‘বাদাম বেচি, বইও পড়ি’

পরিবারে অভাব-অনটনের কারণে লেখাপড়ার ফাঁকে বাদাম বিক্রি করে দশম শ্রেণির ছাত্র নয়ন রায়। মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলা শহরের শিশুপার্ক চত্বরে
ছবি: প্রথম আলো

দরিদ্র পরিবারের সন্তান ওরা। ওদের বাবা যা আয় করেন, তা দিয়ে সংসারের সব খরচ মেটানো সম্ভব হয় না। তাই পড়ালেখার পাশাপাশি ওরা বাদাম বিক্রি করে। এ জীবনযুদ্ধের গল্প দশম শ্রেণির ছাত্র নয়ন রায় (১৬) ও তার ছোট ভাই সপ্তম শ্রেণির ছাত্র চয়ন রায়ের (১৪)। মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলা সদরের শিশুপার্ক চত্বরে একটি বিপণিবিতানের সামনে বসে দুই ভাই মিলে বাদাম বিক্রি করে।  

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পরিবারের অভাব-অনটনের কারণে বিদ্যালয়ের ছুটির পর তারা বাদাম বিক্রি করে। বন্যায় এখন বিদ্যালয় বন্ধ। এ সুযোগে তারা বাদাম বিক্রিতে সময় বেশি দিচ্ছে। প্রতিদিন বাদাম বিক্রির জন্য ঘর থেকে বের হয়ে আসার সময় সঙ্গে তারা বই নিয়ে আসে। বই পড়ার ফাঁকে ফাঁকে তারা বাদাম বিক্রি করে।

শনিবার শিশুপার্ক চত্বরে সরেজমিনে দেখা যায়, নয়ন বাদাম নিয়ে বসে আছে। বিপণিবিতানে কেনাকাটা করতে আসা লোকজন তার কাছ থেকে বাদাম কিনে খাচ্ছেন। কেউ কেউ বাদাম কিনে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন। ক্রেতাদের আনাগোনা কমে গেলেই নয়ন সঙ্গে আনা বই খুলে চোখ বোলানো শুরু করে দেয়। আবার ক্রেতারা এলে বই রেখে বাদাম বিক্রিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

নয়ন বলে, ‘কাস্টমার সব সময় থাকে না। বন্যার কারণে বাজারে মানুষজনও কম আসে। তাই এখন বিক্রি কম। এখন বাদাম বেচি, বইও পড়ি।’

নয়ন জানাল, তাদের বাড়ি হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার সন্তোষপুর গ্রামে। বাড়িতে তিন শতকের বসতভিটা ছাড়া আর কিছু নেই। এলাকায় তেমন কাজ না থাকায় সাত-আট বছর আগে তাদের বাবা নারায়ণ রায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে জুড়ীতে চলে আসেন। স্থানীয় ভবানীগঞ্জ বাজারের মালগুদাম এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নিয়ে তারা থাকে। বাসাভাড়া মাসে ১ হাজার ২০০ টাকা। পরিবারে মা-বাবা আর তারা চার ভাই।

পড়াশোনার পাশাপাশি বাদাম বিক্রির কারণ জানতে চাইলে নয়ন বলল, ‘বাজারে জিনিসপত্রের দাম তো দিন দিন বাড়ে। বন্যায় আরও বাড়ছে। সংসারে ছয়জন মানুষ। এই রোজগারে খরচ চালানি কঠিন। লেখপড়ারও তো খরচ লাগে। এ কারণে বাবা ও বড় ভাইয়ের মতো আমরাও বাদাম বিক্রি করছি।’

নয়ন বলে, তার বাবা ও বড় ভাই নারদ রায় ভবানীগঞ্জ বাজারে হেঁটে হেঁটে বাদাম বিক্রি করেন। ভাইদের মধ্যে সবার ছোট সুজন রায় পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে।

ব্যবসা কীভাবে করা হয় জানতে চাইলে নয়ন বলে, দোকান থেকে প্রথমে তারা কাঁচা বাদাম কেনে। এরপর তাদের মা চন্দনী রায় তা ভেজে দেন। সকালে তারা ভাজা বাদাম বাজারে বিক্রির জন্য নিয়ে আসে। বাদাম বিক্রিতে ছোট ভাই চয়ন তাকে সহযোগিতা করে।

নয়ন আরও বলে, ‘বাদাম বেচে প্রতি দিন গড়ে দুই শ-আড়াই শ টাকা লাভ হয়। বাবা আর বড় ভাইয়েরও এই রকম লাভ হয়।’