মাদারীপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষের কক্ষে ছাত্রলীগের ভাঙচুর

ছাত্রলীগের ভাঙচুর করা মাদারীপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষের কক্ষ। সোমবার দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

মুজিব বর্ষ উপলক্ষে মাদারীপুর সরকারি কলেজের একটি স্মরণিকার খসড়ায় স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের ছবি ও বাণী না থাকায় অধ্যক্ষের কক্ষে ভাঙচুর করেছে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের একাংশ। কলেজের মূল ভবনে আজ সোমবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর থেকে কলেজ ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

মাদারীপুর সরকারি কলেজ ও পুলিশ সূত্র জানায়, মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে মাদারীপুর সরকারি কলেজ থেকে একটি স্মরণিকা বের করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এতে স্থানীয় সংসদ সদস্য, জনপ্রতিনিধিদের ছবি ও বাণী দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কলেজের এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন শিক্ষক এবং সাধারণ শিক্ষার্থীরাও। তবে ভিন্নমত প্রকাশ করেন কলেজ ছাত্রলীগের একাংশের নেতা–কর্মীরা। এর জের ধরে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের একাংশের সাধারণ সম্পাদক ফরিদ সরদারের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে অধ্যক্ষ জামান মিয়ার কক্ষ ঘেরাও করেন নেতা–কর্মীরা। পরে তাঁরা অধ্যক্ষের কক্ষে প্রবেশ করে চেয়ার, টেবিল ও গ্লাস ভাঙচুর করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

কলেজের অধ্যক্ষ জামান মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে একটি স্মরণিকা বের করা নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান নেয় ছাত্রলীগের একটি অংশ। তারা হঠাৎ করে এসে ভাঙচুর করে চলে গেছে। আজ যাঁরা এ কাজ করেছেন, তাঁদের মধ্যে আমাদের কলেজের ছাত্রও আছেন, আবার বাহিরের ছাত্রও আছেন। আমরা সবাইকে চিহ্নিত করতে পারিনি।’

জামান মিয়া আরও বলেন, ‘স্মরণিকা নিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য শাজাহান খান বলেছিলেন, যাঁরা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, তাঁদের ছবি ও বাণী থাকবে। তাঁর এ কথার বিপক্ষে অবস্থান নেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম সমর্থিত ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা। এ ঘটনার পর জেলা ছাত্রলীগের দুটি পক্ষই কলেজে এসেছে। তারা আলোচনায় বসতে চায়। এ জন্য তারা সময় নিয়েছে। আগামী শনিবার তারা আলোচনায় বসবে। তাদের সঙ্গে আলোচনা ফলপ্রসূ না হলে আমরা আইনি সহযোগিতা নেব। আমরা আপতত থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ দিইনি।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজের জ্যেষ্ঠ এক শিক্ষক প্রথম আলোকে বলেন, জেলা রাজনীতির মতো কলেজেও ছাত্রলীগের দুটি পক্ষ সক্রিয়। কলেজে সংসদ সদস্য শাজাহান খান সমর্থিত একটি গ্রুপ, অন্যটি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতা আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের। স্মরণিকায় নাছিম গ্রুপের নেতা–কর্মীরা বাহাউদ্দিন নাছিমের ছবি ও বাণী দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে শাজাহান খান আপত্তি জানালে কলেজের অধ্যক্ষ নাছিমের ছবি ও বাণী বাদ দেন। এতেই ক্ষুব্ধ হয়ে ছাত্রলীগ নেতা ফরিদসহ তাঁর লোকজন কলেজে ঢুকে ভাঙচুর করেন।

অধ্যক্ষের কক্ষে ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী নামজুল হোসেন বলেন, ‘অধ্যক্ষের কক্ষে ঢুকে ভাঙচুর! অপরাধীদের কতটা দুঃসাহস হলে এমন ঘটনা ঘটতে পারে, সেটাই আমাদের চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। যাঁরা এমন জঘন্য কাজটি করেছেন, আমরা তাঁদের শাস্তি চাই। একই সঙ্গে কলেজের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা চাই।’

তরিকুল ইসলাম নামের বাংলা বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ছাত্রলীগের কিছু কথিত নেতা–কর্মীর কারণে কলেজের পরিবেশ এখন আর শান্তিপূর্ণ নেই। যাঁরা অধ্যক্ষের কক্ষে ভাঙচুর করেছেন, আমরা তাঁদের বিচারের আওতায় দেখতে চাই। তাঁদের বিচার না হলে কলেজে আবারও এ ধরনের ঘটনা ঘটবে।’

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের একাংশের সাধারণ সম্পাদক ফরিদ সরদার। তিনি বলেন, ‘সরকারি সম্পদ ভাঙচুরের বিপক্ষে আমিও। আমি এই ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িত নই। এখানে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছিলেন। তাঁরা ভাঙচুর করেছেন কি না, সেটা দেখেন। আর অধ্যক্ষের কক্ষে ভাঙচুর হলো কেন, তা অধ্যক্ষ স্যারের সঙ্গে কথা বলেন।’

মাদারীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য শাজাহান খান সমর্থিত কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হোসেইন প্রথম আলোকে বলেন, মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে দীর্ঘদিন ধরে কলেজ থেকে একটি স্মরণিকা বের করতে অধ্যক্ষ প্রতিনিয়ত তাঁদের নিয়ে বসেছেন। তিনি চেয়েছেন সুন্দর ও বির্তকহীন একটি স্মরণিকা বের করতে। কিন্তু ছাত্রলীগের একটি পক্ষের নেতা–কর্মীরা অযৌক্তিক কিছু দাবি তুলে কলেজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চান। তাঁরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করে ছাত্রলীগ করেন না।

খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে বলে জানিয়েছেন মাদারীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনোয়ার হোসেন চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। কলেজের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পেলেই আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব।’