ভাঙ্গা পৌরসভা নির্বাচনে কে হচ্ছেন নৌকার মাঝি?

ভাঙ্গা পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সাত মনোনয়ন প্রার্থী—ওপরের সারিতে বাঁ থেকে আবু ফয়েজ মো. রেজা, সাহাদাত হোসেন, জগদীশ চন্দ্র মালো, শেখ মোহাম্মদ লাহু, নিচের সারিতে বাঁ থেকে মিয়ান আবদুল ওয়াদুদ, গোলাম কিবরিয়া বিশ্বাস ও মির্জা বদরুজ্জামান
ফাইল ছবি

ফরিদপুরের ভাঙ্গা পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী সাতজন। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ড ঢাকা থেকে চূড়ান্ত মনোনয়ন ঘোষণা করা হবে আগামী শনিবার। বোর্ড মনোনীত প্রার্থীই নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবেন। এ অবস্থায় ভাঙ্গা পৌর এলাকায় চায়ের টেবিলে আলোচনা সরগরম—কে হচ্ছেন নৌকার মাঝি!

ষষ্ঠ ধাপে আগামী ১১ এপ্রিল এ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ করা হবে। ভোট হবে ইভিএম পদ্ধতিতে। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ১৮ মার্চ। যে সাতজন দলের কাছে মনোনয়ন চেয়েছেন, তাঁরা হলেন—ভাঙ্গা পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি বর্তমান মেয়র নূরপুর মহল্লার বাসিন্দা আবু ফয়েজ মো. রেজা (৬২), যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির অর্থবিষয়ক সম্পাদক ভাঙ্গা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মধ্যপাড়া হাশামদিয়া এলাকার বাসিন্দা সাহাদাত হোসেন (৫৩), পৌর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি পূব হাশামদিয়া মহল্লার বাসিন্দা সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র জগদীশ চন্দ্র মালো (৬৫), কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মানিকদী মহল্লার বাসিন্দা মিয়ান আবদুল ওয়াদুদ (৬৯), উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি কাপুড়িয়া সদরদী মহল্লার বাসিন্দা গোলাম কিবরিয়া বিশ্বাস (৫২), পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নওপাড়া মহল্লার বাসিন্দা মির্জা বদরুজ্জামান (৪৮) এবং উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলাধরচর মহল্লার বাসিন্দা শেখ মোহাম্মদ লাহু (৪০)।

ফরিদপুরের ভাঙ্গা পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী সাতজন। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ড ঢাকা থেকে চূড়ান্ত মনোনয়ন ঘোষণা করা হবে আগামী শনিবার।

ভাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগ ফরিদপুর-৪ আসনের সাবেক সাংসদ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্ল্যা ও ফরিদপুর-৪ আসনের বর্তমান স্বতন্ত্র সাংসদ যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মুজিবর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সন চৌধুরীর নেতৃত্বে বিভক্ত।

উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কাজী জাফরউল্ল্যাপন্থী আওয়ামী লীগের নেতারা পৌর চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নের জন্য শুধু বর্তমান মেয়র আবু ফয়েজ মো. রেজার নাম প্রস্তাব করে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কাছে পাঠিয়েছিলেন। এর মধ্যে বর্তমান সাংসদ নিক্সন চৌধুরী যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় গত ৩১ জানুয়ারি ভাঙ্গা পৌরসভার উদ্যোগে তাঁকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। ওই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাফরউল্ল্যাপন্থী বলে পরিচিত আবু ফয়েজ মো. রেজা। এ ঘটনায় আবু ফয়েজ মো. রেজার প্রতি ক্ষিপ্ত হন কাজী জাফরউল্ল্যা। এরপর ভাঙ্গা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা সাহাদাত হোসেন বাদে বাকি পাঁচজনের নাম দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হিসেবে সুপারিশ করেন কাজী জাফরউল্ল্যা।

আমি প্রত্যাশা করি দলীয় মনোনয়ন পাব। তবে পরপর তিনবার মেয়র নির্বাচিত হয়েছি। এর মধ্যে দুইবার নির্বাচিত হয়েছি দলীয় মনোনয়ন পেয়ে। আবার আমাকে নির্বাচন করার সুযোগ দল দেবে কি না, সে ব্যাপারে সন্দিহান।
আবু ফয়েজ মো. রেজা, ভাঙ্গা পৌরসভার বর্তমান মেয়র

সাহাদাত নিক্সনপন্থী হিসেবে পরিচিত। ভাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী হেদায়েতউল্লাহ সাকলাইন ও সাধারণ সম্পাদক ফাইজুর রহমান তাঁর নাম প্রস্তাব করে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগে পাঠানোর পর তাঁকে মনোনয়নের জন্য আবেদনপত্র প্রদান করা হয়।

ভাঙ্গা পৌরসভার বর্তমান মেয়র আবু ফয়েজ মো. রেজা ২০০২, ২০১১ ও ২০১৬ সালে গত তিনবার অনুষ্ঠিত পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন। ১৯৯৭ সালের ১ মার্চ এ পৌরসভা স্থাপিত হয়। এখানে প্রথম নির্বাচন হয় ২০০২ সালে। সেই থেকে ফয়েজ রেজাই চেয়ারম্যান ও মেয়র নির্বাচিত হয়ে আসছেন। ফয়েজ রেজা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি প্রত্যাশা করি দলীয় মনোনয়ন পাব। তবে পরপর তিনবার মেয়র নির্বাচিত হয়েছি। এর মধ্যে দুইবার নির্বাচিত হয়েছি দলীয় মনোনয়ন পেয়ে। আবার আমাকে নির্বাচন করার সুযোগ দল দেবে কি না, সে ব্যাপারে সন্দিহান। তবে দলীয় মনোনয়ন না পেলে আমি নির্বাচনে অংশ নেব না।’

সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জগদীশ চন্দ্র মালো বলেন, ‘আমি নৌকা প্রতীক পাব বলে ৬০ ভাগ আশাবাদী। দলীয় মনোনয়ন পেলে জনগণের শক্তিতে আমি জয়লাভ করব বলে প্রত্যাশা করি। জনগণ আমার পক্ষে আছে, তারা আমাকে ভালোবাসে।’

নিক্সনপন্থী হিসেবে পরিচিত সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাহাদাত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন, দল তাঁকে মনোনয়ন দেবে। দল মনোনয়ন না দিলে কী করবেন জানতে চাইলে সাহাদাত বলেন, সে ক্ষেত্রে সাংসদ নিক্সন যে সিদ্ধান্ত দেবেন, তিনি সে পথেই চলবেন।