্যবসায়ী। বৃহস্পতিবার সকালে দিনাজপুর শহরের গোর-এ-শহীদ ময়দানে লিচুর পাইকারি বাজারে
ছবি: প্রথম আলো

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবে, দিনাজপুর জেলায় ৫ হাজার ৪৮১ হেক্টর জমিতে লিচুবাগান রয়েছে সাড়ে ৫ হাজার ৪১৮টি। এর মধ্যে বোম্বাই লিচু ৩ হাজার ১৭০ হেক্টর জমিতে, মাদ্রাজি ১ হাজার ১৬৬ হেক্টর, চায়না থ্রি ৭০২ দশমিক ৫ হেক্টর, বেদানা ২৯৪ দশমিক ৫ হেক্টর, কাঁঠালি ২১ হেক্টর এবং মোজাফফরপুরী লিচু ১ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। আর বসতবাড়ির উঠানসহ বাগানগুলোতে লিচুগাছ রয়েছে সাত লক্ষাধিক।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) মো. খালেদুর রহমান বলেন, সারা দেশে কমবেশি লিচু উৎপাদিত হলেও দিনাজপুরের লিচুর চাহিদা বেশি। এবারে হেক্টরপ্রতি ৫ দশমিক ৩ মেট্রিক টন লিচুর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, গত বছর দিনাজপুরে ২৮ হাজার মেট্রিক টন লিচুর ফলন হয়েছে। যার বাজারমূল্য ছিল ৫৭৫ কোটি টাকা। বাজারে আগাম লিচু ওঠার বিষয়ে তিনি বলেন, কিছু কিছু কৃষক বেশি লাভের আশায় আগাম জাতের লিচু চাষ করছেন। অনেকে শেষ সময়ে কীটনাশক ছিটাচ্ছেন। তবে কৃষকদের কীটনাশক প্রয়োগ না করার বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

ফলন কম বেদানা-বোম্বাই-চায়না থ্রির, দাম বাড়ার শঙ্কা
মাঘের শেষ থেকে লিচুগাছে তামাটে পাতার ফাঁকে উঁকি দেয় সোনালি রঙের মুকুল। এবার বোম্বাই-বেদানা-মাদ্রাজি-চায়না থ্রিসহ সব জাতের লিচুগাছে ছিল মুকুলের সমারোহ। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মুকুলের এমন আধিক্যে লাভের আশা দেখেছিলেন লিচুচাষিরা। কিন্তু বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে রাতে কুয়াশা এবং দিনে অধিক তাপমাত্রা থাকায় পুড়ে যায় মুকুল। ফলে বেদানা-বোম্বাই-চায়না থ্রির ফলন কমার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। চাষি এবং ব্যবসায়ী উভয়েই জানান, ফলন কম, তাই এসব জাতের লিচু বেশি দামে কিনতে হবে ক্রেতাদের।

বিরল উপজেলার রবিপুর গ্রামের লিচুচাষি শিশির শাহ বলেন, ৩০ একর জমিতে ৮০০ গাছ নিয়ে বোম্বাই লিচুবাগান ইজারা নিয়েছেন তিনি। মুকুলও ছিল ভালো। কিন্তু আবহাওয়ার কারণে মুকুল নষ্ট হয়েছে। গুটিও ঝরে পড়েছে। মনে করেছিলাম গতবারের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারব। কিন্তু এখন কী হবে জানি না।

মৌসুমের শুরুতে দিনাজপুরের বাজারে আসেন ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার লিচুর পাইকারেরা। এবার এখনো সেভাবে দেখা মেলেনি পাইকারদেরও। বৃহস্পতিবার গোর-এ-শহীদ মাঠে কথা হয় ঢাকার আবদুল্লাহপুর বিসমিল্লাহ পাইকারি বাজারের ফল ব্যবসায়ী আবদুর রহিমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ঢাকায় এখন গাজীপুর, নরসিংদী, পাবনা-ঈশ্বরদীর লিচু ঢুকেছে। এ জন্য দিনাজপুরের লিচু কিছুটা কম বিক্রি হচ্ছে। এখনো সেভাবে পাইকারেরা দিনাজপুরে আসতে শুরু করেননি।