‘মরে গেলেও দুঃখ নেই, মেয়েগুলোর একটা ঠাঁই হয়েছে’

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নাসিরনগর উপজেলায় আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় রোববার ভূমিহীন পরিবারের মধ্যে জমিসহ বাড়ির দলিল হস্তান্তর করা হয়। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন
ছবি: প্রথম আলো

রত্না বেগমের চার মেয়ে। ১০ বছর আগে ক্যানসারে ভুগে মারা গেছেন স্বামী। বাড়ি বাড়ি হেঁটে কসমেটিকস ও শাড়ি ফেরি করে বিক্রি করেন। ৪০০ টাকা বিক্রি করতে পারলে লাভ থাকে ১০০ টাকা। তার ওপর ভাড়া বাড়িতে থাকতে মাসে এক হাজার টাকা গুনতে হয়। অভাবের জন্য দুই মেয়েকে সরকারি শিশু পরিবারে দিয়েছেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদর উপজেলার বুধল ইউনিয়নের খাঁটিহাতা পূর্বপাড়া গ্রামের রত্না বেগমের দুঃখ এবার ঘুচেছে। মুজিব বর্ষ উপলক্ষে তিনি সরকারের দেওয়া জমিসহ পাকা ঘর পেয়েছেন। ইতিমধ্যে ওই নারীর নামে ২ শতাংশ খাসজমি দলিল করে দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। রোববার আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে জমি ও গৃহ প্রদান কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তাঁকে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘর দেওয়া হয়। তিনি সদর উপজেলার সুহিলপুর মৌজায় ঘর পেয়েছেন।

রত্না বেগম জানান, বড় মেয়ে চাঁদনী আক্তার (১৬) ও দ্বিতীয় মেয়ে সাদিয়া আক্তারকে (১১) অভাবের জন্য জেলার সরকারি শিশু পরিবারে দিয়েছে। স্বামী নেই, নেই ছেলেসন্তান। ১০টা বছর ধরে কষ্ট করছেন। তিনি বলেন, ‘পায়ের নিচে মাটি ছিল না। এখন হয়েছে। কোনো দিনও ভাবিনি জমি ও ঘরের মালিক হব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য শুক্রবার নামাজ আদায় করেছি। দুটি রোজা রেখেছি। এখন মরে গেলেও দুঃখ নেই। মেয়েগুলোর একটা ঠাঁই হয়েছে।’

রত্নার মতো ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ৬৮১ ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে মুজিব বর্ষ উপলক্ষে জমি ও ঘর দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলার ৬টি জায়গায় ১৪৫টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। রোববার দুপুরে জমি ও গৃহ প্রদান দ্বিতীয় পর্যায়ের কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়েছে। এরপর ১৪৫টি পরিবারকে জমির দলিল ও ভূমি বুঝিয়ে দেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পঙ্কজ বড়ুয়া। এ সময় সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফিরোজুর রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন, প্রেসক্লাবের সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক জাবেদ রহিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলায় ১৪৫টি ঘর, বিজয়নগরে ১৪৯টি, বাঞ্ছারামপুরে ৮৫টি, নবীনগরে ১৫টি, কসবায় ২০০টি, আখাউড়ায় ৫০টি, সরাইলে ৩১টি, আশুগঞ্জে ২০টি, নাসিরনগরে ৩১টি ঘর ও জমির দলিল হস্তান্তর করা হয়।
সদর উপজেলার জাঙ্গালের আশ্রয়ণ প্রকল্পে জমি ও গৃহ পেয়েছেন ছায়েরা বেগম। ১০ বছর আগে স্বামী খায়ের মিয়া অন্যত্র বিয়ে করে চলে যান। তিন ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে সংসার। বড় ছেলে জুনাইদ মিয়া (২০) রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। শাকিল মিয়া (১৫) ও রাজীব মিয়া (৬) চায়ের দোকানে থাকে। মেয়ে জান্নাতুলকে পাঁচ বছর আগে কোনোরকমে বিয়ে দিয়েছেন। ১৫ বছর ধরে রাধিকা গ্রামে অন্যের বাড়িতে ভাড়া থাকেন।

ছায়েরা বেগম বলেন, ‘স্বামী খাওন দিছে না। ফেলে চলে গেছে। সন্তানগুলো নিয়ে বেকায়দায় ছিলাম। পরে বাড়ি বাড়ি কাজ করা শুরু করি। বড় ছেলেটা রাজমিস্ত্রির কাজ করে। কিন্তু করোনার জন্য হেইডা বন্ধ। কোনোমতে সংসারটা চলতাছে। অনেক কষ্ট করছি। এখন ঘর পাইছি। কী যে আনন্দ লাগতাছে। বুঝাইতে পারুম না।’