মানুষের পাশে দাঁড়াতে চেয়েছিলেন মাইশা

সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত মাইশা মমতাজ মীমের কবরের পাশে বাবা নূর মোহাম্মদ মামুন। ছবিটি আজ রোববার সকালে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক এলাকায় তোলা
ছবি: প্রথম আলো

সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাইশা মমতাজ মীমের পরিবার উত্তরায় বসবাস করলেও তাঁদের বাড়ি গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক এলাকায়। তাঁর মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকে প্রতিদিনই সমবেদনা জানাতে বাড়িতে আসছেন আশপাশের মানুষ ও আত্মীয়স্বজন। সন্তান হারানোর শোক সইতে পারছেন না মাইশার মা-বাবা। স্বজনেরা মানতে পারছেন না এমন মৃত্যু।

আরও পড়ুন

আজ রোববার সকালে মৌচাক চেয়ারম্যানবাড়ি রোডে মাইশাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়িটির দ্বিতীয় তলায় থাকেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। ঘরে ঢুকতেই সামনে সারি করে সাজানো মাইশার স্কুল-কলেজের পুরোনো বই। এর বাঁ পাশেই ফ্রেমে বাঁধাই করা মা-বাবা, বোন ও মাইশার একটি ছবি। পাশেই বসার কক্ষে লোকজনের সঙ্গে কথা বলছেন তাঁর বাবা নূর মোহাম্মদ। পাশের একটি খাটে মা ও দাদি বাকরুদ্ধ হয়ে বসে আছেন। মাইশা নেই, তিনি আর কোনো দিন ফিরবেন না—এই সত্য মেনে নিতে পারছে না তাঁর পরিবার।

রাজধানীর খিলক্ষেতে উড়ালসড়কে গত শুক্রবার সকাল সাড়ে সাতটার দিকে দুর্ঘটনায় নিহত হন মাইশা। তিনি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ষষ্ঠ সেমিস্টারের শিক্ষার্থী ছিলেন। ছুটির দিনে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে উত্তরার বাসা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছিলেন। খিলক্ষেত উড়ালসড়ক দিয়ে ৩০০ ফুট যাওয়ার পথে তিনি দুর্ঘটনার শিকার হন।

আরও পড়ুন

মাইশা মমতাজের বাবা নূর মোহাম্মদ প্রথম আলোকে বলেন, ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার যোগ্যতা থাকলেও ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হয়েছিল মাইশা। মানুষের পাশে থাকার প্রবল ইচ্ছা ছিল তাঁর। সে বলত, ‘আমাদের তো যথেষ্ট টাকাপয়সা আছে, আমার টাকাপয়সা নিজের জন্য প্রয়োজন নেই। যা কিছু উপার্জন করব, সবটুকু গরিব–অসহায়দের মাঝে বিলিয়ে দেব।’

মাইশার স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে তাঁর বাবা আরও বলেন, ‘রাস্তার পাশে বা বাজারে বৃদ্ধ কিংবা অসহায় নারী কেউ কিছু বিক্রি করছে—এমনটা মাইশার চোখে পড়লেই সব কিনে বাসায় নিয়ে আসত। প্রয়োজন নেই, তবু কেন কেনা হয়েছে জানতে চাইলে মাইশা বলত, বাবা, ওদের এভাবে বসে থাকতে দেখে আমার অনেক খারাপ লাগে। আমার কাছে টাকা ছিল, তাই কিনে এনেছি। মাইশার আরেকটি ব্যাপার ছিল, ১০ টাকা রিকশাভাড়া কখনো সে ১০ টাকা দিত না। ১০ টাকার ভাড়া ৫০, কখনো ১০০ টাকা দিয়ে দিত।’

আরও পড়ুন

মাইশা মমতাজ পরিবারের বড় মেয়ে। মাইশা তাঁর বাবার প্রতিষ্ঠিত কালিয়াকৈরের মৌচাক আইডিয়াল পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করেন। এরপর ভর্তি হন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে।

মাইশার স্কুলশিক্ষক আবুল কালাম বলেন, মাইশা মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলেন। দুই বোনের মধ্যে মাইশা বড়। তাঁরা দুজনই পড়াশোনায় মনোযোগী ছিলেন।

এদিকে ওই দুর্ঘটনার সময়ের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ওই ভিডিওতে দেখা যায়, মাইশা উড়ালসড়কের এক পাশ দিয়ে স্কুটি চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় পেছন থেকে বড় একটি কাভার্ড ভ্যান ওই স্কুটির পেছনে ধাক্কা দেয়। এতে কাভার্ড ভ্যানের চাকার নিচে চাপা পড়েন মাইশা। এরপর কাভার্ড ভ্যানটি একটু সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। কাভার্ড ভ্যানের ভেতর থেকে চালক বা সহযোগী উঁকি দিয়ে সেই দৃশ্য দেখেন। এরপরই দ্রুত সেটি সেখান থেকে সটকে পড়ে। পরে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বরে (৯৯৯) ফোন পেয়ে পুলিশ মাইশার মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে পাঠায়।

আরও পড়ুন