ভৈরবে সাত ইউপির মধ্যে পাঁচটিতে নৌকার মনোনয়নে তৃণমূলের মতামত উপেক্ষিত

প্রতীকী ছবি

কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) মধ্যে পাঁচটিতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে তৃণমূলের মতামত উপেক্ষিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টজনেরা। পাঁচটিতে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে তৃণমূলের ভোটে দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় হওয়া মনোনয়নপ্রত্যাশীদের। এ নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

সাতটি ইউনিয়ন পরিষদ নিয়ে ভৈরব উপজেলা। এসব ইউপিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ২৩ ডিসেম্বর। দলীয় প্রার্থীর নামের তালিকা প্রস্তুত করতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ তৃণমূলের প্রত্যক্ষ ভোটের আয়োজন করে। পরবর্তী সময়ে ভোটে যাঁরা প্রথম হয়েছেন, তাঁদের নাম ১ নম্বরে রেখে একাধিক ব্যক্তির তালিকা করে কেন্দ্রে নামের প্রস্তাব পাঠানো হয়। স্থানীয় লোকজনের ধারণা ছিল, তৃণমূলে বিজয়ীরা নৌকা পেতে চলেছেন।

সেভাবেই এলাকায়ও প্রচার শুরু হয়ে যায়। গত সোমবার নৌকার প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হয়। তাতে দেখা যায়, কেবল শ্রীনগর ইউপিতে আবুল বাশার ও কালিকাপ্রসাদ ইউপিতে ফারুক মিয়ার ক্ষেত্রে তৃণমূলের দেওয়া রায় বহাল রয়েছে। বাকিগুলোতে নৌকা পেয়েছেন অন্যরা। ফারুক বর্তমান চেয়ারম্যান।

অন্য পাঁচ ইউপিতে নৌকা পাওয়া প্রার্থীরা হলেন শিবপুর ইউপিতে শফিকুল ইসলাম ও সাদেকপুর ইউপিতে সাফায়েত উল্লাহ। তাঁরা বর্তমান চেয়ারম্যান। এ ছাড়া শিমুলকান্দিতে মিজানুর রহমান। গজারিয়া ইউপিতে পেয়েছেন ফরিদ উদ্দিন খান ও আগানগর ইউপিতে হুমায়ুন কবির। তবে সাদেকপুর ইউপিতে তৃণমূলের ভোটে প্রথম হয়েছিলেন ফজলুল হক মাস্টার, আগানগর ইউপিতে শফিকুল ইসলাম, গজারিয়া ইউপিতে কাইসার আহমেদ ভূইয়া, শিমুলকান্দিতে আবদুল আজিজ ও শিবপুরে ফারুক উদ্দিন। বর্তমানে এসব মনোনয়ন নিয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে চলেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ছে।

সুরুজ মিয়া (৫৫) গজারিয়া ইউনিয়নের বাঁশগাড়ি গ্রামের বাসিন্দা। তিনি একজন কৃষক ও আওয়ামী লীগের কর্মী। তৃণমূলের ভোটে যাঁরা হেরেছেন, আবার যাঁরা মনোনয়ন পেয়েছেন, তাঁদের বিষয়ে সুরুজ বলেন, ‘কেউ কারও কাছে হারেনি। প্রত্যেকে প্রত্যেকের কাছে হেরেছে। সেটি ছিল টাকা।’

স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও ভোটার সূত্রে জানা যায়, দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত করতে তফসিল ঘোষণার আগেই আওয়ামী লীগে নির্বাচনী আমেজ শুরু হয়েছিল।

মোটরবাইক মহড়া ও নেতাদের সঙ্গে লবিং বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় নামেন মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। এই অবস্থায় তৃণমূলের ভোটের মাধ্যমে নামের তালিকা প্রস্তুত করার সিদ্ধান্ত হয়। শেষে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তৃণমূলের মতামত উপেক্ষিত হওয়া বিষয়টি মেনে নেয়নি একটি অংশ। এই অবস্থায় ধারণা করা হচ্ছে, মনোনয়নবঞ্চিতদের কেউ কেউ বিদ্রোহী হয়ে দলের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামবেন।

সাদেকপুর ইউপিতে তৃণমূলের ভোটে প্রথম হওয়া ফজলুল হক বলেন, ‘দল আমাকে নির্বাচন করেছে। সুতরাং দলীয় প্রতীক আমার পাওয়ার কথা।’ আগানগরে প্রথম হওয়া ব্যক্তি শফিকুল ইসলামের মন্তব্য, দলের সমর্থনকে উপেক্ষা করা হয়েছে। এতে লাভের চেয়ে ক্ষতি হতে পারে বেশি।

গজারিয়া ইউপিতে প্রথম হওয়া কাইসার আহমেদ ভূইয়া, শিমুলকান্দিতে আবদুল আজিজ ও শিবপুরে ফারুক উদ্দিনের ভাষ্য, তৃণমূলের ভোটের রায় কেন্দ্রে গিয়ে কী হয়ে যেতে পারে, এবার তা দেখা গেল।

তৃণমূলের ভোটে প্রথম না হয়েও দলের প্রতীক পাওয়া প্রার্থীদের বক্তব্য হলো, বিপুল পরিমাণ টাকা ও নানা কৌশলের প্রভাবে তৃণমূলের ভোটেও জালিয়াতি হয়েছে। সুতরাং তৃণমূলের ভোটে প্রথম হওয়া মানে দলের আস্থাভাজন ব্যক্তি হওয়া নয়।
শিবপুর ইউপিতে মনোনয়ন পাওয়া শফিকুল ইসলাম বর্তমান চেয়ারম্যান। তবে তিনি তৃণমূলের ভোটে উপেক্ষিত হয়েছিলেন। শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘টাকার খেলায় আমি তৃণমূলের কাছে হেরে গিয়েছিলাম। তবে কেন্দ্রে টাকা চলে না। ফলে আমি বের হয়ে এসেছি।’

সাদেকপুর ইউপির দলীয় মনোয়ন পাওয়া সাফায়েত উল্লাহ বলেন, ‘তৃণমূলে ষড়যন্ত্র হয়েছে। সেই কারণে হেরেছি। তবে সাধারণ মানুষের মধ্যে আমার গণজোয়ার ছিল। এই জোয়ার তৃণমূল টের না পেলেও কেন্দ্র পেয়েছে।’

সাতটির মধ্যে পাঁচটি ইউপিতে তৃণমূল উপেক্ষিত হওয়ার বিষয়ে ভৈরব পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতিক আহমেদের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রের নির্দেশনা ছিল একাধিক প্রার্থীর নামের তালিকা পাঠানোর। আমরা সেটি করেছি তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতে। মনে রাখতে হবে, আমরা নাম পাঠানোর মালিক হলেও নৌকা দেওয়ার মালিক কেন্দ্র।’ তবে আতিক আহমেদ স্বীকার করেন, তৃণমূলের মতামত উপেক্ষিত হওয়ায় দলের একাংশের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। টাকার খেলার বিষয়ে তাঁর মন্তব্য, ‘টাকার খেলা হলেও আমরা জানি না।’