মনোনয়ন পেতে আ.লীগের শতাধিক চেয়ারম্যান প্রার্থী ঢাকায়

নির্বাচন
প্রতীকী ছবি

লক্ষ্মীপুরের রায়পুর ও রামগঞ্জ উপজেলার ২০টি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী চেয়ারম্যান প্রার্থীরা সবাই এখন ঢাকায় অবস্থান করছেন। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম বিতরণ শুরু হয় গত শনিবার। ওই দিন থেকেই তাঁরা ঢাকায় রয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ১২০ জন মনোনয়নপ্রত্যাশীর নাম কেন্দ্রে জমা দিয়েছেন।

ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করবেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আগামীকাল রোববার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে দলটির স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের এক সভায় এ প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করার কথা রয়েছে।

১৪ অক্টোবর তৃতীয় ধাপে রায়পুর উপজেলার ১০ ও রামগঞ্জের ১০ ইউপি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। তফসিল অনুযায়ী ভোট গ্রহণ ২৮ নভেম্বর। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ২ নভেম্বর। বাছাইয়ের শেষ তারিখ ৪ নভেম্বর। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১১ নভেম্বর।

মনোনয়নপ্রত্যাশীদের বেশির ভাগ নেতাই দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে দৌড়ঝাঁপ করছেন। আশীর্বাদ ও সমর্থন পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন তাঁরা। অন্যদিকে প্রার্থীদের সমর্থকেরা শেষ মুহূর্তে এসে চুপচাপ রয়েছেন। তাঁরা তাকিয়ে আছেন কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের দিকে।

এদিকে এবার জেলায় ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থী নির্বাচনের জন্য তৃণমূলের মতামত নেওয়া হয়নি। এতে ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা।

রায়পুর ও রামগঞ্জের ছয়জন সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী বলেন, কেন্দ্রের নির্দেশনা রয়েছে তৃণমূলের মতামত বা ইউনিয়ন কমিটির নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে চেয়ারম্যান পদের জন্য প্রার্থী চূড়ান্ত করে তালিকা কেন্দ্রে পাঠানো। গত ইউনিয়ন নির্বাচনে বর্ধিত সভা করে চেয়ারম্যান প্রার্থীর তালিকা চূড়ান্ত করা হতো। গত ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত পৌরসভার মেয়র প্রার্থী নির্বাচনের সময়ও বর্ধিত সভা করে ভোটের মাধ্যমে চূড়ান্ত করা হয়। কিন্তু এবার বর্ধিত সভা এবং তৃণমূলের কোনো মতামত নেওয়া হয়নি। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক তালিকা চূড়ান্ত করেন। এ নিয়ে দলের তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়েছেন।

রামগঞ্জের করপাড়া ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবুল হক বলেন, আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী যাচাই-বাছাইয়ে তৃণমূলে মতামত নেওয়া হয়নি। এমনি তাঁর সঙ্গেও আলোচনা করা হয়নি। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক তাঁদের ইচ্ছেমতো তালিকা করে কেন্দ্রে জমা দিয়েছেন।

রামগঞ্জের চন্ডিপুর ইউপির আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী রাকিবুল হাসান বলেন, ‘দলের দূর সময়ে নেতা-কর্মীদের পাশে ছিলাম। নেতা-কর্মীরাও আমার সঙ্গে রয়েছেন। ঢাকায় অবস্থান করে কেন্দ্রীয় নেতাদের বিষয়টি জানাচ্ছি।’

রামগঞ্জের করপাড়া ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান মজিবুল হক বলেন, তিনিও ঢাকায় আছেন। চেষ্টা করছেন আবার মনোনয়নের জন্য।

রামগঞ্জের ভাট্রা ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান আবুল হোসেন বলেন, ‘মনোনয়নের জন্য ঢাকায় আছি। দলীয় নেতা-কর্মীরা আমার পক্ষে রয়েছেন। মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী।’ রায়পুর চর মোহনা ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান সফিক পাঠান বলেন, ‘গত ছয় দিন ধরে ঢাকায় আছি। আশা করছি, দল আমাকে মনোনয়ন দেবে।’

দলের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের ১০ কর্মী জানান, দলের অধিকাংশ নেতা-কর্মী কোনো না কোনো প্রার্থীর পক্ষে রয়েছেন। কে দলীয় মনোনয়ন পাচ্ছেন, তা এখন নিশ্চিত নয়। এ জন্য শেষ সময়ে এখন তাঁরা চুপচাপ। সবাই কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছেন।

জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মিয়া গোলাম ফারুক বলেন, রায়পুর ও রামগঞ্জে আওয়ামী লীগের দেড় শতাধিক নেতা চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপ্রত্যাশী রয়েছেন। তাঁরা বিভিন্ন ওয়ার্ডে পোস্টার-ব্যানার টানিয়ে নিজেদের সম্ভাব্য প্রার্থিতা জানান দিচ্ছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সম্ভাব্য প্রার্থী ও তাঁদের সমর্থকেরা প্রচারণা চালাচ্ছেন। জেলা কমিটি থেকে ১২০ জনের নামের তালিকা কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। তাঁরা সবাই এখন ঢাকায় অবস্থান করছেন। এখন সবাই কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি। দুই দিনের মধ্যে কেন্দ্র থেকে চূড়ান্ত নাম ঘোষণা করা হবে।

মাঠে নেই বিএনপি
এবার ইউনিয়ন নির্বাচন নিয়ে বিএনপির কোনো আগ্রহ নেই। কারণ হিসাবে জেলা বিএনপির সদস্যসচিব ও লক্ষ্মীপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র সাহাবুদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, এখন আগের রাতেই ভোট হয়ে যায়। ভোটের আগে নেতা-কর্মীদের এলাকা ছাড়া হতে হয়। তাই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে কারও মধ্যে আগ্রহ নেই।