মাগুরা পৌরসভা নির্বাচনের আগেই মাঠছাড়া বিএনপি

বিএনপির লোগো

মাগুরায় মামলার কবলে পড়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের কেউ কারাগারে, কেউ গ্রেপ্তারের ভয়ে এলাকাছাড়া। এ অবস্থায় পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা অনেকটা ফাঁকা মাঠে গোল দেওয়ার অপেক্ষায়। বিএনপির নেতা-কর্মীরা বলছেন, নির্বাচনের আগে মাঠছাড়া করতেই তাঁদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা দেওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি ক্ষমতাসীন দলের দুজন কর্মীর করা দুটি মামলায় বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী আসামি হয়েছেন। এসব মামলায় দলটির এক ডজনের বেশি নেতা ইতিমধ্যে কারাগারে রয়েছেন। আর গ্রেপ্তার এড়াতে গা ঢাকা দিয়েছেন অন্যরা।

বিএনপির নেতারা বলছেন, আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপিকে চাপে রাখতে ও মাঠছাড়া করতেই হয়রানিমূলক এসব মামলা দিয়েছেন ক্ষমতাসীনরা। মামলা দুটিতে বিএনপির দুজন সম্ভাব্য মেয়র পদপ্রার্থী ও একাধিক কাউন্সিলর প্রার্থীকে আসামি করা হয়েছে।

তবে এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আ ফ ম আবদুল ফাত্তাহ বলেন, ‘বিএনপির নেতাদের অভিযোগ ঠিক নয়। বিচ্ছিন্নভাবে কেউ হামলা–মামলা করলে সেই দায় দলের ওপর দেওয়া ঠিক নয়। সুনির্দিষ্টভাবে তাঁরা (বিএনপির নেতারা) যদি কোনো অভিযোগ দেন, সেটা আমরা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে সমাধান দেব। আমরা চাই, সবার অংশগ্রহণে নির্বাচন হোক।’

নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী, ১৬ জানুয়ারি মাগুরা পৌরসভা নির্বাচনে ভোট নেওয়া হবে। ইতিমধ্যে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ শুরু হয়েছে। ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া যাবে। মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ২২ ডিসেম্বর। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ২৯ ডিসেম্বর।

সম্প্রতি ক্ষমতাসীন দলের দুজন কর্মীর করা দুটি মামলায় বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী আসামি হয়েছেন। এসব মামলায় দলটির এক ডজনের বেশি নেতা ইতিমধ্যে কারাগারে রয়েছেন। আর গ্রেপ্তার এড়াতে গা ঢাকা দিয়েছেন অন্যরা।
সরকারবিরোধী বক্তব্য এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি পোড়ানোর অভিযোগে বিএনপির ১৮ নেতার নামে গত ১১ অক্টোবর সদর থানায় নাশকতার মামলা হয়।

থানা-পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সমাবেশে সরকারবিরোধী বক্তব্য এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি পোড়ানোর অভিযোগে বিএনপির ১৮ নেতার নামে গত ১১ অক্টোবর সদর থানায় নাশকতার মামলা হয়। মামলাটি করেন জেলা ছাত্রলীগের শিক্ষা ও পাঠচক্রবিষয়ক সাবেক সম্পাদক মীর রাশেদ।

আসামিদের মধ্যে আছেন সদর থানা বিএনপির আহ্বায়ক কুতুবউদ্দিন, পৌর বিএনপির আহ্বায়ক মাসুদ হাসান খান, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি আবদুর রহিম, সাধারণ সম্পাদক এস এম আবু তাহের, যুবদলের সভাপতি ওয়াসিকুর রহমান, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আশারফুজ্জামান ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম জাহিদ। এ মামলায় মাসুদ হাসানসহ ১৩ আসামি বর্তমানে কারাগারে।

বিস্ফোরকদ্রব্য আইন ও হত্যার উদ্দেশ্যে কুপিয়ে জখমের অভিযোগে গত ২৯ নভেম্বর বিএনপির নেতা-কর্মীদের নামে আরও একটি মামলা হয় থানায়। মো. মারুফ নামের যুবলীগের এক কর্মী মামলাটি করেন। এতে জেলা যুবদলের সভাপতি ওয়াসিকুর রহমান ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আশরাফুজ্জামানসহ ৪২ নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। মামলাটি হওয়ার পর আসামিরা গা ঢাকা দিয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কেউ গ্রেপ্তার হননি।

১ অক্টোবর করা মামলায় যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা আসলে ঘটেনি। আর দ্বিতীয় যে মামলা হয়েছে, সেখানে আমাদের নেতা-কর্মীর যোগসূত্রই নেই। এটা আসলে নির্বাচনের মাঠ থেকে বিএনপিকে দূরে রাখতে সরকারি দলের কৌশল।
আলী আহমেদ, আহ্বায়ক, জেলা বিএনপি

দলীয় সূত্রে জানা যায়, আসামিদের মধ্যে সম্ভাব্য মেয়র পদপ্রার্থী দুজন হলেন পৌর বিএনপির আহ্বায়ক মাসুদ হাসান খান ও জেলা যুবদলের সভাপতি ওয়াসিকুর রহমান। গণসংযোগেও নেমেছিলেন তাঁরা। আর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আশরাফুজ্জামান ও ১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. তানজেল হোসেন দুটি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদপ্রার্থী।

বিএনপির নেতারা বলেন, গত ২৭ নভেম্বর সন্ধ্যায় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীরা শহরে প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া করেন। এ সময় জেলা বিএনপির কার্যালয়ে ভাঙচুর ও বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। একই সময় ভায়নার মোড়ে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীদের হামলায় মাহাবুবুর রহমান নামের যুবদলের এক কর্মী আহত হন। তিনি বর্তমানে ঢাকায় চিকিৎসাধীন। তিনিও কাউন্সিলর পদপ্রার্থী।

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আলী আহমেদ বলেন, ১১ অক্টোবর করা মামলায় যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা আসলে ঘটেনি। আর দ্বিতীয় যে মামলা হয়েছে, সেখানে আমাদের নেতা-কর্মীর যোগসূত্রই নেই। এটা আসলে নির্বাচনের মাঠ থেকে বিএনপিকে দূরে রাখতে সরকারি দলের কৌশল। এমন পরিস্থিতিতে বিএনপি কীভাবে নির্বাচনে অংশ নেবে, সেটাই বড় প্রশ্ন।