বিনয় দেখিয়ে মাইক্রোবাসে তুলে ‘সব হাতিয়ে নেন’ তাঁরা

ঢাকা–চট্টগ্রাম–ফেনী মহাসড়কে যাত্রীবেশে ডাকাতিতে জড়িত অভিযোগে এই তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব
ছবি: সংগৃহীত

যাত্রীবেশে মাইক্রোবাসে থাকেন ডাকাত দলের সদস্যরা। পথে যাত্রীদের গাড়িতে তোলার জন্য ভদ্রভাবে কথা বলেন তাঁরা। সরল বিশ্বাসে কম টাকায় গন্তব্য পৌঁছানোর জন্য যাত্রীরা উঠে পড়েন। কিছু দূর যাওয়ার পর যাত্রীদের জিনিসপত্র নিয়ে নেয় ডাকাতেরা। কারও কাছে কিছু না থাকলে স্বজনদের কাছ থেকে বিকাশের মাধ্যমে নেওয়া হয় টাকা। ঢাকা–চট্টগ্রাম–ফেনী মহাসড়কে যাত্রীবেশে ডাকাত চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর র‍্যাব এসব তথ্য জানিয়েছে।

গ্রেপ্তার তিনজন হলেন সরোয়ার হোসেন, মো. রিপন ও তাছলিমা বেগম। সোমবার র‌্যাব বলেছে, আগের রাতে নগরের পাহাড়তলী থানার উত্তর কাট্টলী জালিয়াপাড়া থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের কাছ থেকে তিনটি অস্ত্র ও চারটি গুলি উদ্ধার করা হয়। এঁদের মধ্যে সরোয়ারের বিরুদ্ধে খুন, ডাকাতিসহ ১০টি মামলা রয়েছে।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার একই চক্রের ছয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করে নগর গোয়েন্দা ও পাহাড়তলী থানা–পুলিশ। তাঁদের একজন মিজানুর রহমানের স্ত্রী তাছলিমা বেগম।
যাত্রীবেশে মাইক্রোবাসে ডাকাত দলের হাতে নিহত প্রবাসী মো. হোসেনের মামলাটি তদন্ত করতে গিয়ে চক্রটির সন্ধান পায় র‍্যাব–পুলিশ। গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর বিকেলে চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জ এলাকায় যাওয়ার জন্য নগরের অলংকার মোড় বাসস্ট্যান্ডে অপেক্ষা করছিলেন দুবাইপ্রবাসী মো. হোসেন। ওই সময় একটি মাইক্রোবাস তাঁকে ১০০ টাকায় গন্তব্যে পৌঁছে দেবে বলে জানান। চার যাত্রী দেখতে পেয়ে হোসেন ওই টাকায় মাইক্রোবাসে ওঠেন। কিছু দূর পথ যাওয়ার পর মাইক্রোবাসে থাকা চার যাত্রী হাতুড়ি ও স্ক্রু ড্রাইভার দিয়ে তাঁর ওপর হামলা করেন। এ সময় তাঁর কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা, ২টি সোনার আংটি, মুঠোফোন ও পাসপোর্ট ছিনিয়ে নেন তাঁরা। আহত হোসেনকে চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়কে ঘুরিয়ে কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম থানার উত্তর বেতিয়ারা নামের একটি জায়গায় ফেলে দেওয়া হয়। পরে স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে কুমিল্লা হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে আনা হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কালজ হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন হোসেনের মৃত্যু হয়।

র‍্যাব–৭ চট্টগ্রামের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এম এ ইউসুফ সাংবাদিকদের বলেন, গ্রেপ্তার ডাকাত দলের সদস্যরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে, রাস্তায় যাত্রীদের ওঠানোর জন্য যা যা করা দরকার, তাঁরা সবই করেন। তাঁদের ভদ্র ব্যবহার দেখে কম টাকায় গন্তব্য পৌঁছানোর জন্য যাত্রীরা উঠে যান। কিছু দূর যাওয়ার পর ডাকাত দলের একজন বলেন, তিনি সামনে নামবেন তখন দলের দুজন সামনের সিটে চলে আসেন। যাত্রীকে মাঝখানের সিটে বসান। এরপর ভয়ভীতি দেখিয়ে ওই যাত্রীর জিনিসপত্র নিয়ে নেন। স্বজনদের কাছ থেকে বিকাশে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্তও নেওয়া হয়। কাজ শেষ হওয়ার পর কুমিল্লার কোনো জায়গায় যাত্রীকে ফেলে দেওয়া হয়। এর আগে যাত্রীদের চোখে বিশেষ মলম লাগিয়ে দেন তাঁরা। যাতে ভুক্তভোগী ডাকাতদের গাড়ির নম্বর দেখতে না পারেন।