বেপরোয়া গতি, ঝরছে প্রাণ

সড়কের তারাকান্দা উপজেলার অংশে বপরোয়া গতিতে ট্রাক ও অটোরিকশা চলাচল করায় দুর্ঘটনা ঘটছে

ময়মনসিংহ-নেত্রকোনা সড়কে ট্রাক ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা বেপরোয়া গতিতে চলাচল করে। গতকাল দুপুরে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার স্বপ্নার মোড় এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

ময়মনসিংহ-নেত্রকোনা সড়কের তারাকান্দা উপজেলার আনুমানিক ৮ কিলোমিটার অংশে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত এ অংশে মোট পাঁচটি দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ১৪ জন। ট্রাক ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা বেপরোয়া গতিতে চলাচল করায় এই অংশে দুর্ঘটনা ঘটছে বলে স্থানীয় ব্যক্তিরা জানিয়েছেন। এতে এ অংশ দিয়ে চলাচলের সময় যাত্রীরা আতঙ্কে থাকেন।

তারাকান্দা থানার পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কয়েক বছর ধরেই তারাকান্দা উপজেলার গাছতলা বাজার থেকে খিচা এলাকা পর্যন্ত সড়কে প্রায়ই ঘটছে ট্রাক আর সিএনজিচালিত অটোরিকশার মধ্যে দুর্ঘটনা। দুটি যানের বেপরোয়া গতির কারণে বেশি দুর্ঘটনা ঘটছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুর উপজেলার সোমেশ্বরী নদী থেকে বালু পরিবহনের জন্য প্রতিদিন সড়কটি দিয়ে ৫০০–এর বেশি ট্রাক চলাচল করে। এ ছাড়া এ সড়ক দিয়ে ময়মনসিংহ–নেত্রকোনা সড়কে প্রতিদিন কয়েক শ সিএনজিচালিত অটোরকিশা চলে। ট্রাকগুলো খালি অবস্থায় যাওয়ার সময় বেপরোয়া গতিতে চলে। আবার বালুবোঝাই করে যাওয়ার সময় থাকে অতিরিক্ত ভারী। এ কারণে সড়ক দিয়ে চলার সময় ট্রাকগুলোর নিয়ন্ত্রণ থাকে না। আর অটোরিকশাগুলো বেপরোয়া গতিতে চলায় নিয়ন্ত্রণ থাকে না। এতে প্রায়ই এই অংশে দুর্ঘটনা ঘটে।

তারাকান্দা থানার পুলিশ সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের চার মাসে মোট পাঁচটি দুর্ঘটনা ঘটে। পাঁচটির মধ্যে চারটি দুর্ঘটনাই ট্রাক ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা মধ্যে সংঘর্ষের কারণে ঘটেছে। চারটি দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ১৩ জন। অন্য একটি দুর্ঘটনা বাস ও অটোরিকশার সংঘর্ষের কারণে ঘটেছে। ওই দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ১ জন। সর্বশেষ গত ২৮ এপ্রিল এ সড়কের তারাকান্দা উপজেলার খিচা এলাকায় ট্রাক ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই তিনজন মারা যান।

সম্প্রতি নেত্রকোনা-ময়মনসিংহ সড়কে গাছতলা এলাকায় গিয়ে স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলেও জানা যায়, ওই সড়কে ট্রাক ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা বেপরোয়া গতিতে চলার কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনা হয়।

এ বিষয়ে গাছতলা এলাকায় আনিছ মিয়া নামের একজন অটোরিকশার চালক বলেন, ‘সড়কে চলার সময় আমরা সাবধান থাকি। তারপরও অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটে।’ বেপরোয়া গতিতে অটোরিকশা চালানোর কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, সবাই বেশি গতিতে চালায়। এ কারণে তিনিও সেভাবে গাড়ি চালান।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ট্রাকচালক বলেন, ট্রাকের চালকদের সব সময়ই দুর্ঘটনা এড়িয়ে সাবধানে চালাতে চায়। কিন্তু সড়কটি দিয়ে সারা দিন প্রায় এক হাজার ট্রাক চলে। এ কারণে মাঝেমধ্যে দুর্ঘটনা ঘটে যায়।

সরেজমিন দেখা যায়, সড়কটির কোনো স্থানে গাড়ি নিয়ন্ত্রিত গতিতে চালানোর জন্য সাইনবোর্ড বা সতর্কতা সংকেত নেই। স্থানীয় ব্যক্তিদের দাবি, যেসব এলাকায় বেশি দুর্ঘটনা হয়, সেসব এলাকায় দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করে সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড দেওয়া উচিত। এতে দুর্ঘটনা কিছুটা হলেও কমতে পারে।

তারাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল খায়ের বলেন, পুলিশের পক্ষ থেকে দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণের জন্য মাঝেমধ্যে চালকদের বৈধতা যাচাই করা হয়। এ ছাড়া চালকদের সচেতনও করা হয়।