বানরের জন্য ভালোবাসা

সিলেটে নিরঞ্জন চন্দ্র চন্দ এক বছর ধরে বানরদের খাওয়াচ্ছেন। নগরের চাষনী পীর মাজার এলাকায় গত মঙ্গলবার বিকেলে
ছবি: প্রথম আলো

তাঁকে দেখলেই সব বানর আনন্দে খাবার খেতে চলে আসে। তিনিও ব্যাগভর্তি খাবার বানরগুলোর জন্য ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দেন। এরপর বানরদের মধ্যে শুরু হয় খাবার নিয়ে কাড়াকাড়ি। কলা, কাঁঠাল, তরমুজ, লিচু থেকে শুরু করে পাউরুটিসহ নানা ধরনের খাবার বানরদের খেতে দেন তিনি। বানরের মায়ায় পড়া এই ব্যক্তির নাম নিরঞ্জন চন্দ্র চন্দ (৪৪)। তাঁর বাসা সিলেট নগরের যতরপুর এলাকায়।

নিরঞ্জন পেশায় ব্যবসায়ী ও সমাজকর্মী। নগরের সোবহানীঘাট এলাকায় ‘লোকনাথ ট্রেডিং’ নামে ব্যাটারি-আইপিএস বিক্রির প্রতিষ্ঠান রয়েছে তাঁর। এ ছাড়া লোকনাথ ট্যুরিজম নামের একটি প্রতিষ্ঠানেরও স্বত্বাধিকারী তিনি। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি চতুর্থ। বোনদের বিয়ে হয়ে গেছে। এখন বাবা, স্ত্রী শেলী রানী শীল এবং দুই ছেলে নিলয় চন্দ (১৮) ও ধ্রুব চন্দকে (১১) নিয়ে তাঁর সংসার।

গত বছরের ৫ মে বড় ছেলের জন্মদিন উপলক্ষে নগরের হজরত চাষনী পীর (রহ.)-এর মাজারের টিলায় থাকা কয়েক শ বানরকে কলা আর পাউরুটি খেতে দিয়েছিলেন নিরঞ্জন। সেই শুরু। এর পর থেকে তিনি প্রতি সপ্তাহে এক দিন নিয়মিত বানরের আহার জুটিয়ে আসছেন।

নিরঞ্জন জানান, চাষনী পীর এলাকায় ৪০০ থেকে ৪৫০ বানর আছে। এর বাইরে নগরের কাষ্টঘর, করেরপাড়া ও মেজরটিলা এলাকায়ও প্রচুর বানর রয়েছে। সবখানেই পর্যায়ক্রমে তিনি বানরদের খাওয়াতে যান। ফলের সময় তিনি ফলই বেশি খেতে দেন। আর অন্য সময় সাধারণত কলা আর পাউরুটি দেন। প্রতি মাসে গড়ে এ বাবদ তাঁর চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা খরচ হয়।

অনেকটা আক্ষেপ করে নিরঞ্জন চন্দ্র বলেন, একসময় সিলেট নগরের বিভিন্ন টিলা-বনভূমিতে প্রচুর বানর ছিল। কিন্তু নগরে ধীরে ধীরে টিলা কেটে সাবাড় করে ফেলা হচ্ছে। ফলে বনভূমিও কমছে। এ অবস্থায় তারা আবাসস্থল হারিয়ে বিপন্ন হতে চলেছে। কিছু টিলায় এখনো যেসব বানর আছে, তারাও খাবারের সংকটে ভুগছে ও প্রতিনিয়ত বিলুপ্ত হচ্ছে। এ প্রাণীর অস্তিত্ব টেকাতে হলে তাদের সংকটগুলো দূর করতে হবে। ম

নিরঞ্জন চন্দ্র আরও বলেন, ‘বানরগুলো খাবার না পেয়েই মূলত লোকালয়ে চলে আসছে। তারা অভুক্ত থাকাতেই এমনটা হচ্ছে। তবে অনেক মানুষ অযথাই বানরদের অমানবিকভাবে আঘাত করে আহত করছে কিংবা মেরে ফেলছে। তাই সিলেটে এসব বানরের অস্তিত্ব রক্ষায় সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ এগিয়ে আসুক, তারা নিয়মিত বানরদের খাবার দিক, এটাই প্রত্যাশা করছি।’