মাগুরায় বর্তমান ও সাবেক ইউপি সদস্যের বিরোধে প্রাণ গেল কলেজছাত্রের

নিহত রাজু আহমেদ (২২)
ছবি: সংগৃহীত

মাগুরার শ্রীপুর উপজেলায় এক কলেজছাত্রকে কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় উপজেলার তখলপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত ওই তরুণের নাম রাজু আহমেদ (২২)। তিনি তখলপুর গ্রামের আক্তার আলী শেখের ছেলে। তিনি ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের সম্মান শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী।

এই হত্যাকাণ্ডের জন্য শ্রীপুর উপজেলার সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা মকবুল হোসেন বিশ্বাস এবং সাবেক ইউপি সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা কাজী আবদুর রউফের বিরোধকে দায়ী করেছেন স্থানীয় লোকজন।

নিহত রাজু আহমেদের বাবা আক্তার আলী শেখ আজ মঙ্গলবার সকালে প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল বাড়ির পাশের চায়ের দোকানে বসে ছিলেন তিনি। এ সময় কাজী আবদুর রউফের লোকজন তাঁর ওপর হামলা চালান। তখন তিনি দৌড়ে বাড়ির ভেতর ঢুকে যান। এরপর ঘরে থাকা তাঁর ছেলে রাজু আহমেদ বেরিয়ে আসেন। এ সময় বাবা-ছেলে দুজনের ওপরই চড়াও হন প্রতিপক্ষের লোকজন। তিনি বলেন, ‘বাড়ির উঠানে ছেলেটার মাথায় কুড়াল দিয়ে কোপ দেয় তাঁরা। সঙ্গে সঙ্গেই সে ঢলে পড়ে। আমি ভ্যান চালিয়ে, কৃষিকাজ করে ছেলেটাকে মানুষ করছিলাম। আমরা একটা সামাজিক দল করি কিন্তু ছেলেটা এসব কিছুর মধ্যে ছিল না।’

আরও পড়ুন

গতকাল সন্ধ্যায় এ ঘটনার পর গুরুতর আহত অবস্থায় রাজুকে উদ্ধার করে ঢাকায় নেওয়ার পথে রাত ১১টার দিকে মারা যান তিনি। একই ঘটনায় আহত হয়েছেন তাঁর বাবা আক্তার আলী শেখ ও তাঁদের প্রতিবেশী কাবিল হোসেন। কাবিলকে মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

দুই পক্ষ ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তখলপুর গ্রামের একটি বড় অংশ দুটি সামাজিক দলে বিভক্ত। এর একটি পক্ষের নেতৃত্ব দেন মকবুল হোসেন বিশ্বাস। অন্য পক্ষে রয়েছেন কাজী আবদুর রউফ। গতকাল হামলার শিকার ব্যক্তিরা বর্তমান সদস্য মকবুল হোসেন বিশ্বাসের অনুসারী।

নিহত রাজু আহম্মেদের বাড়িতে স্বজনদের আহাজারি
ছবি: প্রথম আলো

স্থানীয় লোকজন জানান, গত ডিসেম্বরে ইউপি নির্বাচনের সময় থেকেই দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা চলছিল। চলতি সপ্তাহে গ্রামের একটি মাদ্রাসায় ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন ঘিরে সেটি চূড়ান্ত রূপ নেয়। তখলপুর হাতেম আলী মিয়া দাখিল মাদ্রাসা নামের ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতি হওয়ার দৌড়ে রয়েছেন মকবুল ও রউফ দুজনই। গত শনিবার ওই নির্বাচন নিয়ে ডাকা বৈঠক শেষে বাড়ি ফেরার পথে প্রতিপক্ষের হামলার শিকার হন সাবেক সদস্য কাজী আবদুর রউফ। আগে থেকে এক পা ভাঙা রউফের অন্য পায়ে হাতুড়িপেটা করা হয়। স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, এর পর থেকে আজ সকাল পর্যন্ত উভয় পক্ষের অর্ধশতাধিক বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়।

বর্তমান ইউপি সদস্য মকবুল হোসেন বিশ্বাস মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, বিরোধ তো আগে থেকেই চলছিল। তবে এই গ্রামে আগে কখনো খুন-খারাবির ঘটনা ঘটেনি। তাঁদের হামলায় নিরাপরাধ একটি ছেলে প্রাণ হারাল।

অভিযোগের বিষয়ে সাবেক ইউপি সদস্য কাজী আবদুর রউফ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আমার কিছু লোকজন জড়িত বলে শুনেছি। তবে তাঁদের ব্যক্তিগত সমস্যা ছিল হয়তো। অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে এ ঘটনা ঘটে গেছে। এর দায় মকবুল (বর্তমান ইউপি সদস্য) ভাইয়ের। কারণ, শুরুটা তিনিই করেছেন।’

হত্যাকাণ্ডের পর থেকে এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। দুই পক্ষেরই কিছু লোকজন গা ঢাকা দিয়েছেন।

শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শুকদেব রায় প্রথম আলোকে বলেন, দুই পক্ষ আগে থেকেই বিরোধে জড়িয়ে ছিল। তারই জেরে এ হত্যাকাণ্ড। পরিস্থিতি এখন শান্ত। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। নিহত যুবকের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। তিনি জানান, আজ সকাল ১০টা পর্যন্ত এ ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি। তবে জড়িত সন্দেহে তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ।