বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ার খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় এনামুল

এনামুল হক

শৈশব থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ইচ্ছা ছিল রংপুরের তারাগঞ্জের এনামুল হকের। সে অনুযায়ী তিনি প্রস্তুতিও নেন। অবশেষে তাঁর পালে সাফল্য এসে ধরা দিয়েছে। তিনি সুযোগ পেয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখাপড়ার খরচ চালানো নিয়ে দুশ্চিন্তার আছেন তিনি।

এলাকার জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক ও কয়েকজন গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলা সদর থেকে ছয় কিলোমিটার দূরে ইকরচালী ইউনিয়নের মেনানগর গ্রামে এনামুল হকের বাড়ি। তাঁরা সাত ভাইবোন। পাঁচজনই লেখাপড়া করেন। বাবার ৪০ শতক আবাদি জমির চাষে নয় সদস্যের সংসারে ভাত-ভর্তা ঠিকমতো জুটত না।

অনেক দিন না খেয়ে স্কুল-কলেজে যেতে হয়েছে তাঁকে। এই অভাবের মধ্যেও এনামুল ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। সেই স্বপ্নপূরণের জন্য নিজের পড়ার খরচ জোগাতে গ্রামের শিশুদের পড়িয়ে ২০১৮ সালে ইকরচালী উচ্চবিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসিতে জিপিএ ৪ দশমিক ৭৮ ও ২০২০ সালে পাগলাপীর স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগে অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। বাড়িতে পড়ে কোচিং ছাড়াই এবার তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ক’ ইউনিটে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। ভর্তির সুযোগে তাঁর মুখে হাসি ফুটলেও লেখাপড়ার খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তিনি।

এনামুল হক বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েও টাকার অভাবে ভর্তি হতে পারছিলেন না। পরে যে শিক্ষার্থীদের তিনি পড়াতেন, তাঁদের অভিভাবকেরা চাঁদা তুলে তাঁকে ঢাকায় ভর্তির জন্য পাঠান। সেই টাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগে ভর্তি হন তিনি।

এনামুল হক আরও বলেন, ‘বাবার সামর্থ্য নেই আমার পড়ার খরচ চালানোর। যাদের পড়াতাম তাদের অভিভাবকদের সহযোগিতায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি। ভর্তি হয়েই এখন বিপদে পড়লাম। পড়াশোনা, খাওয়ার টাকা এখন কোথায় পাব। কীভাবে চলব, কিছু বুঝে উঠতে পারছি না।’

এনামুলের মা বেবী বেগম বলেন, ‘অভাবের জন্য ছেলেটাক স্কুল-কলেজ যাওয়ার কোনো টাকা কোনো দিন হাতোত দিবার পাও নাই। মাইনষের ছাওয়াগুলাক পড়েয়া ওয় বই-খাতা, কলম কিনছে। ছাওয়াটা কইছে লেখাপড়া শেষ করি বড় অফিসার হয়া হামার অভাব দূর করবে। কিন্তু ওক তো ঢাকাত পড়ার খরচ হামরা দিবার পাবার নেই। তাইলে ওয় কেমন করি অফিসার হইবে।’