ভাঙনে বিলীন ঘর, নৌকায় সন্তান জন্ম দিলেন নারী

ভাঙনে ঘরবাড়ি বিলীন হওয়ার পর নৌকায় বসবাস করছেন ইয়াকুব আলী দম্পতি। সেখানেই সন্তান প্রসব করেছেন গৃহবধূ মিনারা খাতুন। সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায়
ছবি: প্রথম আলো

সাতক্ষীরায় খোলপেটুয়া নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত গোটা এলাকা। ভাঙনের কবলে ঘরবাড়িও বিলীন হয়ে গেছে ইয়াকুব আলীর। নিরুপায় হয়ে সদস্যের পরিবার নিয়ে মাছ ধরার নৌকার ওপর বসবাস শুরু করেছেন। সেখানেই সন্তান জন্ম দিয়েছেন ইয়াকুবের স্ত্রী মিনারা খাতুন।

ইয়াকুব আলী ও মিনারা দম্পতি জানান, তাঁদের বাড়িঘর ছিল শ্যামনগর উপজেলার পদ্মপুকুর ইউনিয়নের বন্যতলা গ্রামে। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের পর খোলপেটুয়া নদীর তোড়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ ভেঙে তাঁদের বাড়িটি নদীতে চলে যায়। তারপর থেকে তাঁরা খোলপেটুয়া নদীর ওপর নৌকায় বসবাস করছেন।

মৎস্যজীবী ইয়াকুব আলী জানান, তিনি নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। বন্যতলা এলাকায় বাঁধ ভেঙে সব নদীতে চলে গেছে। ১৫ দিন আগে ঘরবাড়িও চলে যায় নদীগর্ভে। তারপর সাত সদস্যের পরিবার নিয়ে মাছ ধরা নৌকাটির ওপর বসবাস শুরু করেন। স্ত্রী মিনারা খাতুন অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। যাতায়াতব্যবস্থা না থাকায় কোনো চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে পারেননি। গতকাল বুধবার রাতে ছেলেসন্তানের জন্ম হয়েছে। মা-ছেলে দুজনই সুস্থ রয়েছে।

ইয়াকুব বলেন, ‘নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে বাস্তুচ্যুত হয়ে গেছি। যারা আর্থিকভাবে স্বচ্ছল, তারা অন্যত্র চলে যাচ্ছে। আমাদের যাওয়ার মতো জায়গা নেই। কী করব?’

বন্যতলার ওই এলাকা প্রতাপনগর ইউনিয়ন ও শ্যামনগর উপজেলার পদ্মপুকুর ইউনিয়নের সীমান্ত এলাকা। প্রতাপনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন বলেন, ‘নৌকার ওপর সন্তানের জন্ম হচ্ছে। তাহলে উপলব্ধি করুন, মানুষ কতটা কষ্টে রয়েছে।’ তিনি জানান, বন্যতলা বেড়িবাঁধ ভেঙে পুরো এলাকা প্লাবিত। লোকালয় দিয়েই জোয়ার–ভাটা খেলা করছে। বসতভিটা হারিয়েছে হাজারো মানুষ। বাধ্য হয়েই কেউ বেড়িবাঁধের ওপর কেউ–বা নৌকায় বসবাস করছেন।