বুধবারের ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত চাইলেন মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ

বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর সংবাদ সম্মেলন। শনিবার সন্ধ্যায় বরিশাল নগরের কালীবাড়ি সড়কে সেরনিয়াবাত ভবনে
প্রথম আলো

বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ে গত বুধবার রাতের অপ্রীতিকর ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়েছেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। একই সঙ্গে ওই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশেরও দাবি জানিয়েছেন তিনি। আজ শনিবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে নগরের কালীবাড়ি সড়কের সেরনিয়াবাত ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানান মেয়র। তবে সংবাদ সম্মেলনে তিনি কথা বলেছেন অল্প সময়।

সংবাদ সম্মেলনে মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের কাজে যোগ দেওয়ারও নির্দেশ দেন। এ জন্য পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও হয়রানি না করার জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

এ সময় মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ আরও বলেন, আগের মেয়রদের বিরুদ্ধে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মানববন্ধন করতেন। কিন্তু এবার কর্মকর্তা-কর্মচারী ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা মেয়রের জন্য মানববন্ধন করলেন। তিনি বলেন, গত তিন দিন পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা গ্রেপ্তার ও হয়রানির আতঙ্কে কাজে যোগ দেননি। এ সময় তিনি প্রশাসনের প্রতি পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের হয়রানি ও গ্রেপ্তার না করার জন্য আহ্বান জানান।

সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমার দলীয় অনেক নেতা-কর্মীকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমাকে যদি গ্রেপ্তারের প্রয়োজন হয়, তাহলে আয়োজন করে বাড়ি ঘেরাও দিয়ে গ্রেপ্তারের প্রয়োজন নেই। নিজেই স্বেচ্ছায় চলে যাব।’ সাদিক আবদুল্লাহ বলেন, ‘তিন বছর ধরে আমি সরকারি অনুদান পাই না। এটা আমি সাংবাদিকদের আগেই জানিয়েছিলাম, এর পেছনে গভীর চক্রান্ত আছে। বুধবারের ঘটনার মধ্য দিয়ে তা প্রমাণ হলো।’

সংবাদ সম্মেলনে মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমাকে যদি গ্রেপ্তারের প্রয়োজন হয়, তাহলে আয়োজন করে বাড়ি ঘেরাও দিয়ে গ্রেপ্তারের প্রয়োজন নেই। নিজেই স্বেচ্ছায় চলে যাব।’

পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের কাজে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে সাদিক আবদুল্লাহ বলেন, ‌‘বরিশালের জনগণের দুর্ভোগের সমাপ্তি হোক। তারা কোনো দোষ করেনি। তাই নাগরিক সেবার ধারাবাহিকতা রক্ষায় সিটি করপোরেশনের কর্মীদের কাজে ফিরে যেতে অনুরোধ জানাচ্ছি।’

যাঁরা মেয়েরের পক্ষে রাস্তায় নেমেছেন, তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন,‌ ‘যাঁরা আমার জন্য রাস্তায় নেমেছেন, প্রতিবাদ করেছেন, তাঁদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। তবে বরিশালের সাধারণ মানুষ যেন কোনো ভোগান্তিতে না পড়ে, আমি সবার কাছে সেই অনুরোধ রাখছি। সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের কাছে আমার আহ্বান, আপনারা কাজে ফিরে যান।’

দলীয় নেতা-কর্মীদের দুর্দশার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমার আহত নেতা-কর্মীরা চিকিৎসা পাচ্ছেন না। দুজন আহত কর্মী চোখ হারিয়েছেন। অনেকের বাড়ি বাড়ি পুলিশ যাচ্ছে। আমি প্রশাসনকে অনুরোধ করছি, দয়া করে আপনারা দলীয় নেতা-কর্মীদের হয়রানি করা বন্ধ করুন।’

মেয়র প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘আমরা কার বিরুদ্ধে দাঁড়াব? ক্ষমতায় আমার দল। এখানে আমি কঠিন হলে সেটা সরকারের ওপরে যাবে, দলের বদনাম হবে। বরিশাল শান্তির শহর। আমি শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান চাই। নাগরিকেরা ভালো থাকুক, এটাই চাই। এই কাজে ব্যর্থ হলে আমি রিজাইন দিয়ে চলে যাব।’

এ সময় মেয়র বুধবার রাতের ঘটনার পুরো সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ এবং ওই ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেন। সংবাদ সম্মেলনে সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নাইমুল হোসেন ছাড়াও বিভিন্ন উপজেলার চেয়ারম্যান ও পৌর মেয়ররা উপস্থিত ছিলেন।

বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদ কম্পাউন্ডে বুধবার রাতে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনার পর মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ নগরের কালীবাড়ি সড়কের নিজ বাড়িতেই (সেরনিয়াবাত ভবনে) অবস্থান করছেন। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত বিপুলসংখ্যক র‍্যাব, পুলিশ তাঁর বাড়ির সামনে অবস্থান নেয়। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সরে যান।