মানসিক ভারসাম্যহীন ভাইয়ের আঘাতে ছোট ভাইয়ের মৃত্যু
মানসিক ভারসাম্যহীন আনিসকে গোসল করানো, ওষুধ খাওয়ানো, ঘুম পাড়ানো সবই করতেন সাদ্দাম। দুই ভাইয়ে বয়সের ব্যবধান ১০ বছর। তারপরও সাদ্দামের কথামতোই সব করতেন বড় ভাই আনিস (৩৫)। সেই আনিসের লাঠির আঘাতে মৃত্যু হয়েছে ছোট ভাই সাদ্দামের।
রোববার রাত ৯টার দিকে ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার জাহাপুর ইউনিয়নের দাড়ির পাড় গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। আনিসের বাবার নাম আলতাফ শেখ। গত ২২ জুলাই মারা যান আলতাফ। তাঁর ছয় ছেলের মধ্যে চতুর্থ ছেলে আনিস শেখ। প্রায় ১০ বছর যাবৎ মানসিক ভারসাম্যহীন তিনি। পঞ্চম ছেলে সাদ্দাম শেখ (২৫)। তিনি কৃষিকাজ করেন। গত ফেব্রুয়ারি মাসে বিয়ে করেছিলেন সাদ্দাম।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, পাবনা থেকে প্রতি সপ্তাহে এক চিকিৎসক আসেন মধুখালীতে। তিনি মানসিক রোগীদের ব্যবস্থাপত্র দেন। ওই চিকিৎসকের রোগী ছিলেন আনিস। চিকিৎসকের দেওয়া ব্যবস্থাপত্র দেখে তাঁকে সময় করে ওষুধ খাওয়ানোর কাজ সাদ্দামই করতেন। তবে কঠোর বিধিনিষেধের জন্য বেশ কিছুকাল আনিসের চিকিৎসার ব্যাঘাত ঘটে। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে আনিস হয়ে পড়েছিল বেপরোয়া।
মধুখালী পুলিশ সূত্রে জানা যায়, রোববার রাত ৯টার দিকে সাদ্দাম আনিসকে গোসল করাতে বাড়ির টিউবওয়েলপাড়ে নিয়ে যান। কিন্তু আনিস গোসল করতে অস্বীকার করেন। সাদ্দাম জোর করলে আনিস দ্রুত সরে গিয়ে একটি বাঁশ দিয়ে সাদ্দামের মাথার বাড়ি দিয়ে পালিয়ে যান। ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর রাত সাড়ে ১০টার দিকে সাদ্দামকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
এ ঘটনায় সাদ্দামের আরেক ভাই মো. আরিফ বাদী হয়ে আনিসকে একমাত্র আসামি করে একটি মামলা করেন। ময়নাতদন্ত শেষে সাদ্দামের লাশ সোমবার বিকেলে স্বজনদের হাতে তুলে দেয় পুলিশ।
সাদ্দাম শেখের বড় ভাই আওয়াল শেখ জানান, আনিস দীর্ঘদিন যাবৎ মানসিক রোগী। তাঁকে দেখাশোনা করতেন সাদ্দাম। মাঝেমধ্যেই তিনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলতেন।
নিহত সাদ্দাম শেখের স্ত্রী মদিনা বেগম বলেন, ‘আমার কী সর্বনাশ হইয়া গেলে! আমাদের বিয়া হইছে মাত্র ছয় মাস। এর মধ্যেই স্বামীকে হারাতে হলো। আমি এখন কোথায় যাব, কী নিয়া বাঁচব?’
মধুখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহীদুর ইসলাম বলেন, মামলার একমাত্র আসামি আনিসকে রোববার রাতেই গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি রাতে থানাহাজতে থাকার সময় হাজতের সব লাইট ভেঙে ফেলেন। সকালে সাদ্দাম সম্পর্কে জানতে চাইলে আনিস বলেন, ‘আমার ভাই সাদ্দাম কোথায় আছে? আমি সাদ্দামকে দেখতে যাব। অনেক অন্যায় করেছি আমি। ওর মাথায় বাঁশ দিয়া বাড়ি দিচ্ছি। আমি ওর কাছে মাফ চাব।’
ওসি আরও বলেন, আনিসকে সোমবার দুপুরে জেলার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।