মানুষকে সচেতন করতে ছুটছেন ব্র্যাকের কর্মীরা

করোনা প্রতিরোধে ব্র্যাকের স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা কর্মসূচির অধীন তিন মাসব্যাপী নেওয়া কর্মসূচির আওতায় এ কার্যক্রম চলছে।

বাড়ি বাড়ি গিয়ে মাস্ক বিতরণ করছেন ব্র্যাকের স্বাস্থ্যকর্মীরা। গত রোববার সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বাঁশদাহ মাঝেরপাড়া গ্রামে।
ছবি: প্রথম আলো

একটি বাড়ির উঠানে বস্তা পেতে বসে আছেন একদল নারী। তাঁদের মুখোমুখি বসা স্বাস্থ্যকর্মী নাছিমা খাতুন। মাস্ক ব্যবহারের নিয়ম, করোনা ঠেকাতে কীভাবে হাত ধুতে হয়, করোনার লক্ষণ দেখা দিলে কী করণীয়, করোনাকালে অন্তঃসত্ত্বাদের বিশেষ যত্নের বিষয়ে একে একে বলে যাচ্ছেন নাছিমা। তিনি করোনা প্রতিরোধে বাড়ির অন্যদের সচেতন করতেও পরামর্শ দিচ্ছেন, বিতরণ করছেন মাস্ক।

১ আগস্ট সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বাঁশদাহ মাঝেরপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা গেল এ দৃশ্য। করোনা প্রতিরোধে মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে এভাবেই সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের স্বাস্থ্যকর্মীরা। সংস্থার স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা কর্মসূচির অধীন করোনা প্রতিরোধে তিন মাসব্যাপী নেওয়া কর্মসূচির আওতায় এ কার্যক্রম চলছে। ‘করোনা প্রতিরোধে সামাজিক দুর্গ’ নামে গত জুনে শুরু হওয়া এ কর্মসূচি চলবে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত।

ব্র্যাকের সাতক্ষীরা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সচেতনতামূলক কার্যক্রমের পাশাপাশি ব্র্যাকের চিকিৎসকদের মাধ্যমে টেলিমেডিসিন সেবা দেওয়া হচ্ছে প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষকে। জনসাধারণকে টিকা নেওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করছেন ব্র্যাকের কর্মীরা। প্রয়োজনে তাঁদের টিকার নিবন্ধনও করে দিচ্ছেন তাঁরা। জেলার ৭টি উপজেলার ৭৮টি ইউনিয়নে এসব কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে ব্র্যাক। জেলায় এ পর্যন্ত একাধিকবার ব্যবহারযোগ্য ৬ লাখ ৯০ হাজার ৭৫০টি মাস্ক বিতরণ করা হয়েছে। আরও ১ লাখ ৪৫ হাজার ৭০০টি মাস্ক বিতরণ করা হবে। এ কর্মসূচি বাস্তবায়নে ব্র্যাক কর্মীদের পাশাপাশি জেলার ২২৯টি কমিউনিটি ক্লিনিকের ৬৭০ জন নার্স, ৬৭ জন স্বাস্থ্যকর্মী, ২৫ জন স্বেচ্ছাসেবী ও ১৬ জন কমিউনিটি স্বেচ্ছাসেবীরা কাজ করছেন।

ব্র্যাকের সাতক্ষীরা সদরের এলাকা ব্যবস্থাপক (স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্য কর্মসূচি) আতাউর রহমান জানান, তাঁদের কর্মীরা মাস্ক বিতরণের পাশাপাশি বাড়ি বাড়ি ঘুরে ও জনসমাগম স্থানে মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করছেন। অন্তঃসত্ত্বাদের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার পাশাপাশি করোনার উপসর্গ থাকা রোগীদের টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে চিকিৎসাসেবার আওতায় আনা হচ্ছে।

সপ্তাহে দুই দিন করে ব্র্যাকের স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়িতে এসে খোঁজখবর নেন। তাঁরা পরামর্শ দিয়ে থাকেন করোনাকালে কীভাবে চলতে হবে। রক্তচাপ পরীক্ষা করেন।
রাশিদা খাতুন, বাঁশদাহ মাঝেরপাড়ার বাসিন্দা

বাঁশদাহ ইউনিয়নে দায়িত্বরত স্বাস্থকর্মী নাছিমা খাতুন জানান, প্রতি মাসে ইউনিয়নে স্বাস্থ্য ফোরামের ২০টি সভা করেন তিনি। এসব সভায় স্থানীয় নারীরা অংশ নেন। তাঁদের মাধ্যমে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। জ্বর, সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্ট, গলাব্যথা দেখা দিলে পরীক্ষা করার কথা বলা হচ্ছে। করোনা শনাক্ত হলে তাঁদের পাঠানো হচ্ছে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সবাইকে করোনার টিকা নিতে উদ্ধুদ্ধ করা হচ্ছে।

বাঁশদাহ মাঝেরপাড়ার অন্তঃসত্ত্বা রাশিদা খাতুন (২৪) বলেন, সপ্তাহে দুই দিন করে ব্র্যাকের স্বাস্থ্যকর্মীরা তাঁদের বাড়িতে এসে তাঁর খোঁজখবর নেন। তাঁরা পরামর্শ দিয়ে থাকেন করোনাকালে কীভাবে চলতে হবে। রক্তচাপ পরীক্ষা করেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ও মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দেন।

বাঁশদাহ থেকে ফেরার পথে আবাদেরহাট এলাকায় দেখা যায়, যাঁরা মাস্ক ছাড়া বাইরে বের হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে মাস্ক বিতরণ করছেন দুজন তরুণ। ইমরান হোসেন ও আলিমুল হক নামের ওই দুই তরুণ জানান, ব্র্যাকের স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে দেড় মাসের বেশি সময় ধরে মাস্ক বিতরণ করছেন। জনসমাগম স্থানে ও রাস্তার মোড়ে মোড়ে তাঁরা মাস্ক বিতরণ করেন।

ব্র্যাকের স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা কর্মসূচির পরিচালক মোর্শেদা চৌধুরী বলেন, এ কর্মসূচিতে ৪১টি বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) অংশ নিচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সার্বিক তত্ত্বাবধানে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, এসকেএস ফাউন্ডেশন, দুস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ওয়াটার এইড বাংলাদেশ ও ব্র্যাক সার্বিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে আছে। তিনি জানান, চারটি স্তম্ভের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। সেগুলো হলো করোনার প্রতিরোধমূলক সচেতনতা তৈরি, মাস্ক বিতরণ, রোগ শনাক্তকরণ ও ব্যবস্থাপনা এবং টিকা নিয়ে সচেতনতা তৈরি।