মশা মারার ব্যাট থেকে বিস্ফোরণের সূত্রপাত

ফেনীতে গতকাল শুক্রবার রাতে বাসভবনের যে কক্ষে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে, তার পাশের কক্ষের জানালার দেয়াল ও গ্রিল ভেঙে পড়ে। ছবিটি শনিবার সকালেরপ্রথম আলো

রান্নাঘরের চুলা ভালোভাবে বন্ধ করা হয়নি। সেখান থেকে ক্রমাগত গ্যাস বের হচ্ছিল। সেই গ্যাস দরজা-জানালা বন্ধ ঘরে জমা হতে থাকে। এ সময় মশা মারতে ইলেকট্রিক ব্যাট ব্যবহার করা হয়। ব্যাটের স্পার্ক থেকে মুহূর্তেই ঘরে জমা গ্যাসে আগুন ধরে বিস্ফোরণ ঘটে। দগ্ধ হন বাসায় থাকা মা ও দুই মেয়ে। গতকাল শুক্রবার ফেনী পৌরসভার শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়কের শফিক ম্যানশনের পঞ্চম তলায় এ ঘটনা ঘটে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিটের উদ্ধৃতি দিয়ে ফেনীর পুলিশ সুপার (এসপি) খন্দকার নুরুন্নবী আজ শনিবার এ তথ্য জানান। দুপুরে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে এই সংবাদ ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়।

খন্দকার নুরুন্নবী বলেন, ফেনীর ফায়ার সার্ভিস ও ডিএমপির বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিট ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছে যে ওই বাসায় বোমা বিস্ফোরণের আলামত নেই। তারপরও পুলিশের অ্যান্টি টেররিজম (বোম ডিসপোজাল) ইউনিটের আরও একটি দল আসবে। তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখবে। তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে তাঁরা ধারণা করছেন যে গ্যাসের চুলা আগুনবিহীন অবস্থায় চালু ছিল। সেখান থেকে গ্যাস লিকেজ হতে হতে বন্ধ কক্ষগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। ইলেকট্রিক ব্যাট দিয়ে মশা মারার চেষ্টা করলে সেটি স্পার্ক করে। সেখান থেকে বিস্ফোরণ এবং মা ও দুই মেয়ে দগ্ধ হওয়ার ঘটনা ঘটে। বিস্ফোরণে ঘরের দরজা-জানালা ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। দগ্ধদের সঙ্গে কথা বলেও একই ধরনের তথ্য পাওয়া গেছে।

সংবাদ ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন ফেনী ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা জাকের হোসেন, ডিএমপির ৪ সদস্যের বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ দলের প্রধান মোদাচ্ছের কায়সার। এর আগে ৪ সদস্যের বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ দল ফেনী পৌঁছে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।

বিস্ফোরণে লন্ডভন্ড বাসার জিনিসপত্র
প্রথম আলো

গতকাল মধ্যরাতে ফেনী পৌরসভার ছয় তলা ভবনের পঞ্চম তলায় হঠাৎ বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। মুহূর্তে লন্ডভন্ড হয়ে যায় ওই বাসা। বিস্ফোরণে বাসার বারান্দার দেয়াল ও গ্রিল ভেঙে পাশের বাসার ছাদে পড়ে। পঞ্চম তলার অপর ইউনিট ছাড়াও ভবনের ৬ষ্ঠ, ৩য় ও ৪র্থ তলার সব ইউনিটের দরজা ভেঙে যায়। এ সময় বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বিস্ফোরণে পঞ্চম তলায় থাকা মা মেহেরুন নেছা (৪০) এবং দুই মেয়ে হাফসা ইসলাম (১৫) ও ফারাহ ইসলাম (১৮) দগ্ধ হন। মা ও হাফসার শরীরের ৬০ শতাংশ পুড়ে যায়। তাঁদের দুজনকে ঢাকায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁদের বাড়ি চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের করেরহাট ইউনিয়নের ছত্তরুয়া গ্রামে। মেহেরুন নেছার স্বামী মাহফুজুল ইসলাম সংযুক্ত আরব আমিরাতপ্রবাসী।

ফারাহ ও হাফসার দাদা আবুল কাশেম বলেন, মেয়েদের লেখাপড়ার জন্য প্রায় এক যুগ ধরে এই বাসায় থাকেন মেহেরুন নেছা ও তাঁর দুই মেয়ে। ফারাহ এবার এইচএসসি পাস করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির চেষ্টা করছেন। হাফসা স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী।