খুলনায় ভৈরব নদের ওপর সেতুর স্থান পরিবর্তনের দাবি ব্যবসায়ীদের

খুলনায় ভৈরব সেতু নির্মাণের কারণে অধিগ্রহণের আওতাভুক্ত দৌলতপুর মহসিন মোড় থেকে রেলিগেট নগরঘাট পর্যন্ত বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান, ব্যবসায়ী ও বসবাসকারীরা সেতু অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার দাবিতে মানববন্ধন করেন। আজ বুধবার দুপুরে খুলনা শহরের রেলিগেট এলাকায়
প্রথম আলো

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর কাজ শুরু হতে যাচ্ছে খুলনার ভৈরব নদের ওপর দিঘলিয়া-দৌলতপুর সংযোগ সেতু। ২০১৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর ‘ভৈরব সেতু’ নামের প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পায়। তবে ওই সেতুর দৌলতপুর অংশ যেখানে পড়েছে, সেখানে রয়েছে শত শত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বসতি। ওই স্থানে সেতু হলে সেগুলো আর থাকবে না। ক্ষতিগ্রস্ত হবেন লোকজন ও ব্যবসায়ীরা। এ কারণে সেতুটি অন্য কোনো স্থানে সরিয়ে তৈরি করার দাবি জানিয়েছেন দৌলতপুর এলাকার ব্যবসায়ী ও বসবাসকারীরা।

আজ বুধবার ওই দাবিতে দৌলতপুরের রেলিগেট এলাকায় শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের বাড়ির সামনে মানববন্ধন করেছেন তাঁরা। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। পরে প্রতিমন্ত্রীর কাছে তাঁরা স্মারকলিপি দেন।

কোন কোন স্থানে ভৈরব সেতু করা যেতে পারে, সে বিষয়েও ধারণা দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তাঁদের দাবি, শিরোমণি বাদামতলা ঘাট থেকে যশোর রোড পর্যন্ত চার লেনের সড়ক রয়েছে। যেখানে সেতুর সংযোগ সড়ক করলে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। এতে নগরের পরিধিও বৃদ্ধি পাবে। এ ছাড়া ফুলবাড়িগেট থেকে মীরেরডাঙ্গা পর্যন্ত এবং খালিশপুর ক্রিসেন্ট মিলের ভেতরেও অঢেল ফাঁকা জমি রয়েছে। সেখানে সেতু করলে ব্যাপক ক্ষতি এড়ানো যাবে।

ব্যবসায়ীরা বলেন, শিরোমণি বাদামতলা ঘাট থেকে যশোর রোড পর্যন্ত চার লেনের সড়ক রয়েছে। যেখানে সেতুর সংযোগ সড়ক করলে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। এতে নগরের পরিধিও বৃদ্ধি পাবে। এ ছাড়া ফুলবাড়িগেট থেকে মীরেরডাঙ্গা পর্যন্ত এবং খালিশপুর ক্রিসেন্ট মিলের ভেতরেও অঢেল ফাঁকা জমি রয়েছে।

মানববন্ধনে ব্যবসায়ীরা বলেন, বর্তমানে যেখানে সেতুর সংযোগ সড়ক হওয়ার কথা চলছে, সেখানে রয়েছে আড়াই শর বেশি বড় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, পাট রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান, পাঁচটি স্কুল ও অনেক বসতি। আর এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে প্রায় ১২ হাজার মানুষ। এমন পরিস্থিতিতে সেখানে সেতু করা হলে ওই প্রতিষ্ঠানগুলো উচ্ছেদ করতে হবে। এতে পথে বসবে প্রতিষ্ঠানগুলো। কারণ, দৌলতপুরের অন্য কোথাও আর এমন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা করার জায়গা নেই।

দৌলতপুর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শেখ মুজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক এস এম মোস্তাফিজুর রহমান, পাট রপ্তানিকারক চৈতন্য সরকার, প্রগতি জুট ট্রেডার্সের মালিক মো. সাইফুল ইসলাম, আবদুল্লাহ জুটের মালিক এস এম আবদুল্লাহ প্রমুখ।

মূলত সড়কপথে খুলনা নগরের সঙ্গে দিঘলিয়া উপজেলার যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নে দৌলতপুরের রেলিগেটে এলাকায় ভৈরব সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। এরই মধ্যে সেতু নির্মাণে দৌলতপুর মহসিন মোড় থেকে রেলিগেট নগরঘাট পর্যন্ত ভূমি অধিগ্রহণের প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে।

খুলনায় ভৈরব সেতু নির্মাণের কারণে অধিগ্রহণের আওতাভুক্ত দৌলতপুর মহসিন মোড় থেকে রেলিগেট নগরঘাট পর্যন্ত বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান, ব্যবসায়ী ও বসবাসকারীরা সেতু অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার দাবিতে মানববন্ধন করেন। আজ বুধবার দুপুরে খুলনা শহরের রেলিগেট এলাকায়
প্রথম আলো

খুলনা সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর একনেকে অনুমোদন পাওয়ার পর ‘ভৈরব সেতু’ প্রকল্পে ২০২০ সালের ২৭ জুলাই নির্মাণকাজের দরপত্র আহ্বান করা হয়। প্রায় ১ দশমিক ৩১৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যর ওই সেতু নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০২ কোটি টাকা। এ ছাড়া জমি অধিগ্রহণ বাবদ খরচ ধরা হয়েছে আরও ২৮১ কোটি টাকা।

সড়ক বিভাগের প্রকৌশলীরা জানান, ভৈরব সেতু হবে এই অঞ্চলের অন্যতম ব্যতিক্রমী সেতু। কারণ, নদীর পানিপ্রবাহ ও নৌযান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে নদী থেকে প্রায় ৬০ ফুট উঁচুতে পিসি গার্ডার নকশায় সেতুটি নির্মাণ করতে হবে। আর সেতুর সঙ্গে সড়কের সংযোগ স্থাপন করতে নগরের ভেতরেও উড়াল সড়ক নির্মাণ করতে হবে। অর্থাৎ দৌলতপুরের মহসীন মোড় থেকে রেলক্রসিং পার হয়ে ভৈরব নদ পর্যন্ত প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকায় উড়াল সড়ক নির্মাণ করা হবে।

ব্যবসায়ীদের দাবি সম্পর্কে খুলনা সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আনিসুজ্জামান বলেন, সেতুটির নকশা, প্ল্যানসহ সবকিছুর অনুমোদন হয়ে গেছে। ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সেতুটি অন্য জায়গায় করা সম্ভব নয়। তবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যদি কিছু করতে পারে, সেটা আলাদা কথা।