ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মাদকসেবীর এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাতে রাজীব পাল (৩২) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। এ সময় রাশেদ খান (৩০) নামে আরেক যুবক গুরুতর আহত হয়েছেন। রোববার রাত আটটার দিকে জেলা শহরের কাজীপাড়া ধোপাবাড়ির মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
রাজীব পাল ঢাকা নায়ায়ণগঞ্জের কেসি পালের ছেলে। গুরুতর আহত রাশেদ জেলা শহরের ভাদুঘর এলাকার কুতুব আলীর ছেলে। তাঁরা দুজনেই ৮-৯ মাস ধরে জেলার সদর উপজেলার প্রয়াস মাদক নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসা শেষে সহযোগী হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
স্থানীয় লোকজন, প্রয়াস মাদক নিরাময় কেন্দ্র ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, জেলা শহরের কাজীপাড়া এলাকার শানু মিয়ার ছেলে রনি মিয়া (৩০) দীর্ঘদিন ধরে মাদকাসক্ত। পরিবারের লোকজন এক বছর আগে রনিকে চিকিৎসার জন্য প্রয়াস মাদক নিরাময় কেন্দ্রে পাঠান। তখন রনি ওই মাদক নিরাময় কেন্দ্রে তিন মাস চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হন। সম্প্রতি রনি আবার মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন। মাদকের নেশার টাকার জন্য পরিবারের লোকজনকে প্রতিনিয়ত বিরক্তসহ মারধর করতেন। রোববার বিকেলে ছেলেকে সুস্থ করতে পুনরায় প্রয়াস মাদক নিরাময় কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ করেন রনির বাবা শানু মিয়া।
সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে প্রয়াস মাদক নিরাময় কেন্দ্রের স্টাফ রয়েল মিয়াসহ রাশেদ, রাজীব, ফোরকান, ইমন, সজীব একটি মাইক্রোবাসে করে কাজীপাড়া এলাকার ধোপাবাড়ির মোড়ে যান। তাঁরা বাড়ি থেকে প্রয়াস মাদক নিরাময় কেন্দ্রে নিয়ে যেতে রনির বাড়ির দরজায় ধাক্কা দেন। এ সময় দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গে আকস্মিকভাবে দুই হাতে থাকা ছুরি দিয়ে রাজীব ও রাশেদের পেট, হাত ও ঊরুতে উপর্যুপরি আঘাত করেন। পরে ওই মাদক নিরাময়কেন্দ্রের বাকিরা এগিয়ে গিয়ে আহত অবস্থায় রাজীব ও রাশেদকে উদ্ধার করে ঘরের ভেতরে নিয়ে যান। রনি ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান।
পরে রাজীব ও রাশেদকে উদ্ধার করে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান তাঁর সহকর্মীরা। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক রাজীবকে মৃত ঘোষণা করেন। অবস্থার অবনতি হওয়ায় রাশেদকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। এদিকে খবর পেয়ে সদর থানা–পুলিশ ও প্রয়াস মাদক নিরাময় কেন্দ্রের মালিকেরা হাসপাতালে পৌঁছান।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক হিমেল খান প্রথম আলোকে বলেন, হাসপাতালে আনার আগেই রাজীব মারা যান। তাঁর বাঁ পায়ের হাঁটুর ওপরে, ঊরুতে ও কোমরের বাঁ পাশে ছুরিকাঘাতের চিহ্ন রয়েছে। রাশেদের শরীরের ডান হাতের কবজি, ডান পায়ের ঊরু ও পেটে গুরুতর আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক।
প্রয়াস মাদক নিরাময় কেন্দ্রের কর্মী রয়েল মিয়া ও সজীব মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, রনি এক বছর আগেও প্রয়াসে তিন মাস চিকিৎসা নিয়েছিলেন। রোববার তাঁর বাবা পুনরায় তাঁকে প্রয়াস মাদক নিরাময় কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে বাড়ি থেকে রনিকে আনতে কাজীপাড়া এলাকায় যাই। ধাক্কা দিতেই দরজায় খুলে দুই হাতে থাকা ছুরি দিয়ে রাজীব ও রাশেদকে আঘাত করতে শুরু করেন। এ সময় আমরা পালিয়ে গিয়ে ঘরের ভেতরে আশ্রয় নিই। স্থানীয় ব্যক্তিরা কেউ এগিয়ে আসেননি। প্রচুর রক্তক্ষরণের জন্য রাজীব মারা গেছেন।
রনির বাবা শানু মিয়া হাসপাতালে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার ছেলে রনি মিয়া দীর্ঘদিন ধরে মাদকাসক্ত। মাদকের টাকার জন্য শহরের ফরিদ উদ্দিন আনোয়ারা টাওয়ারে চাচার দোকানে গিয়ে পাঁচ হাজার টাকা দাবি করে। সেখানে মার্কেটের লোকজনের সঙ্গে রনির তর্ক হয়। তাই বিকেলে রনিকে পুনরায় প্রয়াস মাদক নিরাময় কেন্দ্রে দিতে সেখানকার লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করি। ওই মাদক নিরাময় কেন্দ্রের লোকজন রনিকে নিতে বাড়িতে আসে। এ সময় সময় দরজা খুলে ছুরি নিয়ে তাদের ওপর হামলা করে আমার ছেলে। হাসপাতালে গিয়ে একজন মারা গেছে বলে জানতে পারি। তবে আমি এই ঘটনায় ছেলের বিচার চাই।’
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোজাম্মেল হোসেন ও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ এমরানুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনা শুনে আমরা হাসপাতালে ছুটে গিয়েছি। একজন মারা গেছেন। ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ওই যুবককে আটকের চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ।’