ভাসমান বেদেজীবনে বদরুল-সাইদার জমকালো বিয়ে

পরিবারের সঙ্গে বদরুল আমীন ও সাইদা আক্তার
ছবি: প্রথম আলো

গাজীপুরের শ্রীপুরের নানদিয়া সাঙ্গুন গ্রামের বানার নদের পাড়ে পলিথিনে ছাওয়া অস্থায়ী ৭০টি মাচাং ঘর আছে। সেখানে এক মাসের জন্য ঘর বেঁধেছে বেশ কয়েকটি বেদে পরিবার। গতকাল রোববার নদের পাড়ে তৈরি করা হয় ৭১ নম্বর মাচাং ঘর। বেদে পরিবারের সদস্য বদরুল আমীন (২৫) ও সাইদা আক্তারের (১৮) বিয়ে উপলক্ষে সেখানে নতুন ঘরটি তৈরি করা হয়। বেদে সম্প্রদায়ের সাংস্কৃতিক আচার মেনে গতকাল রাতে জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে তাঁদের বিয়ে হয়।

বিয়ে উপলক্ষে অস্থায়ী মাচাং ঘরগুলো রঙিন বেলুন দিয়ে সাজানো হয়। জ্বালানো হয় বাহারি বৈদ্যুতিক বাতি। সাংস্কৃতিক নানা পরিবেশনার জন্য উঁচু স্থানে বানানো হয় উন্মুক্ত মঞ্চ। মঞ্চে বেদেবহরের মেয়েরা নিজস্ব সংস্কৃতি অনুযায়ী গান পরিবেশন করেন। নাচগানে মধ্যরাত পর্যন্ত উৎসব মেতে থাকেন বেদের সম্প্রদায়ের লোকজন।

এদিকে বিয়ে পড়ানোর পর বেদেসমাজের রীতি অনুযায়ী মেয়েকে ছেলের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এসব আনুষ্ঠানিকতার পর নেচেগেয়ে সাইদার পারিবারিক মাচাং থেকে হাত ধরে তাঁকে নিজের নতুন মাচাংয়ে নিয়ে আসেন বদরুল। নতুন মাচাংটি বাসরঘর হিসেবে সাজিয়ে রাখা হয়েছিল আগে থেকেই।

তিন বছর ধরে বদরুল ও সাইদার প্রেম। অবশেষে বিয়ের মাধ্যমে তাঁদের প্রেম পূর্ণতা পেল। বদরুল ও সাইদা একই বহরের বাসিন্দা। বদরুল ওই বহরের মো. নুরুল ইসলামের ছেলে আর সাইদা একই বহরের খাইরুল ইসলামের মেয়ে।

বদরুল বলেন, এক মাস পরেই পুরো দল নিয়ে তাঁরা অন্য কোনো জায়গায় গিয়ে বসতি গড়বেন। এভাবেই দেশের বিভিন্ন জায়গায় অস্থায়ীভাবে মাচাং তৈরি করে তাঁরা বাস করেন। সংসার, ধর্মাচার—সবকিছুই চলে যাযাবর জীবনে।

ভাসমানজীবন হলেও বদরুল-সাইদার বিয়েতে আয়োজনের কমতি ছিল না
ছবি: প্রথম আলো

সাইদার আদি নিবাস শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলায়। তিন বছর আগে বদরুলের সঙ্গে সাইদার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সাইদা বলেন, ‘ভ্রাম্যমাণ জীবনে চড়াই-উতরাই থাকলেও আমাদের ভালোবাসায় কোনো কমতি নেই। আমাদের জীবনে তেমন কোনো নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নেই। তবে আমরা এভাবেই মানিয়ে নিয়েছি।’

বদরুলের বাবা নুরুল ইসলাম এই বহরের জ্যেষ্ঠ বাসিন্দাদের একজন। তিনি বলেন, বেদেবহরের বিয়েতে খুব বেশি জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন থাকে না। তবে তিনি তাঁর ছেলের বিয়ের আয়োজনে ভিন্নতা আনতে চেয়েছেন।