ভাত জোটানোই কষ্টকর,তার ওপর ভাড়ার খড়্গ
করোনাকালে ‘লকডাউন’ আর কঠোর বিধিনিষেধে বিভীষিকাময় পরিস্থিতিতে পড়েছেন ফরিদপুরের রথখোলা যৌনপল্লির বাসিন্দারা। তাঁদের পেটে এখন দুবেলা ঠিকমতো ভাত জুটছে না। তার ওপর প্রত্যেক দিনের বাড়িভাড়া পরিশোধের চাপ। কষ্টের কথা কাউকে বলতেও পারছেন না। সব মিলিয়ে ঈদের আগে মলিন পল্লির মানুষগুলোর মুখ।
গত শনিবার বেলা দেড়টার দিকে ফরিদপুর শহরের হাজী শরীয়তুল্লাহ বাজারের পাশে অবস্থিত রথখোলা যৌনপল্লিতে গিয়ে বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা হয়। শহরের কুমার নদের পাড়ে অবস্থিত শতবর্ষের পুরোনো এই পল্লিতে সহস্রাধিক যৌনকর্মী ছিলেন। গত বছর থেকে করোনার প্রদুর্ভাব, সাধারণ ছুটি, কঠোর বিধিনিষেধের কারণে বেশির ভাগ নিবাসী জীবিকার সন্ধানে অন্যান্য যৌনপল্লিতে চলে গেছেন।
যৌনকর্মীদের সংগঠন জয় নারী সংস্থার সভাপতি আলেয়া বেগম বলেন, বর্তমানে এই পল্লিতে সাড়ে তিন শ যৌনকর্মী রয়েছেন। এ ছাড়া পল্লিতে আছে অন্তত ১২৫ জন শিশু। তাদের ভরণপোষণে সমস্যা হচ্ছে। সামনে ঈদ। অনেক মা তাঁর সন্তানকে নতুন কাপড় কিনে দিতে পারেননি।
‘পেটে ভাত জোটে না, তার ওপর বাড়িওয়ালার ডেইলি ভাড়ার খড়্গ। এর মধ্যে নতুন জামা। সে স্বপ্ন দেখারও সময় নেই। জীবনটা তেজপাতা হইয়া গেল।’ আক্ষেপের সুরে গড় গড় করে কথাগুলো বলে যান ওই পল্লির নিবাসী সুমি আক্তার (২৫)।
পল্লির বাসিন্দারা জানান, এখানে ৮–১০ জন বাড়িওয়ালা আছেন। তাঁরাই প্রতিদিন হিসাবে এই খুপরিজাতীয় ঘরের ভাড়া তোলেন। ভাড়া অত্যন্ত বেশি। ৫ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৪ ফুট প্রস্থের অর্থাৎ ২০ বর্গফুটের একটি ঘরের দৈনিক ভাড়া তিন শ থেকে সাড়ে তিন শ টাকা। কোনো কোনো বাড়িওয়ালা গলায় পাড়া দিয়ে টাকা আদায় করেন। আবার এর মধ্যে দু–একজন আছেন, যাঁরা সহানুভূতিশীল; করোনার জন্য ভাড়া নেন কম, এমনকি সাহায্যও করেন।
পল্লির বাসিন্দা নার্গিস বেগম (৪৩) জানান, পেটে ভাত জোটানো কঠিন হয়ে উঠেছে। শুক্রবার বাকিতে মাছ এনে খেয়েছিলেন। শনিবার কেউ বাকি দেননি। তাই আলু ভাজি ও ভাতই সম্বল।
মৌসুমী বেগমের (৩০) বাড়ি খুলনায়। কষ্টে যাচ্ছে তাঁর দিনকাল। আয়রোজগার নেই বললেই চলে। তিনি বলেন, ‘এতিম অসহায়ের মতো পড়ে আছি, কেউ দেখার নেই, কেউ খোঁজও নেয় না।’
পপি বেগম বলেন, ‘রোজগার নাই, পেটে ভাত নাই, কিন্তু বাড়িওয়ালার অত্যাচার আছে। এ লকডাউনের সময় আমাদের বাড়ি ভাড়াডা মাফ করা বা কমাইয়া দিলে একটু বাঁচতে পারতাম।’
জয় নারী সংস্থার সভাপতি আলেয়া বেগম বলেন, ‘এ পল্লির লোকজন খুব অসহায় অবস্থায় আছেন। গত বছর লকডাউনের সময় বেশ কয়েকটি সংগঠন সাহায্য করেছে। তবে এবার তেমন কোনো সাহায্য পাই নাই। আমাদের দিক তাকানোর দরকার, যাতে আমরা বাঁইচা থাকতে পারি।’
ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান বলেন, দ্রুত ওই অসহায় নারীদের মধ্যে খাবার সরবরাহ করা হবে। পাশাপাশি যাতে বাড়িভাড়ার বিষয়টি বাড়িওয়ালারা বিবেচনা করে কমিয়ে আনতে পারেন, সে বিষয়ে কোতোয়ালি থানার ওসিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।