বেড়িবাঁধ ছুঁই ছুঁই পানি, আতঙ্কে পাথরঘাটার ১৬ গ্রামের মানুষ

বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার পদ্মা বেড়িবাঁধের সংস্কারকৃত অংশ দিয়েও জোয়ারের পানি উপচে পড়ছে। ভেতর দিয়ে চুপসে লোকালয়ে ঢুকছে পানি। এতে যেকোনো সময় বিলীন হয়ে যেতে পারে বাঁধটি। মঙ্গলবার দুপুরেপ্রথম আলো

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে বরগুনার পাথরঘাটার সাড়ে ২৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধে পানি ছুঁই ছুঁই করছে। যেকোনো সময় ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে ও পূর্ণিমার জোয়ারের তোড়ে বেড়িবাঁধ উপচে ও ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়তে পারে। এতে জিনতলা, পদ্মা, রূহিতা, তাফালবাড়িয়া, পরিঘাটাসহ ওই বেড়িবাঁধ এলাকায় ১৬ গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ আতঙ্কে রয়েছে।

বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) পাথরঘাটায় পানি পরিমাপের দায়িত্বে থাকা খায়রুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, পাথরঘাটার বলেশ্বর ও বিষখালী নদীতে আজ মঙ্গলবার বিপৎসীমার ১০৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে জোয়ারের পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

বিষখালী ও বলেশ্বর–তীরের ওই ১৬ গ্রামের মধ্যে ৬টি গ্রাম পাথরঘাটা সদর ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত। জানতে চাইলে পাথরঘাটা সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আসাদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বছরের পর বছর ধরে বিষখালী ও বলেশ্বর–তীরের মানুষ জোয়ারের পানিতে নাকানিচুবানি খাচ্ছে। কিন্তু এ বেড়িবাঁধ নির্মাণের নামে কিছুই হচ্ছে না। এতে ওই সব মানুষের মতো আমাদেরও আতঙ্কে রাত কাটাতে হয়। কখন কী জানি হয়।’

বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার পদ্মা বেড়িবাঁধের সংস্কারকৃত অংশ দিয়েও জোয়ারের পানি উপচে পড়ছে। ভেতর দিয়ে চুপসে লোকালয়ে ঢুকছে পানি। মঙ্গলবার দুপুরে
প্রথম আলো

চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আরও বলেন, বিপৎসীমার ১০৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় ওই এলাকার কয়েক হাজার মানুষ আতঙ্কে রয়েছে। তা ছাড়া তাদের বাড়িঘর ও লোকালয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে পড়ায় রান্নাবান্না বন্ধ রয়েছে। অনেকে জোয়ারের পানি নেমে গেলে বিকেলে রান্নাবান্নার প্রস্তুতি নেন। এ বেড়িবাঁধের কারণে তাঁদের ভোগান্তির যেন শেষ নেই।

মঙ্গলবার সকাল থেকে পদ্মা বেড়িবাঁধ উপচে পড়ে ও বেড়িবাঁধের মাটিধসে লোকালয় পানি ঢুকছে। ওই এলাকার বাসিন্দা আবদুল মালেক ও কালু মাঝি দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সকালে ফজরের নামাজের পর বেড়িবাঁধের সামনে এসে দেখি, বেড়িবাঁধ উপচে জোয়ারের পানি লোকালয়ে ঢুকছে। একই সঙ্গে বেড়িবাঁধ ভেঙে চারটি পয়েন্ট দিয়ে জোয়ারের পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়ায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সবার একটাই দাবি, দ্রুত বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হোক।’

পদ্মা বেড়িবাঁধ ভাঙন এলাকার বাসিন্দা আছিয়া বেগম ও জয়ফুল বিবি এবং পাথরঘাটা পৌর এলাকার ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা নাসিমা বেগম ও শেফালী বেগম বলেন, মঙ্গলবার সকাল থেকে জোয়ারের পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়েছে। এতে তাঁদের বাড়িঘর তলিয়ে গেছে। দুপুরের ছেলেমেয়েরা কিছু খায়নি। বিকেলে ভাটার টানে পানি কমে এলে তবে রান্নাবান্না শুরু হবে।

বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার পদ্মা বেড়িবাঁধের এ অংশে মেরামতের উদ্যোগ নেই। যেকোনো সময় বিলীন হয়ে লোকালয়ে ঢুকে পড়তে পারে জোয়ারের পানি। মঙ্গলবার দুপুরে
প্রথম আলো

পাথরঘাটা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পাথরঘাটা উপজেলায় ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রস্তুতি হিসেবে ১২৪টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এরই মধ্যে কাকচিড়া মাঝের চরের ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে মঙ্গলবার দুপুরে আড়াই শ মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।

বরগুনা পাউবো উপসহকারী প্রকৌশলী খলিলুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, এসব বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো আছে। তবে বর্তমানে যেসব বেড়িবাঁধ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ, সেসব জায়গায় জরুরি ভিত্তিতে কাজ চলছে।

এ ব্যাপারে পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাবরিনা সুলতানা প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইতিমধ্যেই পাথরঘাটা ১২৪টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রেখেছি। নদীর তীরবর্তী মানুষকে আগেভাগে আশ্রয়কেন্দ্রে আসার জন্য প্রচার চালাচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবককর্মীরা। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে এলেই তাদের শুকনা খাবারের ব্যবস্থাও করা হচ্ছে।’