বিদ্রোহী প্রার্থীর উদ্দেশে সাংসদ ওমর ফারুক— ‘তোমাকে বিড়াল বানিয়ে দেব’

রাজশাহীর তানোরের দরগাডাঙ্গা স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে বক্তৃতা করেন সাংসদ ওমর ফারুক চৌধুরী। বুধবার সন্ধ্যায়
ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহীর তানোর উপজেলার একটি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর উদ্দেশে স্থানীয় সাংসদ ওমর ফারুক চৌধুরী বলেছেন, ‘তুমি আওয়ামী লীগ করবা, আর বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত মানবা না, তুমি এত বড় বাঘের বাচ্চা হতেই পার না, তোমাকে আমরা বিড়াল বানিয়ে দেব।’

গতকাল বুধবার বিকেলে উপজেলার কলমা ইউনিয়নের দরগাডাঙ্গা স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সাংসদ এ কথা বলেন।

তানোর উপজেলার সাতটি ইউপির নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ১১ নভেম্বর। উপজেলার কলমা ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান মাইনুল ইসলাম স্বপন। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খাদেমুন নবী চৌধুরী। তাঁর প্রতীক চশমা।

বিদ্রোহী প্রার্থী খাদেমুন নবী চৌধুরীকে উদ্দেশ করে রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনের আওয়ামী লীগের সাংসদ ওমর ফারুক চৌধুরী আরও বলেন, ‘নির্বাচনের পরের দিন ১২ নভেম্বর নতুন সূর্য উঠবে। কিন্তু তোমার আকাশে সূর্য উঠবে না।’ অনুষ্ঠানে নৌকার প্রার্থী মাইনুল ইসলামও উপস্থিত ছিলেন।

আচরণবিধি লঙ্ঘন করে নির্বাচনী এলাকায় গিয়ে নৌকার প্রার্থীর জন্য ভোট চাওয়া এবং বিদ্রোহী প্রার্থীকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগে খাদেমুন নবী চৌধুরী আজ বৃহস্পতিবার সকালে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। সাংসদের বক্তব্যের ধারণ করা ভিডিও ক্লিপও রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে দেওয়া হয়েছে। পরে দুপুরে জেলা প্রশাসকের কাছেও একই অভিযোগ দিয়েছেন। সেই সঙ্গে সাংসদের হুমকিতে সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে নিরাপত্তা চেয়েছেন খাদেমুন নবী।

সাংসদের ওই বক্তব্যের ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়েছে।
বিদ্রোহী প্রার্থীকে ‘মিস্টার মোস্তাক’ ও ‘মিস্টার মীর জাফর’ সম্বোধন করে ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, ‘সেদিন বঙ্গবন্ধু বোঝেননি বলে আজ আমরা বুঝব না, তা হবে না। ১১ নভেম্বরের পরের দিন ১২ নভেম্বর হবে। সেদিন নতুন সূর্য উঠবে, কিন্তু তোমার আকাশে কোনো সূর্য উঠবে না।’

১১ নভেম্বরের পরের অবস্থা বোঝানোর জন্য সাংসদ ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, ‘১১ তারিখের পরে ওমর ফারুক চৌধুরী এমপি থাকবে নাকি থাকবে না?’ নেতা-কর্মীরা তখন চিৎকার করে বলেন, ‘থাকবে’। তিনি আবার বলেন, ‘১১ তারিখের পরে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকবে নাকি থাকবে না।’ নেতা-কর্মীরা আবার চিৎকার করে বলেন, ‘থাকবে।’ এরপর তিনি বিদ্রোহী প্রার্থীকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘তাহলে সেদিন তাঁর অবস্থা কী হবে?’

একপর্যায়ে ফারুক চৌধুরী বলেন, ‘মায়েরা লজ্জা-টজ্জা পাবেন না।’ লজ্জা পেলে মাটির দিকে তাকাতে হবে বলে তিনি একটি অশ্লীল চুটকি বলেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত বেশ কয়েকজন ভোটার বলেন, ‘অশ্লীল চুটকি বলার সময় সভায় উপস্থিত নারী নেতা-কর্মীরা বিব্রতবোধ করেন।’

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য গতকাল রাতে এবং আজ সকালে সাংসদ ওমর ফারুক চৌধুরীর মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার কল করা হয়। তবে তিনি কল ধরেননি।

কলমা ইউনিয়নে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে আছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামীমুল ইসলাম। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি একটি নির্বাচনী মিটিংয়ে আছেন। এ বিষয়ে অভিযোগ দিলে তিনি সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে পাঠিয়ে দেবেন।