মাদারীপুরে জমি নিয়ে বিরোধে প্রতিপক্ষের গুলিতে একজন নিহত
মাদারীপুরে জমিতে ধান লাগানোকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের বন্দুকের গুলিতে এক যুবক নিহত হয়েছেন। আজ শনিবার সকালে কালকিনি উপজেলার ডাসার থানার বালিগ্রাম ইউনিয়নের পশ্চিম বোতলা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহতের নাম সোহাগ তালুকদার (৩২)। তিনি বালিগ্রাম ইউনিয়নের পশ্চিম বোতলা এলাকার সামচুল হক তালুকদারের ছেলে।
এ ঘটনায় আজ বেলা ১১টার দিকে নিহত সোহাগের বাবা সামচুল হক তালুকদার বাদী হয়ে ডাসার থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন। আসামিরা হলেন পশ্চিম বোতলা গ্রামের মৃত আবদুল হাই মোল্লার ছেলে আহাদ মোল্লা ও আরিফ মোল্লা, মৃত মফিজউদ্দিনের ছেলে বালিগ্রাম ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও বালিগ্রাম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল মতিন মোল্লা, মতিন মোল্লার ছেলে সোহাগ মোল্লা ও মনিরুজ্জামান। এ ছাড়া আরও ৩ থেকে ৪ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
এদিকে এ ঘটনায় তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে প্রধান অভিযুক্ত আহাদ মোল্লাকে (৪৬) বন্দুকসহ গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি একই এলাকার মৃত আবদুল হাই মোল্লার ছেলে। আহাদ পরে বিকেলে মাদারীপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। মাদারীপুর আদালত পুলিশের পরিদর্শক রমেশ চন্দ্র দাস বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। পরে আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এ ঘটনায় তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে প্রধান অভিযুক্ত আহাদ মোল্লাকে (৪৬) বন্দুকসহ গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আহাদ পরে বিকেলে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
এজাহার ও স্থানীয় সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরে পশ্চিম বোতলা এলাকার আহাদ মোল্লার সঙ্গে সামচুল হক তালুকদারের জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল। আজ ভোরে ওই জমিতে শ্রমিক নিয়ে ধান রোপণ করতে যান সামচুল হকের ছেলে সোহাগ। এতে বাধা দেন আহাদ ও তাঁর লোকজন। একপর্যায়ে উভয় পক্ষের লোকজনের মধ্যে কথা–কাটাকাটি হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সোহাগের দিকে বন্দুকের গুলি চালান আহাদ। এ সময় আহত হন আরও দুজন। পরে গুরুতর অবস্থায় সোহাগকে উদ্ধার করে মাদারীপুর জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে পাঠানো হয় ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখান থেকে ঢাকায় নেওয়া হলে পথে মারা যান সোহাগ। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পুলিশ। পরে অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে প্রধান আসামি আহাদ মোল্লাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত বন্দুকটি জব্দ করে পুলিশ।
নিহতের বাবা ও মামলার বাদী সামচুল হক তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘পরিকল্পিতভাবে আহাদ আমার পোলাডারে গুলি কইরা মাইরা ফালাইছে। জমির দখলের জন্য ওরা আমার পোলাডারে পাখির মতো গুলি কইরা মারছে। আমার পোলাডারে যারা মারছে, আমি তাগের বিচার চাই।’
মামলার আসামি বালিগ্রাম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও আহাদের চাচা আবদুল মতিন মোল্লা বলেন, ‘আহাদ আত্মরক্ষার্থে তার লাইসেন্সধারী বন্দুক দিয়ে গুলি করে। এটা হয়তো তার ভুল। কিন্তু আমরা কোনো অপরাধ করিনি। আমাদের ফাঁসানোর জন্য ও রাজনৈতিক কারণে আমার ও আমার ছেলের নাম উল্লেখ করে মামলা দিয়েছে। আমরা এ ঘটনায় পুলিশের কাছে সুষ্ঠু তদন্ত কামনা করছি।’
ডাসার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাসানুজ্জামান বলেন, জমিজমা নিয়ে বিরোধের জেরে এই হত্যাকাণ্ড। এ ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত আহাদকে বন্দুকসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আসামি গুলি করার কথা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন। তাঁকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ওসি আরও বলেন, আহাদের ব্যবহৃত বন্দুকটি লাইসেন্স করা। এটি একনলা একটি বন্দুক। এ ছাড়া গুলির খোসা ও একটি তাজা গুলিও পুলিশ উদ্ধার করেছে।