মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের প্যানেলের ভরাডুবির জন্য হাইব্রিডরা দায়ী

রাজশাহী আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের প্যানেল ‘সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ’–এর ভরাডুবি হয়েছে। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ২১টির মধ্যে ১টি পদেও জিততে পারেনি তারা। এ বিষয়ে প্রথম আলো কথা বলেছে রাজশাহীর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) মো. মোজাফফর হোসেনের সঙ্গে। তিনি ১৯৭৭ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত রাজশাহী নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পরে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত সভাপতি ছিলেন। বর্তমানে তিনি মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির এক নম্বর সদস্য।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: রাজশাহী আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের প্যানেলের ভরাডুবির জন্য দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে?

মোজাফফর হোসেন: কিছুটা ক্ষুণ্ন হয়েছে।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: কেন এমন ভরাডুবি হলো?

মোজাফফর হোসেন: রাজশাহীতে আওয়ামী আইনজীবীদের মধ্যে অন্য দল থেকে আসা অনেক ‘হাইব্রিড’ আইনজীবী ঢুকে পড়েছেন। তাঁদের নেপথ্য ভূমিকার কারণেই মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের প্যানেলের এই ভরাডুবি হয়েছে। দলেরও একটা অংশ প্যানেলের বিপক্ষে কাজ করেছে।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: এর কারণ কী?

মোজাফফর হোসেন: ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত টানা ১২ বছর ধরে একদল আইনজীবী আদালতে সরকারি আইন কর্মকর্তার দায়িত্বে ছিলেন। দলের অনেক ত্যাগী আইনজীবী এর পরিবর্তন চেয়েছিলেন। ২০২১ সালের মার্চে পরিবর্তন হলেও পিপি ইব্রাহিম হোসেন, জিপি রবিউল হকসহ কয়েকজন মাত্র বাদ পড়েন। বাকিরা থেকেই যান। যাঁরা বাদ পড়লেন, তাঁদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়। এর প্রভাব নির্বাচনে পড়েছে।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: দীর্ঘদিন পিপি থাকার পরও ইব্রাহিম হোসেন কীভাবে প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী হলেন?

মোজাফফর হোসেন: ধারণা করা হয়েছিল যে তাঁকে সভাপতি প্রার্থী করা হলে সংগঠনের ভেতরের বিভেদটা মিটে যাবে। বাস্তবে তা হলো না।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: কেন হলো না?

মোজাফফর হোসেন: সভাপতি প্রার্থী ইব্রাহিম হোসেন নিজে একা বের হয়ে যাওয়ার জন্য জাতীয়তাবাদী ঐক্য প্যানেলের সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে আঁতাত করলেন। তাতে তিনি নিজ প্যানেলের সাধারণ সম্পাদকের চেয়ে ৪৮ ভোট বেশি পেলেন। ২০০১ সালের নির্বাচনে জাতীয় নির্বাচনে তৎকালীন রাজশাহী-৩ (মোহনপুর-বাগমারা) আসনের জন্য তিনি দলের মনোনয়ন না পেয়ে নৌকা ভেঙেছিলেন। তিনিই ১২ বছর পিপি থাকলেন। হাইব্রিডরাই এভাবে সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছেন।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী একরামুল হকের বিরুদ্ধেও কিছু আইনজীবীর ক্ষোভ আছে। শোনা যাচ্ছে, তিনি নাকি বঙ্গবন্ধুর ছবি ভাঙা আসামিদের জামিন করিয়েছেন।

মোজাফফর হোসেন: অভিযোগ আছে। তবে এর পেছনের ঘটনাও জানতে হবে। মামলাটিই সাজানো ছিল। যাঁদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল, তাঁরা আওয়ামী লীগের কর্মী ছিলেন। মামলার বাদীরাই ছিলেন হাইব্রিড।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কোনো ব্যর্থতা ছিল?

মোজাফফর হোসেন: নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ছাড়া অপর দুই সদস্যের ভূমিকা সক্রিয় ছিল না। শুধু আহ্বায়ক কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে প্যানেলের বিপক্ষে কাজ করছেন—এমন ২২ জনের তালিকা পাঠিয়েছিলেন। বাকি দুজনের কোনো ভূমিকা ছিল না।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: এই নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদ, গণতান্ত্রিক আইনজীবী পরিষদ ও ওয়ার্কার্স পার্টির আইনজীবী পরিষদের ঐক্য হয়েছিল। এই ঐক্যে কোনো টানাপোড়েন ছিল?

মোজাফফর হোসেন: কিছুটা ছিল।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: আইনজীবীদের জন্য ‘বার ভবন’ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি পূরণ না হওয়ার বিষয়টি কি নির্বাচনে প্রভাব ফেলেছে?

মোজাফফর হোসেন: এটার একটা প্রভাব পড়েছে।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: এখন আপনাদের করণীয় কী?

মোজাফফর হোসেন: এই নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদ, গণতান্ত্রিক আইনজীবী পরিষদ ও ওয়ার্কার্স পার্টি আইনজীবী পরিষদের ঐক্য হয়েছিল। এর সমন্বয়ে প্যানেলের নাম দেওয়া হয়েছিল ‘সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ’। এর ব্যানারে নির্বাচন করা হয়, কিন্তু বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের কোনো জেলা কমিটি গঠন করা হয়নি। এই কমিটি গঠন করতে হবে। ভালো নেতৃত্ব আনতে হবে। সেখানে হাইব্রিডদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে হবে। তাহলে এই পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে বলে আশা করা যায়।