বিচ্ছিন্ন দ্বীপে জ্বলল বিদ্যুতের আলো

বিচ্ছিন্ন দ্বীপ রাঙ্গাবালীতে জ্বলছে বিদ্যুতের আলো । বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উপজেলার বাহেরচর বাজারে
ছবি: সংগৃহীত

বঙ্গোপসাগর মোহনায় জেগে ওঠা দ্বীপ রাঙ্গাবালী। পটুয়াখালীর উপজেলা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে আগেই। তবে বিচ্ছিন্ন এই দ্বীপে এত দিন পৌঁছায়নি বিদ্যুতের আলো। দ্বীপ উপজেলাটিতে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে তিনটি নদীতে সাবমেরিন কেব্‌ল (নদীর তলদেশ দিয়ে বিদ্যুতের তার) স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে।

বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সঞ্চালনের তার টানার কাজ শেষ পর্যায়ে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উপজেলা সদরের সরকারি দপ্তরসহ বাসাবাড়ি ও দোকানপাটে পরীক্ষামূলকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়েছে। বিচ্ছিন্ন দ্বীপ রাঙ্গাবালীতে জ্বলেছে বিদ্যুতের আলো।

পটুয়াখালী জেলা শহর থেকে ৪০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান রাঙ্গাবালীর। দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর, উত্তরে আগুনমুখা, পূর্বে বুড়াগৌরাঙ্গ ও পশ্চিমে রাবনাবাদ নদীবেষ্টিত। রাঙ্গাবালী উপজেলা হিসেবে ঘোষণা পায় ২০১২ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাঙ্গাবালী সদর ইউনিয়নের বাহেরচর এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। এর মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো জাতীয় গ্রিডে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে সাগর ও নদী দিয়ে ঘেরা এই উপজেলা।

পটুয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি বলেছে, জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করতে রাঙ্গাবালীর ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের গহিনখালীতে ১০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। ভোলার চরফ্যাশনের মুজিবনগর উপকেন্দ্র থেকে আমগাছিয়া বাজার হয়ে বুড়াগৌরাঙ্গ নদের দুই কিলোমিটার তলদেশ দিয়ে সাবমেরিন কেব্‌ল পৌঁছেছে গহিনখালী উপকেন্দ্রে। এ জন্য ২২ কিলোমিটার দীর্ঘ ৩৩ কেভির বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন টানা হয়েছে। রাঙ্গাবালী সদর, ছোটবাইশদিয়া, বড় বাইশদিয়া ও মৌডুবি ইউনিয়নে এক হাজার কিলোমিটার বিদ্যুৎ বিতরণ লাইনের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এই চারটি ইউনিয়নের ৮২টি গ্রামে প্রাথমিক পর্যায়ে ১৯ হাজার ৭৭ জন গ্রাহক বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছেন।

বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রের সামনে কর্মকর্তারা। বৃহস্পতিবার রাতে রাঙ্গাবালী উপজেলার গহিনখালী এলাকায়
ছবি: সংগৃহীত

সদর ইউনিয়নের বাহেরচর এলাকার বাসিন্দা ছাব্বির হোসেন (৩৫) বলেন, তাঁদের ঘরে কখনো বিদ্যুতের আলো জ্বলবে, তা কল্পনাও করতে পারেননি। বিদ্যুৎ পাওয়ায় উপজেলার মানুষের জীবনযাত্রার মানে পরিবর্তন আসবে বলে মনে করেন তিনি।
বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলা প্রশাসন কার্যালয় ও বাহেরচরের কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। এ পর্যন্ত দেড় হাজার গ্রাহককে বিদ্যুৎ–সংযোগ দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার সকালে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রেখে বিভিন্ন স্থানে নতুন সংযোগ দেওয়ার কাজ হয়। বিকেল পাঁচটা থেকে আবার বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়েছে।

পটুয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক শাহ্ মো. রাজ্জাকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, রাঙ্গাবালীতে ৩৩ কেভি বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইন ও বিদ্যুৎ বিতরণ লাইন টানার কাজ শেষ পর্যায়ে। ১২ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ উদ্বোধন হওয়ার কথা রয়েছে। চলতি মাসে রাঙ্গাবালীবাসী বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হবে বলে আশা করছেন তিনি।