ভরসার জায়গা খুঁজতে গিয়ে পাচারকারীর ফাঁদে পড়ছেন নারীরা

চুয়াডাঙ্গাসহ আট জেলার অরক্ষিত সীমান্ত দিয়ে ভারতে নারী পাচারের কথা জানিয়েছে র‍্যাব। বিষয়টি নিয়ে প্রথম আলো কথা বলেছে চুয়াডাঙ্গার নারীনেত্রী নুঝাত পারভীনের সঙ্গে।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: সীমান্তপথে ভারতে নারী পাচার হচ্ছে। এর পেছনের কারণ কী হতে পারে?

নুঝাত পারভীন: নারী পাচারের বিষয়ে বলতে গেলে অনেক প্রসঙ্গই চলে আসে। তবে বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে নারীর সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা অন্যতম প্রধান কারণ। এ ছাড়া বহুবিবাহ, বিবাহবিচ্ছেদ, যৌতুক ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার নারী ভরসার জায়গা খুঁজতে গিয়ে পাচারকারী চক্রের ফাঁদে পড়ছেন। বর্তমানে নারীরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে চান। স্বাবলম্বী হতে গিয়ে কখনো কখনো প্রতিবেশী বা পরিচিত শিক্ষিত দম্পতিদের সঙ্গে অসম প্রতিযোগিতায় নামেন তাঁরা। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে নারী পাচারকারী চক্রের সদস্যরা তাঁদের ভালো থাকা, খাওয়া ও পরার সুযোগ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন চক্রের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছে।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: যাঁরা পাচারের শিকার হয়েছেন, তাঁদের কীভাবে ফিরিয়ে আনা যায়?

নুঝাত পারভীন: যাঁরা পাচারের শিকার হয়েছেন, তাঁদের ফিরিয়ে আনা সাধারণ নাগরিক, সামাজিক ও নাগরিক সংগঠনের পক্ষে সম্ভব নয়; দরকার রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ। সরকারের আন্তরিক উদ্যোগই পারে বৈধ উপায়ে তাঁদের দেশে ফিরিয়ে আনতে। স্থানীয়ভাবে সামাজিক ও মানবাধিকার সংগঠনকে সঙ্গে নিয়ে মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর বা সমাজসেবা অধিদপ্তর খোঁজ নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে পাচারের বিষয়টি জানাতে পারে।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: পাচারের শিকার নারীদের কীভাবে পুনর্বাসন করা সম্ভব?

নুঝাত পারভীন: পাচারের শিকার নারীদের দেশে ফিরিয়ে এনে অবশ্যই পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিতে হবে। যাঁদের ফিরিয়ে আনা হয়, স্বাভাবিকভাবেই তাঁদের মানসিক অবস্থা ভালো থাকে না। থাকার কথাও না। সেই সঙ্গে সমাজ, পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের কাছে উঠতে-বসতে হেয় হতে হয়। নানা রকম কটূক্তি তাঁদের জীবনকে বিষিয়ে তোলে। তাই সত্যিকার অর্থে এসব নারীকে স্বাবলম্বী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। এ জন্য কারিগরি শিক্ষার সুযোগ শেষে আয়ের পথ খুলে দিতে হবে। সরকার পিছিয়ে পড়া নারীদের এগিয়ে নিতে সমাজসেবা অধিদপ্তর, মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর ও কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মাধ্যমে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। এসব উদ্যোগের কারণে সফল নারীর সংখ্যাও অনেক। আমি বিশ্বাস করি, নারীর শক্তি ও মনোবল পুরুষের তুলনায় বেশি। তাঁদের কর্মমুখী করতে পারলেই আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠবেন এবং দিন দিন নিজেদের একটি অবস্থান তৈরি করে নিতে পারবেন।