বালুচরে আগাম তরমুজ, ভালো দাম পাচ্ছেন চাষি

গত মৌসুম থেকে ব্যাপকভাবে আগাম তরমুজের চাষ শুরু হয়েছে। খেতে মিঠাপানির সেচ দেওয়া সবচেয়ে কঠিন কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

প্রথম আলোর ফাইল ছবি

পটুয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা রাঙ্গাবালীর দক্ষিণে জাহাজমারা ও দ্বীপ চর কলাগাছিয়ার বালুচরে আগাম জাতের তরমুজ চাষ হয়েছে। বড় আকারের তরমুজে ভরে উঠেছে বালুচরের জমি। ইতিমধ্যে চাষিরা খেত থেকে তরমুজ বিক্রি শুরু করেছেন। ভালো দাম পেয়ে তাঁদের মুখে হাসি ফুটে উঠছে।

স্থানীয় চাষিরা বলছেন, সাগরপারের এসব বালুচর আগে পতিত থাকত। আগে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু জমিতে তরমুজ চাষ হতো। গত মৌসুম থেকে ব্যাপকভাবে আগাম তরমুজের চাষ শুরু হয়েছে। তবে খেতে মিঠাপানির সেচ দেওয়া সবচেয়ে কঠিন কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারি পর্যায়ে উদ্যোগে নেওয়া হলে চরে বিস্তীর্ণ জমিতে চাষাবাদ সহজ হবে।

পটুয়াখালীতে আমন ধানের চাষ বেশি হয়। এ ছাড়া জেলার কৃষি ফসলের অন্যতম তরমুজ। সাধারণত ডিসেম্বরে আমন ধান তোলার পর জানুয়ারি থেকে তরমুজের আবাদ শুরু হয়। ফলন আসে এপ্রিলে। তবে রাঙ্গাবালী উপজেলার সাগরপাড়ের জাহাজমারা এবং কলাগাছিয়ায় ডিসেম্বরেই আগাম তরমুজের আবাদ শুরু হয়। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে তরমুজ বিক্রি শুরু হয়।

গত সোমবার গিয়ে দেখা যায়, জাহাজমারা সৈকতের পশ্চিম দিকে মাঠজুড়ে তরমুজখেত। এলাকার কৃষক ফেরদৌস প্যাদা (৫০) ও তাঁর স্ত্রী জুলেখা বেগম (৪০) খেতে পানি দিচ্ছেন। খেতের পাশে ছাপরা তৈরি করে তাঁরা থাকেন। ফেরদৌস বলেন, তাঁদের জমি নেই। অন্যের অনাবাদি জমিতে তরমুজের আবাদ করেছেন তাঁরা। খেতের পাশে মাটি খনন করে বড় কুয়া তৈরি করেছেন। সেই কুয়া থেকে পানি তুলে সেচ দিচ্ছেন। তাঁরা এ বছর তিন একর জমিতে তরমুজের আবাদ করেছেন। এতে প্রায় ১ লাখ টাকা ২০ হাজার খরচ হয়েছে।

ফেরদৌস আরও বলেন, তরমুজ চাষে প্রচুর পানির প্রয়োজন। সাগরপাড়ে লোনাপানি। এ কারণে মিঠাপানির জন্য অনেক কষ্ট করতে হয়।

আরেক কৃষক ফারুক হাওলাদার পাঁচ একর জমিতে তরমুজ আবাদ করেছেন। খরচ হয়েছে আড়াই লাখ টাকা। তিনি ৩০০টি তরমুজ বিক্রি করেছেন। প্রতিটির দাম ২৮০ টাকা। এখনো খেতে পাঁচ লাখ টাকার তরমুজ রয়েছে।

এদিকে আগাম তরমুজ কিনতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা এখানে চলে এসেছেন। ঢাকা থেকে তরমুজ কিনতে এসেছেন ব্যবসায়ী আবুল কালাম। তিনি বলেন, গত মৌসুমে যে তরমুজের দাম ৫০-৭৫ টাকা ছিল, এবার তা ১০০-৩০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। এ অঞ্চলের তরমুজের চাহিদা ব্যাপক রয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত বছর জেলায় ১৪ হাজার ৮২২ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছিল। এর মধ্যে অর্ধেকই ছিল রাঙ্গাবালীতে। গত বছর এই উপজেলায় ৭ হাজার ৫৬০ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছিল। এ বছর আবাদ হয়েছে ৭ হাজার ৬৩০ হেক্টরে। গত বছর জাহাজমারা ও চর কলাগাছিয়ায় প্রায় ২০০ হেক্টর জমিতে আগাম তরমুজের চাষ হয়েছিল। এবার এর পরিমাণ ৩০০ হেক্টর ছাড়িয়ে গেছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বলেন, খানে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো পানির। কূপ খনন করে সেচ দিতে হয়। এ জন্য গভীর নলকূপ বসানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।