ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাওয়ার পথে ফরিদপুরের তিন তরুণ নিখোঁজ

ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাওয়ার পথে নিখোঁজ ফরিদপুরের তিন তরুণ নাজমুল, সামিউল ও ফয়সাল (বাঁ থেকে)
ছবি: সংগৃহীত

দালালের মাধ্যমে লিবিয়া হয়ে নৌকায় ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাওয়ার পথে নিখোঁজ হয়েছেন বাংলাদেশের ফরিদপুরের তিন তরুণ। তাঁরা হলেন নগরকান্দা উপজেলার কাইচাইল ইউনিয়নের বাবুর কাইচাইল গ্রামের বাসিন্দা ফয়সাল মাতুব্বর (১৯), সামিউল শেখ (২১) ও নাজমুল মিয়া (২২)। এই তরুণদের নিখোঁজের পর এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন দালাল চক্রের সদস্যরা।

নিখোঁজ তরুণদের পরিবারের সদস্য ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লিবিয়া হয়ে সমুদ্রপথে ইতালি যাওয়ার জন্য গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর বাড়ি থেকে বের হন ওই তিন তরুণ। প্রথমে তাঁদের ঢাকায় নিয়ে যান দালাল চক্রের সদস্য একই ইউনিয়নের ছোট নাওডুবি গ্রামের বাসিন্দা ইলিয়াস মাতুব্বর, শাহিন মাতুব্বর ও সোহেল মাতুব্বর। চক্রের অন্য দুই সদস্য শওকত মাতুব্বর ও রাসেল মাতুব্বর আগে থেকেই লিবিয়ায় থাকেন। এই তিন তরুণ গত ২৭ জানুয়ারি লিবিয়ায় পৌঁছান। সেখানে মুঠোফোনে তাঁদের ফরিদপুরে থাকা মা–বাবার সঙ্গে কথা বলিয়ে দেন শওকত ও রাসেল। এরপর নানা চেষ্টা করেও ওই তরুণদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছে না তাঁদের পরিবার।

নিখোঁজ তরুণ সামিউল শেখের বাবা ইউনুস শেখ বলেন, তাঁদের ছেলের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেবে বলে কালক্ষেপণ করছেন দালাল চক্রের সদস্য প্রবাসী শওকত ও রাসেল। সন্তান জীবিত আছেন কি না, এ নিয়ে তাঁরা স্বামী-স্ত্রী দিশাহারা হয়ে পড়েছেন।

নিখোঁজ ফয়সাল মাতুব্বরের বাবা ফারুক মাতুব্বর বলেন, ‘দালালেরা আমার ছেলেকে বিদেশে নেওয়ার জন্য ১০ লাখ টাকা নিয়েছে। ৩ জনের কাছ থেকে নিয়েছে ৩০ লাখ টাকা। লিবিয়া থেকে সমুদ্রপথে ইতালি যাওয়ার সময় ছেলের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর দালালদের বাড়ি ছোট নাওডুবী গ্রামে যাই। সেখানে গিয়ে দেখি তারা সবাই ঘরে তালা ঝুলিয়ে পালিয়ে গেছে। প্রবাসী রাসেল ও শওকতকে বারবার ফোন দিলেও আমার ছেলের সঙ্গে কথা বলিয়ে দিচ্ছে না তারা।’

এই তিন তরুণের নিখোঁজ হওয়ার খবরে নগরকান্দা উপজেলার ছোট নাওডুবি এলাকার এই দালাল চক্রের সদস্যরা ঘরে তালা ঝুলিয়ে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। তাঁদের মুঠোফোন নম্বরে কল দেওয়া হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।

কাইচাইল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. মোস্তফা খান বলেন, দালালের মাধ্যমে লিবিয়া যাওয়ার পথে ওই তিন তরুণ হয়তো কোনো বিপদে পড়তে পারেন। সে জন্যই চক্রের সদস্যরা এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন। বিষয়টি নগরকান্দা থানায় জানানো হয়েছে।

নগরকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাবিল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘গতকাল শুক্রবার নিখোঁজের পরিবার বিষয়টি মৌখিকভাবে আমাকে জানিয়েছে। আমি তাঁদের লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছি, তা পাওয়ার পর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

নগরকান্দা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার সুমিনুর রহমান বলেন, এটি মানব পাচারের ঘটনা। এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করে মানব পাচার আইনে মামলা করা হবে। তিনি বলেন, লোভের ফাঁদে ফেলে বেকার তরুণদের বিদেশে নিয়ে বিপদে ফেলে লাভবান হচ্ছে এ চক্র।