ভাসানচরের পথে উখিয়া ছাড়লেন ৭১৮ রোহিঙ্গা

কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা শিবির থেকে মালামাল নিয়ে ভাসানচরের পথে রওনা দিচ্ছেন রোহিঙ্গারা। আজ রোববার দুপুরে তোলা
ছবি: প্রথম আলো

কক্সবাজারের উখিয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠ থেকে আজ রোববার দুপুরে নোয়াখালীর ভাসানচরের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন ৭১৮ জন রোহিঙ্গা শরণার্থী। রাতে এসব রোহিঙ্গা চট্টগ্রাম পৌঁছার কথা রয়েছে। কড়া নিরাপত্তা দিয়ে তাদের ১৩টি বাসে চট্টগ্রাম নেওয়া হচ্ছে। আজ ভাসানচরে রোহিঙ্গা স্থানান্তর কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন।

ভাসানচরে রোহিঙ্গা স্থানান্তর কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, আজ রোববার দশম দফায় কক্সবাজারের বিভিন্ন আশ্রয়শিবির থেকে অন্তত ১ হাজার ২০০ জন রোহিঙ্গাকে ভাসানচরের আশ্রয়শিবিরে স্থানান্তরের প্রস্তুতি চলছে। বেলা ১টা ২৫ মিনিটের দিকে ১৩টি বাস বোঝাই করে ৭১৮ জনের প্রথম একটি দল চট্টগ্রামের পথে রওনা হয়েছে। বিকেল সাড়ে চারটা নাগাদ আরও ৫০০ রোহিঙ্গাকে নিয়ে আরেকটি দল চট্টগ্রাম যাবে।

ভাসানচরে রোহিঙ্গা স্থানান্তর কার্যক্রম পরিচালনা করছে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) কার্যালয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা-এনজিও।

রোহিঙ্গা শিবিরের নিরাপত্তায় দায়িত্বে নিয়োজিত  ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অধিনায়ক ও পুলিশ সুপার নাঈমুল হক বলেন, প্রথম দফায় ৭১৮ জনের একটি দল রওনা হয়েছে। উখিয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠ থেকে আরেকটি দল বিকেলে রওনা দেবে। রাতে রোহিঙ্গারা চট্টগ্রাম পৌঁছার পর আগামীকাল সোমবার রোহিঙ্গাদের নৌবাহিনীর জাহাজে করে নোয়াখালীর ভাসানচর আশ্রয়শিবিরে স্থানান্তর করা হবে।

উখিয়ার লম্বাশিয়া ক্যাম্প ছেড়ে স্ত্রী ও চার ছেলেমেয়ে নিয়ে ভাসানচর যাচ্ছেন রোহিঙ্গা রহিম উল্লাহ। ভাসানচরে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে রহিম উল্লাহ (৪৫) বলেন, এখানে (উখিয়ায়) অনেক সমস্যা। রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা যখন–তখন ভয়ভীতি প্রদর্শন করে, চাঁদা আদায় করে। খুন, চাঁদাবাজি, অপহরণের ঘটনা লেগেই আছে। তা ছাড়া বর্ষায় পাহাড়ধসের ঝুঁকি নিয়ে ঝুপড়িতে থাকতে হয়। শীতকালে আবার আগুন নিয়ে আতঙ্কে থাকতে হয়। ভাসানচরে এসব নেই। ভাসানচর আশ্রয়শিবির অনেক নিরাপদ। সেখানকার থাকার ঘরগুলোও উন্নত। নিরাপত্তাব্যবস্থাও ভালো। তাই রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় ভাসানচর চলে যাচ্ছে।

আরআরআরসি কার্যালয় সূত্র জানায়, এর আগে ৫ জানুয়ারি কক্সবাজার থেকে ৭০৫ জন রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তর করা হয়েছিল। এ নিয়ে ৯ দফায় উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন আশ্রয়শিবির থেকে ভাসানচরে স্থানান্তর করা হয়েছে ২০ হাজার ২০৫ জন রোহিঙ্গাকে।

মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গারা নৃশংসতার শিকার হয়ে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট পালিয়ে বাংলাদেশে আসতে শুরু করে। কয়েক মাসে অন্তত আট লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। এর আগে আসে আরও কয়েক লাখ। বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১১ লাখ।

আরআরআরসি কার্যালয় সূত্র জানায়, কক্সবাজারের আশ্রয়শিবিরের চাপ কমাতে  অন্তত এক লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরের আশ্রয়শিবিরে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা আছে সরকারের।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে রোহিঙ্গা স্থানান্তরের জন্য সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৩ হাজার ৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাসানচর আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। ১৩ হাজার একর আয়তনের ওই জায়গায় এক লাখ রোহিঙ্গা বসবাসের উপযোগী ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে।
উখিয়ার লম্বাশিয়া শিবিরের মাঝি (নেতা) কবির আহমদ বলেন, ভাসানচরে যাওয়ার জন্য বহু রোহিঙ্গা প্রস্তুতি নিচ্ছে।

কয়েকজন রোহিঙ্গা নেতা বলেন, গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে খুন হন রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা মুহিবুল্লাহ। এরপর ২২ অক্টোবর রাতে রোহিঙ্গা শিবিরে সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহত হন ছয়জন মাদ্রাসাশিক্ষক-ছাত্র।