ভারত থেকে ফিরে আসা ১১ বাংলাদেশির ১০ জন কোয়ারেন্টিনে

শুক্রবার সকাল থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত করোনা পরীক্ষার নেগেটিভ ফলাফল, ভারত ও বাংলাদেশে নিযুক্ত হাইকমিশনারের অনুমতি ও অনাপত্তিপত্র এবং করোনার টিকার প্রথম বা দ্বিতীয় ডোজ নেওয়া ২৭ জন যাত্রী আখাউড়া-আগরতলা সীমান্ত দিয়ে যাতায়াত করেছেন।

এর মধ্যে ভারতে আটকা পড়া ১১ জন বাংলাদেশি এবং বাংলাদেশ থেকে ১৬ জন ভারতীয় নাগরিক নিজ নিজ দেশে ফিরে গেছেন। এ নিয়ে গত চার দিনে ৫০ জন ভারতীয় নাগরিক নিজ দেশে ফিরে গেছেন।

আখাউড়া স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশন সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার ভারতে আটকা পড়া ১১ জন বাংলাদেশি নাগরিক নিজ দেশে ফিরে এসেছেন। তাঁদের মধ্যে চারজন নৌবাহিনীর কর্মকর্তাকে ঢাকা ক্যান্টমেন্টে সেনাবাহিনীর কোয়ারেন্টিনে, দুজন ক্যানসার রোগীকে নরসিংদী জেনারেল হাসপাতালের কোয়ারেন্টিনে, একজনকে সিলেটের সরকারি হাসপাতালের কোয়ারেন্টিনে, তিনজনকে আখাউড়ায় প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে এবং সরকারি নির্দেশনার সব শর্ত পূরণ করায় একজনকে হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে।

অনেকদিন ধরেই আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে যাত্রীদের আসা-যাওয়া বন্ধ রয়েছে। কিন্তু দুই দেশেই আটকা পড়া নাগরিকেরা কিছু নির্দেশনা অনুসরণ করে যাতায়াত করতে পারছেন।

আখাউড়া ইমিগ্রেশন সূত্রে জানা গেছে, গত তিন দিনে ভারতীয় হাইকমিশন, বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাঠানো তালিকার ৬৩ জনের মধ্যে ৫০ জন ভারতীয় নাগরিক নিজ দেশে ফিরে গেছেন। গত তিন দিনে ভারতে আটকা পড়া ৪৯ জন বাংলাদেশি নাগরিক নিজ দেশে ফিরে এসেছেন।

আখাউড়া স্থলবন্দরের হেলথ ডেস্ক সূত্রে জানা গেছে, গত ২২ এপ্রিল পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে এম আবদুল মোমেন ভারতে আটকা পড়া বাংলাদেশি নাগরিক স্থলবন্দর দিয়ে দেশে আসতে পারবেন বলে নির্দেশনা জারি করেন। এ ক্ষেত্রে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করেন মন্ত্রী। সেগুলো হলো সংশ্লিষ্ট স্থানীয় প্রশাসন ফেরত আসা নাগরিকদের ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করবেন। বাংলাদেশি নাগরিকদের মধ্যে যাঁদের কোভিড টিকার দুটি ডোজ নেওয়া আছে এবং কোভিড নেগেটিভ সনদ নেওয়া আছে, তাঁরা সরাসরি ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টিনের জন্য বিবেচিত হবেন। আর আগত বাংলাদেশি নাগরিকদের মধ্যে যাঁদের কোভিড টিকার একটি ডোজ নেওয়া আছে বা কোনো ডোজ নেওয়া হয়নি এবং কোভিড নেগেটিভ সনদ আছে, তাঁদের তিন দিনের বাধ্যতামূলক প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হবে। এরপর কোভিড পরীক্ষার ফলাফল নেগেটিভ হলে তাঁরা পরবর্তী ১১ দিন বাধ্যতামূলকভাবে হোম কোয়ারেন্টিন পালন করবেন। স্থানীয় প্রশাসন এসব নিশ্চিত করবে।

আখাউড়া স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশন সূত্রে জানা গেছে, সাধারণ যাত্রীদের আসা-যাওয়া দীর্ঘদিন ধরেই বন্ধ রয়েছে। তবে বাংলাদেশে এসে আটকে পড়া ভারতীয় নাগরিক এবং বাংলাদেশ থেকে চিকিৎসার জন্য ভারতের বিভিন্ন স্থানে আটকে পড়া বাংলাদেশি নাগরিকেরা আখাউড়া-আগরতলা সীমান্ত দিয়ে আসা–যাওয়া করতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার এবং ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনারের অনুমতি লাগবে। যাকে এনওসি, অর্থাৎ অনাপত্তিপত্র লাগবে। বর্তমানে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ৬৩ জন ভারতীয় নাগরিকের একটি তালিকা আখাউড়া ইমিগ্রেশনে পাঠিয়েছে। ৬৩ জনের তালিকার মধ্যে গত মঙ্গলবার ১৮ জন, বুধবার ৯ জন, বৃহস্পতিবার ৭ জন ও সর্বশেষ শুক্রবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ১৬ জন ভারতীয় নাগরিক নিজ দেশে ফিরে গেছেন। আর ভারতে আটকা পড়া নাগরিকদের মধ্যে গত মঙ্গলবার ৬ জন, বুধবার ১৮ জন, বৃহস্পতিবার ১৪ জন ও সর্বশেষ শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত ১১ জন বাংলাদেশি নাগরিক নিজ দেশে ফিরেছেন।

সম্প্রতি সরেজমিন দেখা গেছে, আখাউড়া স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশন কার্যালয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের একটি হেলথ ডেস্ক বসানো আছে। টিন ও কাচের গ্লাসের ভেতরের ওই হেলথ ডেস্কে একজন চিকিৎসক ও একজন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বসেন। তাঁরা উভয় দেশের যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন। তাঁরা সাধারণত উভয় দেশের নাগরিকদের শরীরের তাপমাত্রা, ঠান্ডা, জ্বর, কাশি ও অ্যালার্জিজনিত কোনো সমস্যা আছে কি না, যাচাই করেন।

আখাউড়া ইমিগ্রেশনে হেলথ ডেস্কে বসা চিকিৎসক ফারহানা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা যাত্রীদের শরীরের তাপমাত্রা, ঠান্ডা, কাশি ও অ্যালার্জিজনিত বিষয়গুলো আছে কি না, যাচাই করি। ভারত থেকে আসা বাংলাদেশি নাগরিকদের দুটি বিষয় আমরা দেখি। একটি, সর্বশেষ ৭২ ঘণ্টার মধ্যে করা অ্যান্টিজেন বা আরটি–পিসিআরে করা করোনা পরীক্ষার নেগেটিভ ফলাফল। তবে আমরা আরটি–পিসিআরের ফলাফলকে গুরুত্ব দিই বেশি। তখন তাঁদের আখাউড়ায় তিন দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে এবং ১১ দিনের হোম কোয়ারন্টিনে থাকার পরামর্শ দিয়ে থাকি। যাঁদের করোনার টিকার নেগেটিভ সনদ আছে এবং যাঁরা করোনার টিকার দুটি ডোজ নিয়েছেন, তাঁদের ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। যাঁরা করোনার টিকার একটি ডোজ বা কোনো ডোজ নেননি, তাঁদের তিন দিনের বাধ্যতামূলক প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকতে নির্দেশনা দেয় উপজেলা প্রশাসন। পরে করোনার নেগেটিভ ফলাফল এলে তাঁদের ১১ দিনের বাধ্যতামূলক হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়।’

আখাউড়া ইমিগ্রেশনের ইনচার্জ আবদুল হামিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো ৬৩ জন ভারতীয় নাগরিকের একটি তালিকা পেয়েছি। এই তালিকার মধ্যে ১৬ জন ভারতীয় নাগরিক শুক্রবার আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে নিজ দেশে ফিরে গেছেন। ভারতে আটকা পড়া ১১ জন বাংলাদেশি নিজ দেশে ফিরে এসেছেন। তাঁদের মধ্যে চারজন নৌবাহিনীর কর্মকর্তা, তিনজন ক্যানসারের রোগী ছিলেন। নৌবাহিনীর চার কর্মকর্তাকে ঢাকায় সেনাবাহিনীর কোয়ারেন্টিনে, ক্যানসারের তিন রোগীকে নিজ নিজ এলাকার হাসপাতালের কোয়ারেন্টিনে ও তিনজনকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া একজন সব শর্ত পূরণ করেছেন এবং করোনার দুটি ডোজও নিয়েছেন। তাই তাঁকে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’