বিদ্যালয়ের একটি কক্ষ ভাড়া দেওয়া হয়েছে ব্যাংকের জন্য
■ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ব্যাংক মাসিক চার হাজার টাকা ভাড়া পরিশোধ করে।
■ কয়েকজন শিক্ষার্থী বলছে, শ্রেণিকক্ষের পাশে ব্যাংক থাকায় পাঠদানে সমস্যা হয়।
পাশাপাশি দুটি ভবন। একটি বেশ পুরোনো, আরেকটি নতুন। পুরোনো ভবনের গায়ে একটি ব্যাংকের নাম লেখা। পাশেই চলছে পাঠদানও। এটি রাজশাহীর বাগমারার শেরকোল শিমলা উচ্চবিদ্যালয়ের চিত্র। কৌতূহল নিয়ে ভেতরে ঢুকে জানা গেল, বিদ্যালয়ের একটি বড় কক্ষ ভাড়া দেওয়া হয়েছে ব্যাংককে।
বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কক্ষটি ভাড়া দিয়ে লাভবান হলেও পড়াশোনার পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে। এ নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তবে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি, প্রতিষ্ঠানের সুবিধার জন্য একটি কক্ষ ভাড়া দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় লোকজন ও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, ২০০৬ সাল থেকে শেরকোল শিমলা উচ্চবিদ্যালয়ের একটি কক্ষ গ্রামীণ ব্যাংক সোনাডাঙ্গা শাখাকে ভাড়া দেওয়া হয়। ভাড়া নেওয়ার পর ব্যাংক কর্তৃপক্ষ লোহার গ্রিল দিয়ে বড় আকৃতির কক্ষটি ঘিরে নিয়ে তাঁদের কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। এ জন্য বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ব্যাংক মাসিক চার হাজার টাকা ভাড়া পরিশোধ করে।
এদিকে বিদ্যালয়ের কক্ষ সংকুলান না হওয়ার কারণে ২০১৫ সালে শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে আরেকটি ভবন নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে বিদ্যালয়ে ৩৭৯ জন শিক্ষার্থী আছে।
গত রোববার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, বিদ্যালয়ে উভয় প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম চলছে। ভবনের দেয়ালে বড় অক্ষরে ‘গ্রামীণ ব্যাংক, সোনাডাঙ্গা শাখা’ লেখা রয়েছে। গ্রামীণ ব্যাংকের অফিসকক্ষের পাশের কক্ষগুলোতে শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলছে। এ ছাড়া ব্যাংকে ঋণ
দেওয়াসহ বিভিন্ন দাপ্তরিক কার্যক্রম চলার দৃশ্য চোখে পড়ে। নারীরা ব্যাংকে এসে ঋণ কার্যক্রম সেরে চলে যাচ্ছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, তাদের শ্রেণিকক্ষের পাশে ব্যাংক থাকায় পাঠদানে সমস্যা হয়। স্থানীয় তিনজন অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম চলা বেমানান। আশপাশে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকায় বাধ্য হয়ে তাঁদের সন্তানদের এখানেই পড়াচ্ছেন।
এ বিষয়ে গ্রামীণ ব্যাংক সোনাডাঙ্গা শাখা ব্যবস্থাপকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাঁকে পাওয়া যায়নি। তবে দ্বিতীয় কর্মকর্তা জামিলুর রহমান বলেন, তাঁরা ভাড়াবাবদ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে মাসিক চার হাজার টাকা পরিশোধ করেন। দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়ের কক্ষটিতে তাঁদের ব্যাংকের কার্যক্রম চলছে বলে তিনি জানান।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ বলেন, এলাকার লোকজনের দাবি ও পরামর্শে একটি বড় কক্ষ ভাড়া দেওয়া হয়েছে। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ভাড়া নেওয়া কক্ষ ঘিরে নেওয়ায় শিক্ষার্থীদের সমস্যা হয় না। ভাড়ার টাকা বিদ্যালয়ের কাজে ব্যয় করা হয়।
জানতে চাইলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এস এম মাহমুদ হাসান বলেন, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এভাবে কক্ষ ভাড়া দিতে পারে না। তারা কেন ভাড়া দিয়েছে, তা জানতে চাওয়া হবে। পরবর্তী করণীয় বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।