ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বইমেলায় পুতুলনাচে মুগ্ধ দর্শনার্থীরা

রয়েল বীনা নামের দলের পুতুলনাচ প্রদর্শন। শুক্রবার রাত পৌনে আটটার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শহীদ ধীরেন্দ্র নাথ দত্ত ভাষা চত্বরে আয়োজিত বইমেলায়
ছবি: প্রথম আলো

অভাবের সংসার। পুতুল বনমালী তাই গাছ কাটতে জঙ্গলের উদ্দেশে রওনা হয়। তার সঙ্গে সুরে সুরে কথোপকথন শুরু হয় হাবিবুর রহমানের। বনমালীকে আটকালেন তিনি। বললেন, গাছ কাটা ভালো না। সরকার নিষেধ করছে। ‘গাছ কাটন’ আইনে নিষেধ; কিন্তু পুতুল বনমালী গাছ কাটতে যাবেই। তখন হাবিবুর গান ধরলেন , ‘যাইও না তুমি, যাইও না, তুমি জঙ্গলে যাইও না। জঙ্গলের ভেতরে বাঘ আইতাছে, বাঘ তোমারে লইয়া যাইব।’

শুক্রবার (৩১ ডিসেম্বর) রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া বইমেলায় দেখা গেলে পুতুলনাচের এমন দৃশ্য। বৃহস্পতিবার থেকে শহরের শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষা চত্বরে শুরু হয়েছে চার দিনব্যাপী বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতা বইমেলা। চলবে রোববার পর্যন্ত। শুক্রবার মেলার দ্বিতীয় দিনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে এই পুতুলনাচ প্রদর্শন করা হয়।

শুক্রবার সন্ধ্যা সাতটা থেকে জেলার মেড্ডার এলাকার রয়েল বীনা নামে পুতুলনাচের দলের প্রধান হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে মেলায় পুতুলনাচ প্রদর্শন করা হয়। হাবিবুর রহমানের সঙ্গে মঞ্চে তবলা ও কাঁসা নিয়ে আরও দুজন উপস্থিত হন। গ্রামবাংলার বিভিন্ন গান গেয়ে হাবিবুর রহমান পুতুলনাচ প্রদর্শন করেন।

শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে সরেজমিন দেখা গেছে, মাঠজুড়ে দর্শক মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে পুতুলনাচ দেখছেন এবং উপভোগ করছেন। সবাইকে একদৃষ্টিতে তা উপভোগ করতে দেখা গেছে। হাবিবুর রহমান গাছ কাটা, করোনার সময়ে মাস্ক ব্যবহার ও বারবার হাত পরিষ্কার রাখার ওপর পুতুলনাচ প্রদর্শন করেন। তাঁর গানে নদী, নৌকা, গ্রামীণ জনপথের বর্ণনা উঠে আসে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া শিল্পকলা একাডেমি উদ্যোগ নিয়ে মেলায় পুতুলনাচ প্রদর্শন করছে। সার্বিক সহযোগিতা করছে জেলা প্রশাসন। শিল্পকলা পুতুলনাচের জন্য তিনটি দলকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। হাবিবুর রহমানের রয়েল বীনা দল, খেলু মিয়ার বানী বীনা দল ও চম্পা বেগমের ঝুমুর বীনা দল। প্রথম দিন হাবিবুর রহমানের রয়েল বীনা, শনি ও রোববার খেলু মিয়া ও চম্পা বেগমের দল পুতুলনাচ প্রদর্শন করবে।

শহরের শিমরাইলকান্দি এলাকার বাসিন্দা আইনজীবী তারেকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সন্ধ্যায় হাঁটতে বের হয়েছি। পুরোনো কাচারি পুকুরপাড় এলাকায় এলে মাইকে গ্রামীণ বাংলার গান শুনতে পাই। আগ্রহী হয়ে মেলায় এসে পুতুলনাচ চলছে দেখি। অনেক দিন পর পুতুলনাচ দেখলাম। ভালো লাগছে।’

মাঠজুড়ে দর্শক মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে পুতুলনাচ দেখছেন এবং উপভোগ করছেন
ছবি: প্রথম আলো

ব্রাহ্মণবাড়িয়া শিল্পকলা একাডেমির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এস আর এম ওসমান গণি প্রথম আলোকে বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, তথা বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যই হলো এই পুতুলনাচ। কালের বিবর্তনে এটি আজ হারাতে বসেছে। সরকারের প্রচেষ্টায় তাঁরা আবার পুতুলনাচকে পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করছেন। দীর্ঘদিন পর পুতুলনাচের আয়োজন করা হয়েছে।