মুকুলে ছেয়ে গেছে বাগান, ভালো ফলনের আশা

বৈশাখের শেষভাগে বাজারে দেখা মিলবে লাল টসটসে লিচুর। দিনাজপুরে প্রথম ভাগে পাওয়া যাবে বোম্বাই ও মাদ্রাজি লিচু।

লিচুগাছে কচি পাতার ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে মুকুল। গত শনিবার দিনাজপুর সদর উপজেলার রামসাগর এলাকায়
প্রথম আলো

মাঘের শেষ থেকে লিচুগাছে তামাটে পাতার ফাঁকে উঁকি দিতে শুরু করেছে সোনালি রঙের মুকুল। বোম্বাই, বেদানা, মাদ্রাজি, চায়না থ্রিসহ বিভিন্ন জাতের মুকুলে ছেয়ে গেছে লিচুবাগান। এতে ভালো ফলনের আশা করছেন দিনাজপুরের লিচুচাষিরা।

গত বছর প্রচুর বৃষ্টিপাত ও রাতের তাপমাত্রা বেশি থাকায় আশানুরূপ ফলন হয়নি। এবার শীতের শেষে বৃষ্টি হওয়ায় লিচুর জন্য ভালো হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ফলন ভালো হবে, গত বছরের ক্ষতি পুষিয়ে লাভের আশা করছেন লিচুচাষিরা।

দিনাজপুরের সদর, বিরল, চিরিরবন্দর, খানসামা, কাহারোল, নবাবগঞ্জসহ জেলার প্রায় সব উপজেলায় লিচু উৎপাদিত হয়। তবে বেশির ভাগ আবাদ হয় সদর উপজেলার মাশিমপুর, আউলিয়াপুর, ঘুঘুডাঙ্গা; বিরলের মাধববাটি, মহেশপুর, রবিপুর, বটহাট এলাকায়। লিচু চাষের জন্য উপযোগী বেলে-দোআঁশ মাটি হওয়ায় এ অঞ্চলে লিচু চাষে কৃষকের আগ্রহ বাড়ছে দিন দিন। চাষিরা বলেন, এ অঞ্চলে ফাল্গুনের শেষ পর্যন্ত লিচুর মুকুল আসার সময়। তবে এবার দুই সপ্তাহ আগেই লিচুগাছে মুকুল এসেছে।

গত বছর ৩০ শতাংশ গাছে মুকুলই ছিল না। ফলে বড় অঙ্কের লোকসান গুনেছেন। এবার প্রায় সব গাছে আশানুরূপ মুকুল এসেছে। তবে গুটি আসেনি।
মো. শাহজাহান, বিরল উপজেলার রবিপুর গ্রামের লিচুচাষি

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, দিনাজপুর জেলায় ৫ হাজার ৪৮১ হেক্টর জমিতে লিচুবাগান আছে ৫ হাজার ৪১৮টি। এর মধ্যে বোম্বাই লিচু ৩ হাজার ১৭০ হেক্টর জমিতে, মাদ্রাজি ১ হাজার ১৬৬ হেক্টর, চায়না থ্রি ৭০২ দশমিক ৫ হেক্টর, বেদানা ২৯৪ দশমিক ৫ হেক্টর, কাঁঠালি ২১ হেক্টর ও মোজাফফরপুরী লিচু ১ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। বসতবাড়িসহ বাগানগুলোতে লিচুগাছ আছে প্রায় সাত লাখ।

কয়েকটি লিচুবাগান ঘুরে দেখা যায়, মুকুল আসার শেষ মুহূর্তে গাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। গাছভর্তি মুকুলের সমারোহ। মুকুল যেন ঝরে না যায়, সে জন্য সেচ ও কীটনাশক দেওয়া হচ্ছে। মুকুল থেকে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত মৌমাছিও।

বিরল উপজেলার রবিপুর গ্রামের লিচুচাষি শাহজাহান বলেন, ৩০ একর জমিতে ৮০০ গাছের লিচুবাগান লিজ নিয়েছেন তিনি। গত বছর ৩০ শতাংশ গাছে মুকুলই ছিল না। ফলে বড় অঙ্কের লোকসান গুনেছেন। এবার প্রায় সব গাছে আশানুরূপ মুকুল এসেছে। যদিও গুটি আসা শুরু হয়নি। তবে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ৩৫-৪০ লাখ পিস লিচু পাওয়া যেতে পারে, যার আনুমানিক বাজারমূল্য অর্ধকোটি টাকা। একই এলাকার লিচুচাষি শিশির শাহ বলেন, যে পরিমাণ মুকুল দেখা যাচ্ছে, তাতে ফলন ভালো হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তবে সবার ফলন ভালো হলে বাজার পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।

বৈশাখের শেষভাগে বাজারে দেখা মিলবে লাল টসটসে লিচুর। দিনাজপুরে প্রথম ভাগে পাওয়া যাবে বোম্বাই ও মাদ্রাজি লিচু। তবে লিচুপ্রিয়দের অপেক্ষা থাকে বেদানা লিচুর জন্য। দেশজুড়ে দিনাজপুরের বেদানা লিচুর খ্যাতি আছে। অনেকের কাছে এই লিচু দিনাজপুরের রসগোল্লা বলে পরিচিত। এর খোসা পাতলা, শাঁস পুরু, রসাল ও বিচি ছোট।

সদর উপজেলার মাশিমপুর এলাকায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বেদানা লিচু ফলে। লিচুচাষি আমিনুল ইসলাম বলেন, নিজের বাগানে ২০০ বেদানা জাতের লিচুগাছ আছে। এবার ইজারা নিয়েছেন আরও দুটি বাগান। এবার বৃষ্টি হওয়ায় প্রথম দিকে সেচ দিতে হয়নি। দ্বিতীয় দফায় কীটনাশক ও সেচ দেওয়ার কাজ চলছে। ইতিমধ্যে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও সিলেটের ব্যাপারীরা মুঠোফোনে যোগাযোগ শুরু করেছেন। রমজান শেষে লিচু আসবে, তাই বাজার ভালো যাওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন।

সারা দেশে কমবেশি লিচু উৎপাদিত হলেও দিনাজপুরের লিচুর চাহিদা বেশি বলে জানিয়েছেন দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) মো. খালেদুর রহমান। তিনি বলেন, এবার প্রায় সব গাছে মুকুল এসেছে। ইতিমধ্যে ৩০ শতাংশ গাছের মুকুলে গুটি বের হতে শুরু করেছে। এবার প্রতি হেক্টর জমিতে ৫ দশমিক ৩ মেট্রিক টন লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছর দিনাজপুরে ২৮ হাজার মেট্রিক টন লিচু উৎপাদিত হয়েছে, যার বাজারমূল্য ছিল ৫৭৫ কোটি টাকা। তবে এবার ফলন ভালো হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় লাভের অঙ্কটা বাড়বে।