ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ঝুঁকি নিয়ে চলছে স্পিডবোট

করোনা মহামারির প্রকোপ ঠেকাতে গণপরিবহণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচল করতে বলেছে সরকার। কিন্তু এ বিধি উপেক্ষা করে যাত্রীরা স্পিডবোটে চলাচল করছে। শনিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার নবীনগর পৌর এলাকার তিতাস নদীর তীরে স্পিডবোট ঘাটেছবি: প্রথম আলো

করোনা মহামারির প্রকোপ ঠেকাতে জনসমাগমের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে সরকার। স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য চালানো হচ্ছে প্রচার। কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া নবীনগর উপজেলা থেকে জেলা শহর ও কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলায় স্পিডবোটে যাত্রীরা যাতায়াত করছেন। এ ছাড়া কোনো নিরাপত্তা সরঞ্জাম না থাকায় যাত্রীরা ঝুঁকি নিয়ে এসব স্পিডবোটে চলাচল করছেন।

নবীনগর উপজেলার পৌর এলাকার তিতাস নদীর তীরে স্পিডবোট ঘাট। এই ঘাট থেকে যাত্রীরা নবীনগর– ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও নবীনগর–ভৈরব নৌপথে চলাচল করেন। বর্তমানে এসব নৌপথে প্রতিদিন গড়ে ২০ থেকে ২২টি স্পিডবোট চলাচল করে।

স্পিডবোট ঘাট ও স্থানীয় সূত্রে আরও জানা গেছে, নবীনগর উপজেলা থেকে কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলা মধ্যে চলাচলকারী স্পিডবোটে ১২ জন যাত্রী ওঠেন। নবীনগর থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার গোকর্ণ ঘাট বা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ঘাট পর্যন্ত চলাচলকারী স্পিডবোটে ৮ থেকে ১০ জন যাত্রী ওঠেন। যাত্রীদের মাথাপিছু ভাড়া ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। কয়েক মাস আগেও নবীনগর থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার গোকর্ণ ঘাট পর্যন্ত মাথাপিছু স্পিডবোট ভাড়া ছিল ১৭০ টাকা। এখন তা বাড়িয়ে ২০০ টাকা করা হয়েছে।

করোনা মহামারির প্রকোপ ঠেকাতে জনসমাগমের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে সরকার। কিন্তু এই বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে স্পিডবোটে উঠার জন্য অপেক্ষা করছে যাত্রীরা
ছবি: প্রথম আলো

শনিবার দুপুর ১২টা থেকে বিকেল পৌনে ৪টা পর্যন্ত স্পিডবোটের ঘাটে অবস্থান করে দেখা গেছে, ঘাটে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা এবং ভৈরবের যাত্রীরা আলাদা স্থানে বসেন। নবীনগর স্পিডবোট ঘাটের কার্যালয়ে একটি হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখা হয়েছে। তবে অন্তত চার ঘণ্টা দাঁড়িয়ে কোনো যাত্রীকেই স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে দেখা যায়নি। তবে পৃথক জায়গায় ঘাটের সিঁড়ি–সংলগ্ন একটি চায়ের দোকানে বসা ভৈরবের যাত্রীদের জন্য কোনো হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখতে দেখা যায়নি। এমনকি স্পিডবোট ঘাট নিয়ন্ত্রণকারী ব্যক্তি বা স্পিডবোটচালকদের কাউকেই সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাচল বা স্যানিটাইজার ব্যবহার করার কথা বলতেও দেখা যায়নি। মাঝেমধ্যে এক–দুজন মাস্ক ব্যবহার করেছেন।

দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে ১০ থেকে ১২টি স্পিডবোট জেলা ও ভৈরবের উদ্দেশে যাত্রীদের নিয়ে যেতে দেখা গেছে। যাত্রীদের অধিকাংশই মাস্ক ব্যবহার করছেন না। চালকদের কাউকেই মাস্ক ব্যবহার করতে দেখা যায়নি। স্পিডবোটে যাত্রীরা একজন আরকজনের সঙ্গে গাদাগাদি করে বসছেন।

ব্যবসায়ের কাজে কিশোরগঞ্জের ভৈরব যেতে স্পিডবোট ঘাটে যান লোকমান হোসেন ও জাহাঙ্গীর আলম। তাঁদের মাস্ক ব্যবহার করতে দেখা যায়নি। মাস্ক ব্যবহার করছেন না কেন, জিজ্ঞেস করলে তাঁরা বলেন, ‘পকেটে মাস্ক আছে। রোদের তাপ অনেক বেশি। গরমে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। তাই মাস্ক পকেটে রেখেছি।’

ভৈরব যেতে কোলের শিশুসন্তানকে নিয়ে ঘাটে আসা আয়েশা বেগম বলেন, ‘করোনার এই সময়ে এভাবে যাতায়াতটা ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু জরুরি কাজে ভৈরব যেতেই হবে। তাই কিছুটা ঝুঁকি নিয়েই যাতায়াত করছি।’

স্পিডবোটচালকেরা যাত্রীদের লাইফ জ্যাকেট সরবরাহ করেন না। স্পিডবোটে বয়াও রাখা হয় না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নবীনগর উপজেলার কয়েকজন বলেন, স্পিডবোটচালকেরা যাত্রীদের লাইফ জ্যাকেট সরবরাহ করেন না। স্পিডবোটে বয়াও রাখা হয় না। নদীতে চলাচলের সময় যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য এসব সরঞ্জাম নৌযানে রাখা জরুরি।  

স্পিডবোটের মালিক বিল্লাল মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, এক মাস ১০ দিন স্পিডবোট চলাচল বন্ধ ছিল। এখন আবার স্পিডবোট চলাচল করছে। ঘাটের অফিসে হেক্সাসল, মাস্ক ও স্পিডবোটে দুটি করে হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখতে বলা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘আমার অধীনে ৮-১০ জন চালক রয়েছেন। সীমিত আকারে স্পিডবোট চলাচল করায় অনেক সময় আমি টাকা পাই না। কারণ, নবীনগর থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পর্যন্ত একটি স্পিডবোটে আসা-যাওয়া বাবদ ২০-২২ লিটার এবং নবীনগর থেকে ভৈরবে আসা-যাওয়া বাবদ গড়ে ২৫-৩০ লিটার পেট্রল লাগে। এতে পেট্রল কিনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়।’

করোনা মহামারির প্রকোপ ঠেকাতে গণপরিবহণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচল করতে বলেছে সরকার। কিন্তু এ বিধি উপেক্ষা করে যাত্রীরা স্পিডবোটে চলাচল করছে। শনিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার নবীনগর পৌর এলাকার তিতাস নদীর তীরে স্পিডবোট ঘাটে
ছবি: প্রথম আলো

নবীনগর স্পিডবোট ঘাটের সুপারভাইজার রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্পিডবোটের আয় দিয়েই চালক ও মালিকদের সংসার চলে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমরা যাত্রীদের স্পিডবোটে তুলছি।’

নবীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) একরামুল সিদ্দিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘করোনার কারণে লকডাউন চলায় জরুরি প্রয়োজন ছাড়া স্পিডবোট চলাচলের অনুমতি ছিল না। শুধু জরুরি ভিত্তিতে স্পিডবোট চলাচল করতে পারবে বলে অনুমতি ছিল। সোমবার থেকে গণপরিবহন চলাচল শুরু হলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্পিডবোট চলাচল করতে পারবে। আমরা বিষয়টি পর্যবেক্ষণে রাখব। রোববার চালক ও স্পিডবোটের মালিকদের আমার কার্যালয়ে ডেকে স্বাস্থ্যবিধি পালন করতে বলেছি।’