বাড়ির গৃহিণীরা বিকেলে হয়ে ওঠেন ব্যবসায়ী

রংপুর শহরে ছোট একটি ভ্রাম্যমাণ খাবার হোটেল চালাচ্ছেন রেহেনা বেগম। ছবিটি গতকাল সন্ধায় শহরের মুন্সিপাড়া মোড়ের কেরামতিয়া মসজিদের সামনে তোলা
ছবি: প্রথম আলো

সংসারে অভাব ছিল। ছিল কষ্ট। সেই কষ্ট কিছুটা দূর হয়েছে। বাড়ির গৃহিণীরা সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বাড়িতে ব্যস্ত থাকলেও বিকেলে হয়ে ওঠেন ব্যবসায়ী। পাড়ামহল্লার মোড়ে মোড়ে তাঁরা খাবারের ভ্রাম্যমাণ দোকান দিয়েছেন। এতে আয়-রোজগারও হয়। সেই সঙ্গে পরিবারে কিছুটা হলেও আর্থিক সচ্ছলতা ফেরাতে পারছেন তাঁরা।

গতকাল সোমবার সন্ধ্যা সাতটা। রংপুর শহরের মুন্সিপাড়া কেরামতিয়া মসজিদের মোড়। পাশেই নিউ ইঞ্জিনিয়ার পাড়ায় বাড়ি আদুরী বেগমের। তাঁর বয়স ৩৮। চা-বিস্কুট বিক্রি করছেন তিনি। বিক্রিও ভালো জানিয়ে আদুরী বললেন, সংসার চালাতে টাকা লাগে। একজনের সামান্য আয়ে চলে না। তার ওপর সন্তানের পড়াশোনা। তাই বাধ্য হয়ে সেখানে বেশ কয়েক দিন ধরে চা-বিস্কুট বিক্রি করছেন তিনি।

আদুরী বেগমসহ ওই মোড়ে ছয় নারী ভ্রাম্যমাণ দোকান দিয়ে মজাদার খাবার বিক্রি করছেন। কেউ চিতই পিঠা, কেউবা পেঁয়াজু, আবার কেউ শর্ষেবাটা দিয়ে চিতই পিঠা, ছোলা বিক্রি করছেন। তাঁরা সবাই গৃহিণী। প্রতিদিন ভোরে উঠে গৃহস্থালির কাজ করে তাঁদের দোকানের রেসিপি তৈরি করতে হয়। দুপুরের মধ্যে বাড়ির কাজ শেষ করে বিকেল হতেই দোকানে পসরা সাজিয়ে বসে পড়েন তাঁরা।

গতকাল সন্ধ্যায় সেখানে আধা ঘণ্টা অবস্থান করে দেখা গেছে, জমজমাট অবস্থা। চারদিকে ক্রেতাদের ভিড়। একটার পর একটা অর্ডার আসছে। সবাই দাঁড়িয়ে এসব খাবার খাচ্ছেন। ক্রেতারা তাঁদের কেউ মামি, কেউ আন্টি, আবার কেউ আপা বলে সম্বোধন করছেন। ক্রেতারা হাঁক পেড়ে বলছেন, ‘মামি, দুটো ছোলা বুট, চারটা পেঁয়াজু।’ আর বিক্রেতারা ক্লান্তিহীনভাবে ক্রেতাদের সন্তুষ্ট করে চলেছেন। খোলা জায়গা হলেও সেখানে গ্লাস পরিষ্কার করে পানিও পরিবেশন করা হচ্ছে বলে সরেজমিনে প্রত্যক্ষ করা গেল।

চা–কফির ভ্রাম্যমাণ দোকান চালাচ্ছেন আদুরী বেগম। গতকাল সোমবার সন্ধায় রংপুর নগরের মুন্সিপাড়া মোড়ের কেরামতিয়া জামে মসজিদের সামনে তোলা
ছবি: প্রথম আলো

ক্রেতাদের মধ্যে তরুণদের ভিড় বেশি। অধিকাংশ ক্রেতাই শিক্ষার্থী। রংপুর সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী নুরুন নবী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই এলাকার একটি আবাসিক মেসে থাকি। বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বন্ধুরা এখানে নাশতা করি। মজাদার এসব খাবার আমাদের ভালোই রাগে। দামও সস্তা।’

দোলাপাড়া এলাকার শাহিদা খাতুন (৫০) দীর্ঘদিন ধরে ওই মোড়ে ছোলা ও পেঁয়াজু বিক্রি করছেন। ৫ টাকা, ১০ টাকার ছোলা আর ৫ টাকার পেঁয়াজু বেশি বিক্রি হয়। সন্তানেরাও এসে কাজে হাত দেয়। রাত ১০টা পর্যন্ত ভিড় লেগেই থাকে বলে জানালেন তিনি।

মুন্সিপাড়া এলাকার বাসিন্দা মর্জিনা বেগম (৪০) শর্ষেবাটা ও শুঁটকিভর্তা দিয়ে চিতই পিঠা বিক্রি করছেন। তাঁর দোকানে অর্ডার দিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষাও করতে হয়। তিনি বলেন, ‘যে জিনিসের দাম বাড়ছে। তাতে সংসার চালানো কষ্ট হয়া গেইছে। বাড়িত বসি থাকার চায়া বিকেল থাকি এই ব্যবসা করিছি। বেচাবিক্রিও ভালো।’

এমন চিত্র দেখা গেছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পার্ক মোড়, সুলতানের মোড়, শহরের সাতমাথা, কেরানীপাড়া চারমাথাসহ আরও বেশ কিছু এলাকায়।