বালু তোলায় বাঁধ হুমকিতে

নদীর মাঝখান থেকে বালু উত্তোলনে যমুনার স্পার, বাঁধ, তীর সংরক্ষণ প্রকল্প, হাজার হাজার একর ফসলি জমি হুমকিতে পড়েছে।

বগুড়ার ধুনট উপজেলার ভান্ডারবাড়ি এলাকায় যমুনা নদী থেকে খননযন্ত্র দিয়ে অবৈধভাবে বালু তোলা হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার
ছবি : প্রথম আলো

বগুড়ার ধুনট উপজেলার শহড়াবাড়ি স্পার এলাকার প্রমত্তা যমুনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু তুলছেন সারিয়াকান্দি উপজেলার পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি কোরবান আলী। এতে ভাঙনের হুমকিতে পড়েছে উপজেলার শহড়াবাড়ি স্পার, তীর সংরক্ষণ প্রকল্প, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, জনবসতি ও জেগে ওঠা চরের আবাদ জমি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালে বগুড়ার ধুনট উপজেলার ভান্ডারবাড়ী ইউনিয়নের ভূতবাড়ি গ্রাম থেকে শহড়াবাড়ি গ্রাম পর্যন্ত তিন কিলোমিটার যমুনা নদী ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ভাঙন রোধে ডান তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের কাজ করা হয়েছে। বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) প্রায় ৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে এই কাজ করে। এ কারণে চার বছর ধরে যমুনা নদী ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে বড় ধরনের কোনো ভাঙন দেখা যায়নি।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, সারিয়াকান্দি পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি কোরবান আলী ও তাঁর অনুসারীরা এক সপ্তাহ ধরে বালু শহড়াবাড়ি গ্রামের কাছ থেকে খননযন্ত্র ও বাল্কহেড দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছেন। এতে বর্ষায় তাঁরা আবার ভাঙনের কবলে পড়তে পারেন।

সরেজমিন দেখা যায়, ধুনট উপজেলার প্রমত্তা যমুনা নদীর শহড়াবাড়ির স্পার ভেঙে অনেক আগেই দ্বিখণ্ডিত হয়েছে। স্পার থেকে বিচ্ছিন্ন কংক্রিট বেল মাউথ বা ঢাকনা রয়েছে নদীর মধ্যে। সেই স্থান থেকে পাঁচ দিন ধরে প্রতিদিন ১০ থেকে ২০টি খননযন্ত্র দিয়ে ৫০ থেকে ৬০ ফুট গভীর থেকে বালু উত্তোলন করে বাল্কহেড দিয়ে সারিয়াকান্দি এলাকায় নেওয়া হচ্ছে। সেখান থেকে প্রতি ট্রাক বালু ২ থেকে ৪ হাজার টাকা করে বিক্রি করা হচ্ছে।

স্থানীয় একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নদীর মাঝে খননযন্ত্র দিয়ে গভীর করে বালু উত্তোলন করায় যমুনার স্পার, বাঁধ, তীর সংরক্ষণ প্রকল্প, জেগে ওঠা চরের হাজার হাজার একর ফসলি জমি ভাঙনের শঙ্কায় পড়েছে। এতে যমুনার ভাঙন এলাকার কৃষক ফসলি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ছে। ক্ষতিগ্রস্তরা একাধিকবার অভিযোগ করেও প্রশাসনিকভাবে কোনো প্রতিকার পাচ্ছে না।

স্থানীয় ১০-১২ জন বাসিন্দা বলেন, কোরবান আলীর নেতৃত্বে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা যমুনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু তুলে নিয়ে যাচ্ছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে প্রশাসন কোনো অভিযোগ নেয় না এবং তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে না। উল্টো তাঁদের হুমকি দেওয়া হয়।

যমুনা নদীর ভাঙনের শিকার আটারচর গ্রামের আবুল কাশেম ও শহড়াবাড়ি গ্রামের কামাল হোসেন বলেন, ‘যমুনার ভাঙনের কবলে পইড়া এই জায়গায় ঘরবাড়ি করছি। কোনোমতে মাথাগোঁজার ঠাঁই হইছে। এভাবে বালু তোলা হলে আমাইগরে বাড়িঘর বসতভিটা আবারও হারাই যাবে।’

কোরবান আলী বলেন, ‘মাত্র কয়েক দিন ধরে সামান্য কিছু বালু তোলা হয়েছে। আপনি ঘটনাস্থল থেকে চলে যান। পরে আপনার সঙ্গে দেখা করে সাক্ষাতে কথা হবে।’ পরে তাঁর মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে ফোন ধরেননি।

পাউবো বগুড়া কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী আসাদুল হক বলেন, যমুনা নদী থেকে খননযন্ত্র ও বাল্কহেড দিয়ে বালু উত্তোলনের নিষেধ করা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ইউএনও সঞ্জয় কুমার মহন্ত পবলেন, যমুনা নদী থেকে বালু উত্তোলনের কোনো অনুমতি নেই। এর আগে কয়েকবার অভিযান চালিয়ে বালু উত্তোলনকারীদের জেল-জরিমানা করা হয়েছে। আবার বালু উত্তোলনের খবর পেয়েছেন। দ্রুতই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।